রাত্রি শেষে স্ত্রী তালাকের ঘটনা

এক ব্যক্তির স্ত্রী রাগ করেছিল। স্বামীর সাথে কথা বলে না। স্বামী অনেক চেষ্টা করেও স্ত্রীকে কথা বলাতে পারলো না।

অবশেষে এক রাত্রীতে বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে বললো, আজ ফজরের আযান হওয়ার পূর্বে যদি আমার সাথে কথা না বল তবে তোমার উপরে তিন তালাক।

কিন্তু মহিলাটি কথা বললো না। কারণ মহিলাটি ছিল খুব সুন্দর। কারণ এ স্বামীর ভাত না খাওয়াই তার ইচ্ছা ছিল। তালাক হয়ে যাওয়াটাই স্ত্রী লোকটি কামনা ছিল। সুতরাং কথা না বলে কোন প্রকার ফজরের আযান কাটিয়ে দিতে পারলেই স্বামীর এ কথা তালাক হিসাবে গণ্য হয়ে যাবে। এ স্বামীর বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হল। সুতরাং সে মুখ আরও শক্তভাবে বন্ধ করে রাখলো।

এদিকে স্বামী আরো বিপদে পড়ে গেল। এতদিন কথা বলেনি সে ভাল ছিল। কিন্তু এখন দেখি এ কথা দিয়ে একেবারে তালাক হয়ে যাবে। হায়, ফজর হতে তো আর বেশি দেরি নেই, আমি এমন কথা কেন বললাম!

লোকটি খুব বিব্রত হয়ে মাসওয়ালার খোঁজে বের হলো। কেমন করে তালাক থেকে স্ত্রীকে বাঁচানো যায়? অনেক আলেম উলামার কাছে ছোটাছুটি করলো। কিন্তু তার পক্ষে কোন ফতোয়া পাওয়া গেল না। সবাই বলল, এই স্ত্রীকে তালাক থেকে আর বাঁচানো যাবে না। যদি এভাবে কথা বন্ধ রাখে তবে ফজরের আযান হওয়ার সাথে সাথে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।

আর কোন উপায় না দেখে অবশেষে লোকটি হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-এর কাছে গিয়ে হাজির হয়ে তার দুঃখের কথা বললো, হুজুর এ স্ত্রী তালাক হয়ে গেলে আমি বাঁচব না। আমাকে রক্ষা করুন।

ইমাম হানিফা (রহঃ) বললেন, তোমার বউ তালাক হবে না। তুমি বাড়ি যাও। স্ত্রী তোমারি থাকবে।

এ ফতোয়া শুনে আলেম-উলেমারা বলাবলি করতে লাগলেন, যে ইমামকে আমরা এত ভক্তি-শ্রদ্ধা করি তিনি একজন সামান্য লোকের দুঃখ দেখে স্থির থাকতে পারলেন না? শরীয়তের মাসআলাকে হেরফের করে ফতোয়া দিলেন? কিন্তু ব্যাপারটি ঘটল অন্যভাবে। বিজ্ঞ ইমামের পক্ষের শুধু এরুপ জটিল ঘটনাকে সহজ করা সম্ভব ছিল।

লোকটির বাড়ির পাশে একটি মসজিদ ছিল। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ফজর হওয়ার আগেই সে মসজিদে গিয়ে উচ্চস্বরে আযান দিতে লাগলেন।

স্ত্রী আযান শোনা মাত্র আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে স্বামীকে ডেকে বলতে লাগলো, আমার তালাক হয়ে গেছে। আমার বিদায়ের ব্যবস্থা করুন। লোকটি বলল, কেমন করে হলো তোমার তালাক?

স্ত্রী বললো, ঐ দেখুন মসজিদে ফজরের আযান হচ্ছে। আর ফজরের আযানের পূর্ব পর্যন্ত কথা বন্ধ রেখেছিলাম তাই আপনার কথা অনুযায়ী তালাক হয়ে গেছে।

লোকটি আবার চিন্তায় পড়ে গেল। ইমাম সাহেবের কণ্ঠে আযানের আওয়াজ শুনে মসজিদের দিকে ছুটে গেল।

লোকটি বলল, হুযুর আপনি বললেন, স্ত্রী তালাক হবে না কিন্তু স্ত্রী তো তালাক হয়ে গেল।

এখন আমি কি করি? ইমাম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কেমন করে তালাক হলো? লোকটি বলল, এ যে ফজরের আযান হয়ে গেল এর আগ পর্যন্ত সে আমার সাথে কথা বন্ধ রেখেছিল।

ইমাম সাহেব বললেন, এ আযানের পরে কথা বলেছে কিছু?

লোকটি বলল, জী হাঁ আযানের পরে কথা বলেছে।

ইমাম সাহেব, তবে ঠিক আছে। তোমার স্ত্রী তালাক হয়নি। ফজরের আযানের এখনও দেরী আছে। তার আগেই তোমার স্ত্রী কথা বলেছে। যে আযান শুনে কথা বলেছে সেটা ছিল তাহাজ্জুদের আযান।

লোকটি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি তাহাজ্জুদের আযান শুনে কথা বলে ফেলেছ।

সব কিছু শুনে স্ত্রী হতভম্ভ আর আলেমগণ হতবাক।

(আল-এফাযাতুল য়্যাউমিয়্যাহ; খণ্ড-৪ পৃষ্ঠা-৮২)

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।