সংসার বিরাগী এক যুবক
হযরত আবু সোলায়মান মাগরাবী (রহঃ) বলেন, আমি বন-জঙ্গল ও পাহাড় হতে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। হারাম-হালালের ব্যাপারে আমি খুবই সতর্ক ছিলাম। একরাতে আমি স্বপ্নযোগে বসরা শহরে আউলিয়া কিরামের সাক্ষাৎ পেলাম। তাদের সাথে হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এবং হযরত মালেক বিন দিনার ও ছিলেন। আমি তাদের নিকট নিজের অবস্তাহ বর্ণনা করলাম, হে আল্লাহর ওলীরা! আপনারা আমাকে হালাল রুজির এমন একটি উত্তম পথ বলে দিন, যার সাথে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে কোন প্রকার পাকড়াও হবে না এবং মানুষের কোন হকও যেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকে। আমার নিবেদনের পর তারা আমার হাত ধরে শহর থেকে বের হয়ে এক পাহাড়ের চুড়ায় নিয়ে গেলেন। সেখানে আমরা প্রচুর পাহাড়ী পাখী দেখতে পেলাম। আল্লাহর ওলীরা আমাকে সেই পাখী দেখিয়ে বললেন, তুমি এ পাখী খেয়ে জীবন ধারণ কর। এ পাখীর জন্য তোমাকে আল্লাহর নিকট কোন জবাব দিহি করতে হবে না এবং পাখীর সাথে মানুষের কোন হক ও জড়িত নেই।
বর্ণনাকারী মাগরাবী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর ওলীদের উপরোক্ত পরামর্শের পর আমি ক্রমাগত ছয় মাস ঐ পাখী খেয়ে জীবন ধারণ করলাম। এ হালাল রিজিকের ফলে আমার কলব এমন পবিত্র হয়ে গেল যে, পরে আমি মনে মনে এমন ধারণা পোষণ করলাম, আল্লাহ পাক যদি জান্নাতবাসীদের অন্তরের মত আমার অন্তরকে পবিত্র করে দেন, তবে কতই না ভাল হতো।
হযরত মাগারাবী (রহঃ) বলেন, একদিন আমি পাহাড় থেকে নেমে পথের পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম, যুবক বয়সের এক ফকীর শহরের দিকে যাচ্ছে। তাকে দেখে তার প্রতি আমার মায়া হল। আমার পকেটে লাকড়ী বিক্রির কিছু মুদ্রা ছিল। আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার জীবিকার জন্য তো পয়সা খরচ করতে হয় না। আল্লাহর দেয়া পাখী খেয়েই আমি জীবন ধারণ করছি। সুতরাং আমার মুদ্রা কয়টি যুবককে দান করে দিল সে হয়তো শহর হতে কিছু ক্রয় করে আহার করতে পারবে।
পরে সে আমার নিকটে এলে আমি সেই মুদ্রা বের করতে পকেটে হাত দিলাম। এমন সময় যুবক ঠোট নেড়ে কি যেন পাঠ করল। সাথে সাথে আমার চতুর্দিকী সকল ভূমি স্বর্ণে পরিণত হয়ে ঝলমল করতে লাগল। তার উজ্জ্বল দ্যুতির প্রভাবে আমার চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। ক্রমে আমার মনে এমন ভীতির সঞ্চার হল যে, আমি সেই যুবককে সালাম করার শক্তিও হারিয়ে ফেললাম।
উপরোক্ত ঘটনার কয়েকদিন পর আমি পাহাড়ের চূড়ায় পুনরায় সেই যুবকের সাক্ষাৎ পেলাম। সে এক জায়গায় বসেছিল এবং তার সম্মুখে পানি ভর্তি একটি কলস ছিল। আমি নিকটে গিয়ে তাকে সালাম করে বললাম, আমাকে কিছু নসীহত কর। যুবক মুখে কোন কথা না বলে পানির কলসটি পা দ্বারা নাড়া দিয়ে কাত করে ফেলে দিল। সাথে সাথে কলসের পানি মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল এবং মুহুর্তে পাহাড়ের শুষ্ক মাটি সেই পানিকে চুষে ফেলল। যুবক এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, অধিক গল্প-গুজব নেক আমলকে এমনভাবে নিঃশেষ করে ফেলে যেমন এই মাটি পানিকে নিঃশেষ করে ফেলল। যাও নসীহতের জন্য এটাই যথেষ্ট।