হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৬ষ্ঠ পর্ব
হযরত আদম(আঃ) এর পার্থিব জীবন-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত আদম (আঃ) শীশ (আঃ) এর কথা শুনে বললেন, প্রিয় বৎস! আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট গন্ধম খেয়ে যে অপরাধ করেছি তাতে দ্বিতীয় বার পুনঃ খাবারের জন্য কিছুর আবেদন করতে আমার ভীষণ লজ্জা হয়। তাঁর চেয়ে বরং তুমি নিষ্পাপ ছেলে, আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা কর। তখন শীশ (আঃ) আল্লাহ তায়লার দরবারে কিছু ফলমূলের জন্য প্রার্থনা করলেন।
আল্লাহ তায়ালা শীশ (আঃ) এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকগুলো ঝুড়ি ফল বোঝাই করে একজন হুরকে দিয়ে হযরত শিশের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। হুর শীশ (আঃ) এর নিকট এসে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সহ সব ফলমূল আপনার জন্য প্রেরণ করেছেন। তখন শীশ (আঃ) সব কিছু নিয়ে পিতার সম্মুখে হাজির হলেন। হযরত আদম (আঃ) বেহেস্তী ফল খেলেন পর্যাপ্ত পরিমাণ সকল সন্তানদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন। সর্বশেষে হুরের সাথে হযরত শীশ (আঃ)-এর বিবাহ দিয়ে দিলেন। অতঃপর হুরকে বললেন, মা! তুমি এখন বেহেস্তে চলে যাও। যেহেতু পৃথিবীতে তোমার উপযোগী পরিবেশ নেই। তোমার সাথে একদিন বেহেস্তে শীশের মিলন হবে পৃথিবীতে নয়। তখন হুর ছালাম দিয়ে বিদায় গ্রহণ করলেন।
হযরত আদম (আঃ) প্রায় বারশত বছর জীবিত ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর সাড়ে তিনশত সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তানদের অধিকাংশকে তিনি নিজে পার্থিব ও পারলৌকিক তালিম দান করেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে কাবিল ছাড়া সকলেই ইমানদার ছিলেন। হযরত আদম (আঃ) জীবনের শেষ দিকে মোটামুটি আরাম-আয়েসে কাটিয়েছেন। তিনি নিজে নবী হওয়া সত্ত্বেও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের অন্তর্ভুক্তির ভাগ্য লাভ করেন। তিন দিন রোগ ভোগের পর ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁকে সিংহলের এক সুরম্য স্থানে দাফন করা হয়। মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর মাজার জিয়ারতের লক্ষে সিংহল যাত্রা করে থাকেন। আজ পর্যন্ত তাঁর মাজার জিয়ারতের কার্য অব্যাহত রয়েছে।
হযরত আদম (আঃ) সম্বন্ধে কয়েকটি বিরাট বিরাট মোজেজার কথা বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে। নিচে তাঁর দু’ একটি উদ্ধৃতি করা হল।
হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ্র নির্দেশক্রমে পৃথিবীতে আগমনের প্রাক্কালে মেছওয়াকের জন্য এক খন্ড গাছ সঙ্গে নিয়ে আসেন। উক্ত গাছটি ছিল অত্যন্ত মোজেজা পূর্ণ। উক্ত গাছ হাতে নিয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে যা কিছু প্রার্থনা করা হত আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর করতেন। উক্ত গাছ পরবর্তী সময় নবীগণের হাতে হাতে হযরত মুছা (আঃ)-এর নিকট আসা হিসেবে এসে পৌঁছে। যা দ্বারা তিনি সর্প তৈরি করে পৃথিবীর সব বিধর্মীদের সাথে মোকাবেলা করেছিলেন। যে কাহিনী সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী অতি প্রসিদ্ধ।
এক সময় হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানেরা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। তখন তাঁর পিতার নিকট গিয়ে তাদের জন্য আল্লাহ তায়লার কাছে দোয়া করতে বলেন। হযরত আদম (আঃ) ব্যক্তিগত সুবিধা সুযোগ সম্বন্ধে আল্লাহ্র দরবারে দোয়া করতে সাহস পেতেন না। তাই তিনি সন্তানদের পিড়াপীড়ি সত্ত্বেও আল্লাহ্র দরবারে কোন দোয়া করেন নি। তখন হযরত আদম (আঃ-এর সন্তানেরা একত্রিত হয়ে তাঁর পিতার উছিলা দিয়ে আল্লাহ্র দরবারে দোয়া করলেন।
হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানদের এ দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর মারফত অসংখ্য স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা পাঠিয়ে দেন। হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানেরা এ মুদ্রা নিয়ে পিতার নিকট গমন করেন। এ মুদ্রা দ্বারা তখন কোন প্রয়োজনীয় জিনিস খরিদ করা সম্ভব ছিল না। কারণ পৃথিবীতে তখন পর্যন্ত আদম সন্তান ব্যতিত অন্য কোন মানুষ ছিল না, কোন উৎপাদন, কোন ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। এহেন অবস্থায় টাকা ও স্বর্ণ মুদ্রা দ্বারা কি উপকার সাধিত হবে ?
এ কথা ভেবে হযরত আদম (আঃ) তাঁর সন্তানদেরকে বললেন, আমি তোমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলে দিচ্ছি। তোমরা স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে সেখানে যাবে এবং যার যা প্রয়োজন তাঁর নাম বলে প্রয়োজনীয় মুদ্রা সেখানে রেখে আসবে। পরের দিন তোমাদের মুদ্রার বিনিময়ে প্রয়োজনীয় বস্তু তোমরা সেখানে পাবে। আদম সন্তানেরা পিতার নিকট থেকে সমস্যার এক অভিনব সমাধান পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হল। তাঁরা আর বিলম্ব না করে পিতার উপদেশ অনুসারে স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে যথাস্থানে চলে গেলেন এবং শৃঙ্খলার সাথে লাইন ধরে মুদ্রা জমা করে আসলেন, পরের দিন যথা, সময়ে তাঁরা গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেখলেন পিতার কথা অনুসারে তাঁরা সকলে নিজ নিজ মালপত্র পেয়ে গেলেন। তখন আওলাদে আদম (আঃ) আল্লাহ তায়ালার দরবারে ছেজদায় পড়ে শুকরিয়া আদায় করেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী