হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ (রঃ) – পর্ব ১
হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ (রঃ) পারস্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধক। শরীয়ত ও মারেফাত বিদ্যার এই অগ্রগণ্য পণ্ডিত তরীকতের ইমামরূপে বিবেচিত হতেন। তাঁর সাধনাও ছিল বড় কঠিন প্রতি রাকআত নফল তিনি দশ হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সমকালের বিখ্যাত সাধক হযরত রইয়াম (রঃ), হযরত ইবনে আতা (রঃ), হযরত মনছুর হাল্লাজ (রঃ), প্রমুখের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।
অনেক সময় তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রক হাজার রাকাআত নফল নামাজ পড়তেন। তাঁর পরনে ছিল ছেঁড়া চটের পোশাক। একদিন দুদিন নয়, একটানা বিশ বছর। প্রতি বছর তিনি চারবার করে চিল্লা বা বিশেষ নিয়মে আল্লাহর যিকির করতেন কোন নির্জন স্থানে। আর এভাবে যেদিন তাঁর চল্লিশ চিল্লাহ পূর্ণ হয়, তিনি সেদিনই ইন্তেকাল করেন। শোনা যায়, অন্তিম মুহূর্তেও তাঁর পরনে চটের পোশাক ছিল।
মারেফাত তত্ত্ব সম্পর্কে তিনি প্রতি চল্লিশ দিনে একখানি করে বই লিখতেন। এছাড়া শরীয়ত সম্পর্কেও তিনি অনেক বই লিখেন।
তাঁর সময়ে পারস্যে মুহাম্মদ যাকারী (রঃ) নামে এক দরবেশ বাস করতেন। তিনি খিরকা পরতেন না। খিরকা পরিধানের শর্ত কি? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ (রঃ) বলেন, মুহাম্মাদ যাকারী (রঃ) সাদা পোশাক পরিধান করে যে শর্ত পালন করে থাকেন, তাই খিরকা পরিধানের শর্ত। আমাদের দ্বারা চটের পোশাক পরিধান করেও সে শর্ত আদায় হয় কিনা সন্দেহ।
খাফীফ আরবী শব্দ। এর অর্থ হল হালকা। তিনি অত্যন্ত হালকা খাবার খেতেন। তাই এই নাম। সারাদিন রোজা রাখার পর মাত্র সাতটি মোনাক্কা ফল মুখে দিতেন। সে রাতে অন্য রাতের মতো তিনি এবাদতে স্বাদ পেলেন না। সন্দেহ হওয়ায় এ বিষয়ে চাকরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বলল, গতকাল তাঁকে অত্যন্ত দুর্বল দেখেই কিছু না বলে সে আটটি মোনাক্কা রেখেছিল। হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ (রঃ) বলেন, তুমি মোটেই আমার হিতৈসী নও, বরং শত্রুর কাজ করেছ। চাকরের চাকরী গেল। বহাল হল নতুন চাকর।
অর্থ নেই, অথচ তিনি হজ্জ যাত্রার সংকল্প করলেন। আর একটি বালতি ও রশি নিয়ে একদিন বেরিয়েও পড়লেন। অর্থাৎ, পথে যখন পানির পিপাসা বোধ করবেন, তখন রশি-বালতি দিয়ে কুয়া থেকে পানি তুলে পান করবেন। তো, বেশ কিছু পথ অতিক্রম করার পর তাঁর পিপাসাবোধ হল। দেখলেন, একটি কুয়া থেকে দুটি হরিণ পানি পান করছে। কাছে গিয়ে দেখলেন, পানি নেমে গেছে অনেক নিচে। তাঁর মনে অনুতাপ এল। হরিণের চেয়েও নিজেকে অধম মনে হল। তখন অদৃশ্য আওয়াজ এল, হরিণ দুটির কাছে দড়ি বালতি নেই। তাই পানি উঠে এসেছিল তাদের নাগালের মধ্যে আর তোমার কাছে তা আছে সে জন্য পানি নেমে গেছে নিচে। তখন তাঁর হুশ
হল। আর পানি না তুলে, দড়ি-বালতি ছুঁড়ে দিয়ে তৃষ্ণা নিয়েই তিনি পথ চলতে লাগলেন। পরে আবার অদৃশ্য বাণীঃ আমি তোমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। সে পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ। যাও, এবার কুয়া থেকে পানি পান কর। তিনি ফিরে এলেন কুয়ার কাছে। দেখলেন, পানি এবার উঠেছে। কিনারা বরাবর। আর অঞ্জলি ভরে তিনি পানি পান করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া