হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ৪

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

আড়াল থেকে সবই দেখছিলেন হযরত আবদুল্লাহ (রঃ)। কিন্তু শেষ দৃশ্যটি দেখে সম্বিত হারালেন। পরে অবস্থা যখন স্বাভাবিক হয়ে এল, তখন দৌড়ে গিয়ে বুকে চেপে ধরলেন ক্রীতদাসকে। তার গালে কপালে অজস্র চুম্বন এঁকে দিয়ে তিনি বলে উঠলেন, আমার মতো ইবনে মোবারকের সহস্র প্রাণ তোমার মতো ভৃতের সেবাই উৎসর্গিত হোক। আহা! তুমি যদি আমার মনিব হতে আর আমি হতাম তোমার ভৃত্য, তাহলে তাই হত উত্তম।

গুপ্ত রহস্য ফাঁস হয়ে গেল দেখে ভৃত্য বড় সংকুচিত হয়ে পড়ল। আল্লাহর দরবারে সে মোনাজাত করল, আমার যা গোপন, আপনি তা প্রকাশ করে দিলেন প্রভু। এখন আর এ পার্থিব জগতে থাকার আমার কোন ইচ্ছা নেই। আপনি তাড়াতাড়ি আপনার এ অধম বান্দাকে এখান থেকে তুলে নিন। আশ্চর্য! প্রভুর বুকে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় ভৃত্যের শেষ নিঃশ্বাসটি শেষবারের মত বেরিয়ে গেল। আর আবদুল্লাহ (রঃ) এ ঘটনায় হতবম্ব হয়ে পড়লেন। পরে অবশ্য ভৃত্যের পরনে সে চটের কম্বল ছিল সেটাকেই কাফন করে, জানাজা আদায় করে তাকে কবর দিলেন। আর ঐ রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে সঙ্গে করে তাঁর কাছে এসে বললেন, আমার একান্ত বন্ধু ও আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিকে চটের কাফন পরিয়ে দাফন করলেন কেন?

একবার আবদুল্লাহ (রঃ) সাড়ম্বরে চলেছেন কোথাও। সঙ্গে বহু সঙ্গী-সাথী। তারা তাঁকে সসম্মানে ঘিরে নিয়ে চলেছেন। যেন এক আমির বা বাদশাহ। এ দৃশ্য দেখে মহানবীর এক বংশধর ঈর্ষান্বিত হয়ে বললেন, হে কাফেরের সন্তান! রাসূল (সাঃ)-এর বংশধর হওয়া সত্ত্বেও আমার কোন প্রভাব প্রতিপত্তি নেই। আমার কাছে কারোর যাতায়াত নেই। আপনি কী পিতার পরিত্যক্ত বিদ্যা গ্রহণ করে আমি এ সাফল্য অর্জন করেছি। আর আমার পিতার পরিত্যক্ত বস্তু অবলম্বন করে আপনি হয়েছেন অবজ্ঞায় ও ঘৃণার পাত্র।

ঐ রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখলেন, মহানবী (সাঃ) অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, আপনি আমার বংশধরের প্রতি অমন মন্তব্য করলেন কেন?

আবার উক্ত বংশধরও স্বপ্ন দেখলেন, তাঁর দাদজী মহানবী বলছেন, তুমি আমার বংশধর হয়েও যথোচিত কাজ করনি। তার প্রতি তোমার ঈর্ষা কেন?

দুজনেই স্বপ্ন দেখে পরস্পরের কাছে ছুটলেন ক্ষমা চেয়ে নিতে। রাস্তায় তাঁদের দেখা হয়ে গেল। বলাবাহুল্য পরস্পর পরস্পরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে ভারমুক্ত হলেন।

আগেই বলা হয়েছে, তিনি ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। একবার দ্বৈরথ যুদ্ধ করার সময় নামাজের ওয়াক্ত এসে গেল। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বললেন, তিনি তাঁর প্রস্তাব মেন নিয়ে তরবারি কোষবদ্ধ করলেন। পরে আবার পূর্ববৎ সাময়িকভাবে যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে উপাসনা শুরু করলেন।

যখন  তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতার উদ্দেশ্যে সাষ্টাঙ্গে প্রণামে রত হলেন, তখন সেই সুযোগ গ্রহণ করে তাঁর অবনমিত দ্বিখণ্ডিত করার জন্য আবদুল্লাহ (রঃ) তরবারি উত্তোলন করলেন। সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল দৈববানী- সাবধান! এ তুমি কি করতে চলেছ? হোক সে মুশরিক। কিন্তু তুমি তার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দণ্ড কি ভয়ঙ্কর তুমি জান?

আকাশবাণী শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল আব্দুল্লাহর। তরবারি নামিয়ে তিনি আল্লাহর ভয়ে আকুলভাবে কেঁদে উঠলেন। এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধার উপাসনা শেষ। তিনি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে আবদুল্লাহ (রঃ) ঘটনাটি তাকে খুলে বললেন। ঘটনার বিবরণ শুনে তিনিও ভীষণ জোরে জোরে চিৎকার করে থর থর করে কেঁদে উঠলেন। বললেন, যে আল্লাহ শত্রুর পক্ষ অবলম্বন করে মিত্রকে বিশ্বাসভঙ্গের দণ্ড দানের ধমক দেন সে আল্লাহর আনুগত্য না করে যারা অন্য উপাস্যের উপাসনা করে, তাদের মতো হতভাগ্য আর কেউ নেই। হে আবদুল্লাহ! আপনি আমাকে এখনই ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দিন।

মুহূর্তের মধ্যে রক্তপিপাসু শত্রু পরম মিত্রে পরিণত হল।

সূত্র: তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।