গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সবাই ভাবলে, এমন খাঁচায় কাঠবেরালী সুখে থাকবে – খেলে বেড়াবে সারাদিন, দোলনায় দুলবে আর খই-দুধ খেয়ে মোটা হবে! কিন্তু কাঠবেরালি বৌ চুপটি করে মুখ লুকিয়ে খাঁচার কোণে বসে রইল আর থেকে-থেকে কিচ-কিচ করে কাঁদতে থাকল। সারাদিন সে কিছু মুখে দিলে না, দোলনাতে দুললে না, চৌকিতেও বসল না, খাটেও শুল না; কেবলি ছটফট করতে লাগল আর কাঁদতে থাকল।
সুরেশ্বরের পুজো দেবার জন্যে চাষার বৌ সেদিন মালপোয়া ভাজছিল আর সব পাড়ার মেয়েরা পিঠে পার্বণের পিঠে গড়ছিল। রান্নাঘরে ভারি ধুম লেগে গেছে! উনুন জ্বলছে; ছেলে-মেয়েরা পিঠে ভাজার ছ্যাঁক-ছ্যাঁক শব্দ পেয়ে সেদিকে দৌড়চ্ছে। চাষার বৌ ঠাকুরের ভোগ মালপোয়াগুলো কেবলি পুড়ে যাচ্ছে কেন, সেই ভাবনাতেই রয়েছে। ওদিকে উঠোনের বাইরে বেড়ার গায়ে কাঠবেরালির খাঁচাটির দিকে কি হচ্ছে, কেউ দেখছে না। চাষার দিদিমা বুড়ি, সে আর নড়তে পারে না, দাওয়ায় মাদুর পেতে বসে সেই কেবল দেখছে – রান্নাঘরের আলো গিয়ে ঠিক কাঠবেরালির খাঁচার কাছটিতে পড়েছে, আর সারা সন্ধ্যে কাঠবেরালিটা খাঁচার মধ্যে খুটখাট ছটফট করে বেড়াচ্ছে। এই খাঁচার পাশেই গোয়াল, তার কাছেই সদর দরজা – খোলা। বুড়ি পষ্ট দেখলে বুড়ো আঙুলের মতো একটি মানুষ উঠোনে ঢুকল। যক দেখলে ধনদৌলত বাড়ে, বুড়ি সেটা জানে, কাজেই বুড়ো আংলাকে দেখে সে একটুও ভয় পেলে না। বুড়ো আংলা বাড়িতে ঢুকেই কাঠবেরালির খাঁচাটার দিকে ছুটে গেল; কিন্তু খাঁচাটা উঁচুতে ঝুলছে; কাছে একটা পাকাটি ছিল, বুড়ো আংলা সেইটা টেনে খাঁচায় লাগিয়ে সিঁড়ির মতো সোজা কাটি বেয়ে খাঁচায় চড়ে খাঁচার দরজা ধরে খোলবার চেষ্টা করতে লাগল। বুড়ি জানে খাঁচার তালা বন্ধ, সে কাউকে না ডেকে চুপ করে দেখতে লাগল – কি হয়! কাঠবেরালি বুড়ো আংলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস-ফিস করে কি যেন বললে; তারপর বুড়ো-আংলা কাটি-বেয়ে নিচে নেমে চোঁচা দৌড় দিলে বনের দিকে। বুড়ি ভাবছে যক আর আসে কিনা, এমন সময় দেখলে বুড়ো আংলা ছুটতে-ছুটতে আবার খাঁচার কাছে দৌড়ে গেল – হাতে তার দুটো কি রয়েছে। বুড়ি তা দেখতে পেলে না কিন্তু এটুকু সে স্পষ্ট দেখলে যে বুড়ো আংলা একটা পোঁটলা মাটিতে রেখে আর একটা নিয়ে খাঁচার কাছে উঠল; তারপর এক হাতে খাঁচার কাটি ফাঁক করে জিনিসটা খাঁচার মধ্যে গলিয়ে দিয়ে, মাটি থেকে অন্য জিনিসটা নিয়ে আবার তেমনি করে খাঁচায় দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
বুড়ি আর চুপ করে বসে থাকতে পারলে না, সে ভাবলে, যক্ বোধহয় তার জন্য সাত-রাজার ধন মানিক-জোড় রেখে পালাল। খাঁচাটা খুঁজে দেখতে বুড়ি উঠল। বুড়ির কালো-বেড়ালও এতক্ষণ খাঁচার দিকে নজর দিচ্ছিল, সেও উঠে অন্ধকারে গা ঢাকা হয়ে দাঁড়াল কি হয় দেখতে। বুড়ি পৌষমাসের হিমে উঠোন দিয়ে চলেছে, এমন সময় আবার পায়ের শব্দ, আবার বুড়ো আংলা হাতে দুটো কি নিয়ে! এবার বুড়ো আংলার হাতের জিনিস কিচ-কিচ করে উঠল। বুড়ি বুঝলে যক্ কাঠবেরালির ছানাগুলিকে দিতে এসেছে – তাদের মায়ের কাছে। দিদিমা উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখলেন, যক্ আগের মতো খাঁচার কাছে গেল, কিন্তু বেড়ালের চোখ অন্ধকারে জ্বলছে দেখে, সে যেখানকার সেইখানেই দাঁড়িয়ে চারিদিক দেখতে লাগল – ছানাদুটি বুকে নিয়ে। উঠোনে বুড়িকে দেখে ছুটে এসে তার হাতে একটি ছানা দিয়ে বুড়ো-আংলা আগের মতো কাটি-বেয়ে একটির পর একটি ছানাকে খাঁচায় পুরে দিয়ে বুড়িকে পেন্নাম করে চলে গেল।
বুড়ি ঘরে এসে সবার কাছে এই গল্প করলে, কিন্তু কেউ সেটা বিশ্বাস করতে চাইলে না – দিদিমা স্বপন দেখেছে বলে উড়িয়ে দিলে। কিন্তু বুড়ি বলতে লাগল – “ওরে তোরা দেখে আয় না!”
গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।