রাতুলের দাদা মাওলানা মনির উদ্দিন । খুব জানা শোনা মানুষ । বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি । স্বনাম ধন্য ব্যক্তি । বিভিন্ন কাজে তাঁর কাছে সর্বদাই লোকজন আসতে থাকে ।
তিনি একজন সাদা মনের মানুষ । সবার উপকার করার চেষ্টা করেন যথাসাধ্য । জিন-ভুতে ধরা রোগীদের তিনি আরোগ্য করে থাকেন । রাতুল যেই দিন দাদু বাড়িতে পৌঁছল, তার পরের দিনের ঘটনা । সকাল সাতটা বাজে । নরম সূর্য । জামশেদ, রাতুল আর অহনা একসঙ্গে তাদের বাড়ির সামনের আম বাগানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে । গাছ ভর্তি আমের মুকুল । ছোট ছোট আম । একটু দুরেই একটা সজনে গাছ । মাথার চুলের মত সজনে ধরে আছে । খুব মনোহর দৃশ্য । ধারে কাছেই শোনা যাচ্ছে দোয়েলের শিস । টুনটুনির টুনটূন । রাখাল গরু নিয়ে যাচ্ছে । বড় হাওড়ের দিকে । একটু দূরেই উজাড় বাড়ি । তিন জনেই বার বার সেদিকে তাকাচ্ছে । ভয়ে ভয়ে । কখন কী ঘটে যায় কে বলতে পারে ! গল্প করার এক ফাঁকে রাতুল বন্ধু জামশেদকে জিজ্ঞেস করল,
তোমার সমস্যার কথা তো কিছু বললে না ?
বলব । সে জন্যই তো মোবাইল করে আসতে বললাম ।
শুরু কর ।
জামশেদ ইংগিতে অহনাকে নির্দেশ করল । রাতুল বলল, কোন সমস্যা নেই । ওর সামনে বলতে পার । ও হল আমাদের রহস্যকন্যা । তোমার সমস্যার সমাধান হয়ত ও ই তোমাকে বলে দিতে পারবে ।
অহনা কিছুটা অপমানিত হল । সে চলে যেতে চাইছে । জামশেদ সরি বলে অহনার মান ভাঙাল । তারপর বলল, বন্ধু, আমার সমস্যা সেই একটাই । পরী রাজকন্যা ।বানেছা ।খুব ডিস্টার্ব করছে ।রাত-বিরাত নাই । যখন তখন আমার ঘরে চলে আসে । সহজে যেতে চায় না । এসেই বলে, বাঁশি বাজাও । বাজাইতে না চাইলে হুমকি ধামকি দেয় ।
অহনা বলল, এখন আর আগের মত বিয়ে করতে চায় না ?
তা চায় । কিন্তু আমি রাজি হই না ।
কেন রাজি হও না ? রাতুল প্রশ্ন করল ।
পরী আর মানুষে কোনদিন বিয়ে হয় ?
কেন হবে না ? বিয়ে হতে তো কোন বাঁধা নেই । কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।বলল অহনা।
কোন জায়গায় ? বলল জামশেদ ।
অহনা বলল, আসলে সে তোমাকে ভালোবাসে না । ভালোবাসে তোমার বাঁশির সুর ।যখন তোমার বাঁশিতে সুর থাকবে না; তখন কী হবে ? সে তোমাকে কলার খোসার মত ছুড়ে মারবে ।
রাতুলও অহনার সাথে সহমত পোষণ করল । আর জামশেদ অহনার বুদ্ধি দীপ্ত মন্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল । তারপর অহনার উদ্দেশ্য বলল, তাহলে আমার উপায় কী ?
উপায় একটা আছে । কিন্তু সে তুমি পারবে না । বিজ্ঞের মত বলল অহনা ।
কী ? জিজ্ঞেস করল জামশেদ ।
তুমি উল্টো সুরে বাঁশি বাজাবে । তোমার বাঁশির যে সুর শুনে বানেছা মুগ্ধ হয়েছিল; এর বিপরীত সুর । কিন্তু আমি আবারও বলছি, সে তুমি পারবে না ।
কেন পারব না ? আমি অবশ্যই পারব । বলল জামশেদ ।
না । তুমি অবশ্যই পারবে না । অহনা জোর দিয়ে বলল ।
জামশেদ মাথা নিচু করে আছে । রাতুল বলল, কেন পারবে না, সেইটা বল ।
পারবে না; কারণ জামশেদ ভাই বানেছাকে ভালোবাসে । গভীরভাবে ভালোবাসে । সে আমি তার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি । কি জামশেদ ভাই আমি ঠিক বলিনি ?
জামশেদ কোন জবাব দিল না । চুপ করে থাকল । কারো বুঝতে বাকি থাকল না যে, এই নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ।