সৎ ভাইদের আরজ – ৩য় পর্ব

হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ইউসুফ ও বেনিয়েমীন। ইউসুফের প্রতি আমার পিতার ছিল ভীষণ আকর্ষণ ও মায়া। তাঁকে তিনি সর্বদা কাছে রাখতেন। মুহূর্তের জন্য তাঁকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। একদিন আমরা পিতার নিকট বলে ইউসুফকে নিয়ে খেলা দেখতে যাই। সেখানে ইউসুফকে বসিয়ে রেখে আমরা একটু দূরে যাই। এমন সময় একটি বাঘ এসে খেয়ে ফেলে। এমতাবস্তায় তাঁর রক্ত মাখা কাপড় নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে পিতার নিকট গিয়ে পৌছি। পিতা আমাদের কথা বিশ্বাস করেন না। শুধু কাঁদতে  থাকেন। অদ্য পর্যন্ত তিনি কেঁদে কাটাচ্ছেন। আর ছোট ভাই বেনিয়ামীনকে সর্বদা কাছে রাখছেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদের কথা শুনে বললেন, তোমাদের কথাগুলো যে সত্য  তাঁর প্রমাণ কি? তোমাদের কি কোন সাক্ষী আছে? তাঁরা বলল, আমরা এখানে নতুন এসেছি। আমাদের কোন পরিচিত লোক এখানে নেই। তখন হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, এবারে তোমাদের প্রত্যেকেকে এক এক উট বোঝাই করে খাদ্য-শস্য দিতেছি। দ্বিতীয়বার তোমাদের ছোট ভাইকে নিয়ে আসবে তাহলে আরো বেশি করে খাদ্য শস্য দিয়ে দিত। আর যদি তাঁকে নিয়ে আসতে না পার তাহলে কোন মাল পাবে না। তখন ভাইয়েরা বলল, ছোট ভাই আমাদের পিতার চোখের মনি, তাঁকে আমাদের সাথে দিতে পিতা রাজি হবেন কি? তবে আমরা সাধ্য পরিমাণ চেষ্টা করব। অন্য ভাই বলল, পিতাকে সমস্ত মালপত্র দেখালে তিনি অবশ্যই রাজি হবেন।

 তখন আমরা তাঁকে নিয়ে আসতে সক্ষম হব। হযরত ইউসুফ (আঃ) বললেন, তোমাদের এ কথার কি বিশ্বাস আছে? তোমরা তাহলে এক ভাই আমার দরবারে থেকে যাও। বাকী সকলে দেশে গিয়ে বেনিয়ামিনকে নিয়ে আসো। এ কথার পরে কে থাকবে তা নিয়ে ভাইদের মধ্যে লটারী হল। তাতে শামুনের নাম উঠল। তখন শামুনকে দরবারে রাখা হল। বাকী ভাইয়েরা দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। হজরত  ইউসুফ (আঃ)-এর আদেশ অনুসারে সকল উট বোঝাই করে খাদ্য শস্য দেয়া হল। একটি উটে তাঁদের নিয়ে আসা মালগুলো ফেরত দেয়া হল।

 তাঁরা রওয়ানা করার পর শামুন হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট আরজ করে বলল, হুজুর! আপনি এত মালপত্র আমদেরকে দিয়েছেন। যা আর কাউকে দেন নি। এত মালপত্র নিয়ে ভাইয়েরা দেশে পৌঁছালে বিরাট এক আনন্দ সভা অনুষ্ঠিত হবে। পিতার মুখে দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরে হাসি ফুটে উঠবে। আমি এই আনন্দ উচ্ছল মুহূর্তটিকে উপভোগ করতে পারব না। এটা আমার জীবনের জন্য একটি বিরাট পরিতাপের বিষয় হয়ে থাকবে। অতএব যদি দয়া করে আমাকে এ আনন্দ ভোগ করার সুযোগ দেন তবে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব এবং আপনার আরো সমৃদ্ধির জন্য পিতাকে নিয়ে দোয়া করব। হযরত ইউসুফ (আঃ) শামুনের কথা শুনে বললেন, “ তুমি সত্য কথা বলছ ” শামুন তখন সপথ করে বলল, হুজুর! আমি সত্য বলছি। তখন তিনি তাঁকে ভাইদের সাথে দেশে যেতে আদেশ দিলেন।

হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর সন্তানেরা মিশর থেকে খাদ্য সম্ভার নিয়ে এসেছে শুনে দেশের অসংখ্য মানুষ সেখানে ছুটে এসেছে। সবাই দেখল, তাঁরা প্রচুর খাদ্য নিয়ে এসেছে। হযরত ইয়াকুব (আঃ) খাদ্য-শস্যের প্রাচুর্য দেখে খুব খুশী হলেন এবং হাসলেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শস্যের অর্ধেক নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য রেখে বাকী অর্ধেক জনসাধারণের মধ্যে বণ্টন করার আদেশ দিলেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর আদেশ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে ছেলেরা যখন বস্তা খুলতে গেল তখন দেখল, বিনিময়ের জন্য তাঁরা দেশ থেকে যে সব মাল মালামাল নিয়ছিল তা সম্পুর্ণ তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়েছে। হয়ত ইয়াকুব (আঃ) এতদর্শনে বললেন, হয়ত তাঁরা ভুলক্রমে এগুলো তোমাদের উটে বোঝাই করে দিয়েছে। অতএব আগামী কিস্তি তোমরা এগুলো নিয়ে যাবে।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।