হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই আশ্চর্য স্বপ্ন দেখে উক্ত মুচকি দেখার জন্য হযরত আবদুল্লাহ দামেস্কে গেলেন। তাঁর বাড়ীরও খোঁজ পেলেন। দরজায় ডাকাডাকি করতেই এক লোক বেরিয়ে এলেন। হযরত আবদুল্লাহ (রঃ) তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন। নাম জেনে নিয়ে বুঝলেন, ইনিই সেই লোক। তবুও জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী করেন? তিনি বললেন, আমি জুতা সেলাই করি। অতএব আর কোন সন্দেহ রইল না। তাঁর কাছে স্বপ্নের বিবরণ প্রকাশ করলেন। মুচি এবার তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন। নাম শোনা মাত্র অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি তাঁর অবস্থা জানতে চাইলেন। আলী ইবনে মোয়াফকে বললেন, ত্রিশ বছর ধরে আমার মনে হজ্জ করার প্রবল ইচ্ছা। কিন্তু আর্থিক অনটনের জন্যই তা আর হয়ে ওঠেনি। বহু কষ্ট করে এবার তিন হাজার টাকা জোগাড় হল। হজ্জের জন্য প্রস্তুতি চলছে। হঠাৎ এক রাতে আমার গর্ববতী স্ত্রী পাশের বাড়ী থেকে রান্না করা গোশতের গন্ধ পেয়ে তা খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল।
আর ও বাড়ী থেকে কিছু গোশত আনার জন্য আমাকে সে অনুরোধ করল। স্ত্রীর অনুরোধ লজ্জা ত্যাগ করে আমি পাশের বাড়িতে গিয়ে একটু গোশত চাইলাম। কিন্তু গৃহকত্রী বিনীতভাবে বললেন, এ গোশত আপনাদের দেওয়া যাচ্ছে না। কেননা আপনাদের পক্ষে তা নাজায়েজ। অবশ্য আমাদের কাছে বৈধ। কারণ শুনলেই বুঝতে পারবেন। গত সাত দিন ধরে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোন খাবার জোগাড় করতে পারিনি ক্ষুধার জ্বালায় তারা মরে আর কি। শেষ পর্যন্ত একটা মৃত গাধার খোঁজ পেয়ে কিছুটা এনে তা রান্না করেছি। ছেলেমেয়েদের বাঁচাতে তাই খেতে দেব।
আলী ইবনে মোয়াফকে বলতে থাকেন, এ কথা শুনে আমি ভীষণ ব্যথিত হলাম। পরিবারটির প্রতি সহানুভূতিতে আমার হৃদয় ভরে গেল। আমি তখনই বাড়ীতে এসে আমার সংগৃহীত অর্থ গৃহকর্ত্রীর হাতে দিয়ে তাঁর অনাথ সন্তানদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে বললাম। আর আমার মনে হল, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই হল আমার আসল হজ্জ।
স্বপ্নে ফেরেশতাগণ যা বলাবলি করছিলেন, তার মর্ম হযরত আবদুল্লাহর কাছে এখন স্পষ্ট হয়ে গেল।
হযরত আবদুল্লাহ (রঃ)-এর এক ক্রীতদাস ছিল। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল, কাজকর্ম করার পর সে যদি তাঁকে কিছু কিছু অর্থ দিয়ে পারে, তাহলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। বেচারা চুক্তি পালনের চেষ্টা করত। কিন্তু এতদিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এল, সে নাকি মৃতের কাফন চুরি করে আর তা বিক্রি করে যে পয়সা পায় তা মনিবকে দেয়। এ অভিযোগে হযরত খুবই ক্ষুব্ধ হলেন। আর এক রাতে ক্রীতদাস যখন বাড়ী থেকে বের হচ্ছে, তখন তিনিও খুব গোপনে তাকে অনুসরণ করলেন। সত্যিই, কবরস্থানে গিয়ে সে একটা কবর খুঁড়ে তার মধ্যে ঢুকে পড়ল। কিন্তু কোথায় কাফন চুরি! একখানি চটের কম্বল পরে ও গলায় একটি লোহার শিকল ঝুলিয়ে সে নামাজ পড়তে শুরু করল। এ দৃশ্য দেখে আবদুল্লাহ অশ্রুসিক্ত হলেন। আর বাড়ী না ফিরে তিনিও কবরের অদূরে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হলেন। প্রভু রইলেন বাইরে আর ভৃত্য কবরের ভেতরে। দুটি মগ্ন হৃদয়ের উপাসনায় কেটে গেল একটি রাত।
ভোরের দিকে কবর থেকে বেরিয়ে সেটিকে ঢেকে রেখে ক্রীতদাস চলে গেল মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করতে। নামাজ শেষে নিবেদিত হল তাঁর আকুল প্রার্থনা প্রভু গো! মনিবের সঙ্গে আমি যে চুক্তিবদ্ধ, তা আপনার অবগত। অতএব, হে করুণাময়! আপনি আমাকে সাহায্য করুন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামনে আবির্ভূত হল এক অত্যুজ্জ্বল অপার্থিব আলো। সে আলো মুহূর্তের মধ্যে মুদ্রায় রূপান্তরিত হল। ক্রীতদাস হত পেতে তা গ্রহণ করল।
সূত্র: তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন