সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে তিরস্কার করি না। মানুষ যখন আমাকে সুই ফোটায় তখন আমি “উহ!’ করে উঠি মাত্র। সে শব্দটি শোনা যায়। আর যে-লোকটি আমাকে সুই ফোটালো তার শব্দটি শোনা যায় না। ফলে লোক ভাবে আমি জালেম আর লোকটি মজলুম। এভাবে লোক মজলুমকে জালেম আর জালেম কে মজলুম মনে করে।

তিরস্কার না করার যে-অবস্থা হয় তা নীচের ঘটনাটির দ্বারা বুঝা যাবে। এক সাপ তার জীবনে কবার মানুষকে দংশন করেছে আর আল্লাহর কত সৃষ্টিকে কষ্ট দিয়েছে সে চিন্তা করে বিচলিত হয়ে পড়লো। এখন তওবা করে ভাল হয়ে যাবে এ চিন্তা করে সে এক পীর সাহেবের কাছে গিয়ে মুরীদ হলো এবং তওবা করলো যে আর কখনও কাউকে দংশন করবে না। একথা সমস্ত বন-জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়লো যে সাপটা পীরের কাছে মুরীদ হয়েছে এবং আর কাউকে দংশন করবে না বলে তওবা করেছে। সব জন্তু নিরাপদ হলো।

ব্যঙ্গ সে সাপের পীঠে বসে থাকে, ইঁদুর এসে লেজ কামড়িয়ে টানাটানি করে। আর সাপ সবর করে। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি এসে তার মাংসের কণা ছিড়ে নিয়ে উড়ে যায়। তাতেও সে ছবর করে। পিঁপড়ার দল মনের আনন্দে তার দেহ ফুটা করে রক্ত চুষে নেয়। সে ছবর করে।

একদিন পীর সাহেব সে রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্চছিলেন। দেখলেন সাপটির দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে। পীর সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “এ কী অবস্থা তোর?” সাপ বললো, “হুজুর! এসব আপনার মুরীদ হওয়ার বরকত। জঙ্গলের জন্তুরা আমার তওবা করার কথা শুনে নিশ্চিন্ত মনে আমাকে জুলুম করে চলেছে।’ কিন্তু আমি যে তওবা ভঙ্গ করতে পারি না, তাই ছবর করে চলেছি।

পীর সাহেব বললেন, “আরে নাদান! তোকে আমি ছোবল মারা থেকে তওবা করিয়েছিলাম; ফোস করা থেকে তো তওবা করাইনি? প্রয়োজন বোধে ফোস করে উঠিস। নিজের হেফাজতের জন্যে মাঝে মাঝে ফোঁস করে উঠার প্রয়োজন আছে। আমিও সেরূপ মানুষের বিশৃঙ্খলা আচরণ থেকে বাচার জন্য ফোস করি। যদি এরূপ না করি তবে চারিদিক থেকে লোক আমাকে এভাবে ঘিরে ধরবে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে থাকবে।”

(আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৫৫)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাপের তওবা

একটি সাপের ঘটনা বর্ণনা করছি। আমার কাছে যারা তালীম গ্রহন করতে আসে প্রথমেই আমি কাউকে তিরস্কার করি না। মানুষ যখন আমাকে সুই ফোটায় তখন আমি “উহ!’ করে উঠি মাত্র। সে শব্দটি শোনা যায়। আর যে-লোকটি আমাকে সুই ফোটালো তার শব্দটি শোনা যায় না। ফলে লোক ভাবে আমি জালেম আর লোকটি মজলুম। এভাবে লোক মজলুমকে জালেম আর জালেম কে মজলুম মনে করে।

তিরস্কার না করার যে-অবস্থা হয় তা নীচের ঘটনাটির দ্বারা বুঝা যাবে। এক সাপ তার জীবনে কবার মানুষকে দংশন করেছে আর আল্লাহর কত সৃষ্টিকে কষ্ট দিয়েছে সে চিন্তা করে বিচলিত হয়ে পড়লো। এখন তওবা করে ভাল হয়ে যাবে এ চিন্তা করে সে এক পীর সাহেবের কাছে গিয়ে মুরীদ হলো এবং তওবা করলো যে আর কখনও কাউকে দংশন করবে না। একথা সমস্ত বন-জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়লো যে সাপটা পীরের কাছে মুরীদ হয়েছে এবং আর কাউকে দংশন করবে না বলে তওবা করেছে। সব জন্তু নিরাপদ হলো।

ব্যঙ্গ সে সাপের পীঠে বসে থাকে, ইঁদুর এসে লেজ কামড়িয়ে টানাটানি করে। আর সাপ সবর করে। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি এসে তার মাংসের কণা ছিড়ে নিয়ে উড়ে যায়। তাতেও সে ছবর করে। পিঁপড়ার দল মনের আনন্দে তার দেহ ফুটা করে রক্ত চুষে নেয়। সে ছবর করে।

একদিন পীর সাহেব সে রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্চছিলেন। দেখলেন সাপটির দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে। পীর সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “এ কী অবস্থা তোর?” সাপ বললো, “হুজুর! এসব আপনার মুরীদ হওয়ার বরকত। জঙ্গলের জন্তুরা আমার তওবা করার কথা শুনে নিশ্চিন্ত মনে আমাকে জুলুম করে চলেছে।’ কিন্তু আমি যে তওবা ভঙ্গ করতে পারি না, তাই ছবর করে চলেছি।

পীর সাহেব বললেন, “আরে নাদান! তোকে আমি ছোবল মারা থেকে তওবা করিয়েছিলাম; ফোস করা থেকে তো তওবা করাইনি? প্রয়োজন বোধে ফোস করে উঠিস। নিজের হেফাজতের জন্যে মাঝে মাঝে ফোঁস করে উঠার প্রয়োজন আছে। আমিও সেরূপ মানুষের বিশৃঙ্খলা আচরণ থেকে বাচার জন্য ফোস করি। যদি এরূপ না করি তবে চারিদিক থেকে লোক আমাকে এভাবে ঘিরে ধরবে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে থাকবে।”

(আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৫৫)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

মুগীরা ইবন শু’বা (রা)

নাম আবু আবদিল্লাহ মুগীরা, পিতা শু’বা ইবন আবী আমের। আবু আবদিল্লাহ ছাড়াও আবু মুহাম্মাদ ও…

আবদুল্লাহ ইবন হুজাফাহ আস-সাহমী-(রা)

আবু হুজাফাহ আবদুল্লাহ নাম। পিতার নাম হুজাফাহ। কুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। ইসলামী দাওয়াতের…

আমর ইবনুল আস (রা)

আমর নাম, আবু আবদিল্লাহ ও আবু মহাম্মাদ কুনিয়াত। পিতা আস ও মাতা নাবিগা। তাঁর বংশের…