স্বামী-স্ত্রীতে কথোপকথন
ঘটক বিদায় হলে মোজাহামও বাজার হতে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন। স্ত্রী তাঁর মলিন বদন লক্ষ্য করে বললেন, আপনার শরীর অসুস্থ বোধ করছেন কি, না কোনরূপ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন? আপনার চেহারা যে অত্যন্ত মলিন দেখাচ্ছে।
মোজাহাম বললেন, প্রিয়তমা! শরীর অসুস্থ হয় নাই তবে আজ একটি এমন ব্যাপার ঘটেছে যা সত্যই অতি দুশ্চিন্তার কারণ। শুনে মোজাহাম পত্নী উদ্বিগ্নকন্ঠে বললেন, কি এমন ব্যাপার প্রিয়তম? আমার নিকট শীঘ্র প্রকাশ করুন না শুনা পর্যন্ত আমার পরাণ সুস্থির হবে না।
মোজাহাম বললেন, অমুক গ্রামের কাবুস নামক যে লম্পট ছেলের কথা শুনেছ, তার পিতা সে পুত্রের জন্য আমাদের আছিয়ার উদ্দেশ্যে পয়গাম পাঠিয়েছে।
এরূপ ভয়ানক খবর শুনার জন্য মোজাহাম পত্নী প্রস্থুত ছিলেন না; সুতরাং তাঁর স্বামীর নিকটে এ সংবাদ শুনামাত্র মুহূর্তে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি উৎকণ্ঠিত স্বরে স্বামীর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তার কি জবাব দিয়েছেন?
স্বামী বললেন, আমি এ প্রস্তাবে সম্মত নহি জানিয়ে দিয়েছি।
স্ত্রী বললেন ঠিক জবাবই দিয়েছেন। আমরা আমাদের প্রাণের পুত্তুলিকে সে হতভাগা অসৎ ছেলের নিকট সমর্পণ করব কেমন করে? তা কিছুতেই সম্ভব নহে। দরকার হয় চিরকাল কন্যা অবিবাহিত থাকবে। তবু অমন পাত্রের কাছে কন্যা দান করা চলে না।
মোজাহাম বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ, যদি উত্তম পাত্র না জোটে আছিয়ার বিবাহের প্রয়োজন নেই তবুও অপাত্রে অর্পণ করতঃ ইহ-পরকাল বিনষ্ট করব না।
তবে ভাবছি কি জান? ওদের কাছে ন্যায় অন্যায়ের বিবেচনা নে; কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে কিনা বলা তো যায় না!
এ আশঙ্কা পত্নীর মনেও ছিল। অতএব তিনি নিম্নস্বরে বললেন, চলুন আমরা এ দেশ ছেড়ে কেনান চলে যাই।
মোজাহাম বললেন, দেখ প্রিয়তমা! দেশ ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই, সর্বত্রই আল্লাহ আছেন। অদৃষ্টে যা আছে ঘটবেই; আমরা মিশরেই থাকব। তুমি উদ্বিগ্ন হইও না, আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করতে থাক। তিনি স্বীয় পত্নীকে এভাবে প্রবোধ দিলেন কিন্তু আসলে নিজের মনের উতকণ্ঠাকেই দূর করতে সক্ষম হলেন না। তখন হতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এক আসন্ন বিপদাশংকায় অতি চিন্তিতভাবে কালক্ষেপন করতে লাগলেন।