হযরত আবুল ফজল হাসান সারাখসী (রঃ) – শেষ পর্ব
হযরত আবু সাঈদ (রঃ) সারাখস শহরে হয় দেখা করতে গেছেন হযরত আবুল ফজল হাসান সারাখসী (রঃ)-এর সঙ্গে। তিনি রাতে থাকতে বললেন। কেননা, রাতই মারেফাত প্রকাশের সময়। রাতে তিনি আবু সাঈদ (রঃ)-কে বললেন, কুরআনের যেকোন একটি আয়াত পাঠ কর, হযরত আবুল ফজল হাসান সারাখসী (রঃ) এ আয়াতের সাতটি ব্যাখ্যা শোনালেন। প্রতিটি ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ
আলাদা-একটির সঙ্গে অন্যটির কোন মিলই ছিল না। ব্যাখ্যা করতে করতে ভোর হয়ে এল। তিনি আক্ষেপ করে বলে উঠলেন, হায়! রাত শেষ হয়ে গেল। অথচ আমি আনন্দ-পুলকের কথা তো বলতেই পারলাম না।
একবার অনাবৃষ্টির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে জনগণ তাঁর কাছে দোয়ার অনুরোধ জানালেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রহমতে বৃষ্টি হবে। সত্যিই প্রচুর বৃষ্টি হল। দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ শস্য-শ্যামল হয়ে উঠল। তিনি কী দোয়া করেছিলেন তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, আমি রাতে ঠাণ্ডা পানি পান করেছিলাম। তার ফলে আল্লাহ সকলের মন স্নিগ্ধ করে দিলেন।
এ ঘটনায় অনুমান করা যায় তিনি ঐ যুগের কুতুব ছিলেন। কেননা, কেবল কুতুবের ক্ষেত্রেই এরূপ ঘটনা ঘটে।
একবার কিছু লোক সমকালের অত্যাচারী বাদশাহর উদ্দেশ্যে দোয়ার জন্য তার কাছে আবেদন জানালে তিনি বলেন, আমার ভাই আফসোস হয় এজন্য যে, তোমরা বাদশাহর ব্যাপারেও আমার নিকট নিয়ে আস।
তিনি বলেন-
১. অতীত নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করো না। ভবিষ্যৎ নিয়েও না। শুধু বর্তমানকে স্মরণে রেখে কাজ করে যাও।
২. দাসত্ব দুটি বস্তুর সঙ্গে জড়িত। যথাঃ (ক) নিজেকে আল্লাহর মুখাপেক্ষী করা, কেননা সেটিই হল দাসত্বের মূল ভিত্তি। (খ) রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করা, কেননা তা নফসের মনেরমতো কাজ নয়। বরং তা নিয়ে নফস দুর্বল হয়ে যায়।
তাঁর মৃত্যু আসন্ন হয়ে উঠলে লোকজন বলল, আমরা আপনাকে অমুক জায়গায় দাফন করব বলে ঠিক করেছি। কেননা, সেখানে বহু সাধক-দরবেশ সমাহিত রয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কে যে ঐসব মহাত্মার পাশে আমাকে তোমরা দাফন করবে? বরং তোমরা আমাকে ঐ পাহাড়ের মাথায় কবর দিও, যেখানে শায়িত আছে মদ্যপ ও অসৎ প্রকৃতির লোকেরা। কেননা, তারা অপরাধী বলে আল্লাহর ক্ষমা ও করুণার পাত্র। যাদের পানির পিপাসা থাকে, প্রথমে তাদেরকেই পানি পান করানো হয়। আর যিনি দাতা, তিনি-দুঃখীকেই দান করবেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবুল ফজল হাসান সারাখসী (রঃ) – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন