হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া এর পৃথিবীতে অবতরণ-১ম পর্ব
আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি কয়েক লক্ষ বছর পূর্বে লওহে ফাহফুজে নিয়ে রেখেছিলেন, পৃথিবীতে তিনি তাঁর খলিফা হিসেবে হযরত আদম (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন। অতএব পৃথিবীতে হযরত আদম (আঃ)-এর আগমন অনিবার্য ঘটনা। তবে যে মান-সম্মান নিয়ে হযরত আদম (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন করা উচিৎ ছিল একটি ভুলের বিরাট ব্যতিক্রম ঘটেছে।
হযরত আদম (আঃ)-এর পক্ষে নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করা ছিল একটি অন্যায় কাজ। এ অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে অনাড়ম্বর বসন্তে বিরাট ভোগ দুর্ভোগের মাঝে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। প্রথমেই তাঁর অপরাধের জন্য বেহেস্তি পোশাক-পরিচ্ছেদ খুলে নেয়া হয় এবং তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় ফেরেস্তাদের মাঝে দাঁড় করানো হয়, সে লজ্জায় তাঁরা সেখানে চরম ভাবে অপদস্ত হন। অতপর গাছের পাতা দ্বারা লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টা করছিল। দ্বিতীয় দফার বে-ইজ্জতী।
তৃতীয় দফায় শয়তান, সাপ ও ময়ূরকে তাঁদের সমমানের করে একত্রে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। চতুর্থ দফায় তাঁর জীবন সঙ্গিনী বিবি হাওয়াকে এবং তাঁকে বিরাট দূরত্বে নিক্ষেপ করা হয়। যার ফলে পৃথিবীতে অনেক বিলম্বে তাঁদের সাক্ষাৎ ঘটে । পঞ্চমত। পৃথিবীতে রোদ বৃষ্টির মধ্যে পরিশ্রম করে তাঁদের রুজি যোগাতে হয়। সপ্তমত হল নিজ সন্তান্দের মধ্যে অবর্গ বিবাদ সৃষ্টি হওয়া। সর্বশেষে প্রতি মুহূর্তে শয়তানের ধোকা থেকে মুক্তিলাভের জন্য সদা সতর্ক থাকা।
এহেন কঠিন পরীক্ষার পরে দীর্ঘ তিনশত বছর বিচ্ছন্নভাবে তাঁদেরকে কেঁদে কাটাতে হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) কে নামিয়ে দেওয়া হয় সিংহলে। বিবি হাওয়াকে নামিয়ে দেওয়া হয় খোরাসানে। একে অন্যের সন্ধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেটে হেটে পথ অতিক্রম করতেন। এভাবে একাধারে তিনশত বছর উভয় পথে পথে কেঁদে কাটালেন। অবশেষে একদা আরাফাত ময়দানে জবলে রহমতের উপর বসে হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ্র তাসবীহ পাঠ করছিলেন। এমন সময় তিনি দেখলেন বিবি হওয়া জেদ্দার দিক থেকে আসছে। তৎক্ষণাৎ তিনি দৌড়ে গিয়ে তাঁকে কোলে তুলে নিলেন। তখন উভয়ে একত্রে এমন জোরে কাঁদলেন যে, আসমানের ফেরেস্তারাও দেখে তাঁদের কান্না স্মরণ করতে পারলেন না এবং সাথে তাঁরাও জার জার হয়ে কাঁদলেন।
এরপর তাঁরা আল্লাহ্র দরবারে নফল নামাজ আদায় করে আরশের দিকে তাকাতেই দেখলেন আল্লাহ তায়ালার আরশ পর্যন্ত যত পর্দা ছিল সব উঠে গেছে। আল্লাহ তায়ালার আরশ তাঁদের চোখের সম্মুখে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আরশের উপর লেখা দেখলেন লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। তখন হযরত আদম (আঃ) ভাবলেন আল্লাহ তায়ালার নামের সাথে যে নামটি লেখা রয়েছে সে নামের ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার অধিক প্রিয় হবেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া এর পৃথিবীতে অবতরণ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন