যিনি মৃত্যু দেন তিনিই জীবন দান করেন-২য় পর্ব
ফাঁসির মঞ্চে জোসেফ স্যামুয়েল আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলল, চুরির অপরাধের সাথে আমি জড়িত ছিলাম কিন্তু পুলিশ কনস্টেবলকে আমি হত্যা করি নি। তাকে যে হত্যা করেছে পুলিশ তাকে ঘিরে রেখেছে এবং সে আমার পরিণতি উপভোগ করছে। খোলাখুলি বলতে গেলে হয় যে, আইজাক সিমন্ডই পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করেছে।
নিজের নাম শুনে আইজাক সিমন্ড এমনভাবে চিৎকার শুরু করল যেন মানুষ জোসেফের বক্তব্য শুনতে না পারে। কিন্তু জোসেফ স্যামুয়েল তার বক্তব্য অব্যাহত রেখে চুরির অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ দিল এবং কিভাবে আইজাক হত্যা করেছে সে কথাও জানাল। পরিশেষে সে বলল, আসল অপরাধী রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অথচ একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে।
জল্লাদ ফাঁসির মজবুত রশি জোসেফ স্যামুয়েলের গলায় আগেই পরিয়ে দিয়েছিল। জোসেফের আবেগ আপ্লুত বক্তৃতায় সেখানে উপস্থিত লোকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। মানুষের হৈ চৈ, শোরগোল বেড়ে গেল। উপস্থিত লোকেরা দাবি করছিল যে, নির্দোষ জোসেফ স্যামুয়েলকে ছেড়ে দেওয়া হোক, আসল অপরাধী আইজাককে ফাঁসি দেওয়া হোক। এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে জল্লাদ উর্ধতন কর্মকর্তার ইঙ্গিতে ফাঁসির দড়ি টেনে ধরল। এতে জোসেফ স্যামুয়েলের পায়ের নিচ থেকে তক্তা সরে গেল। জোসেফ ছয় সাত হাত উঁচু থেকে মাটিতে পড়ে গেল।
সেনাবাহিনীর লোকেরা জোসেফ স্যামুয়েলকে ঘিরে রাখল যেন সাধারণ মানুষ হস্তক্ষেপ করতে না পারে। জল্লাদ নতুন রশি এনে জোসেফ স্যামুয়েলের গলায় পরিয়ে দিল। জোসেফ প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় দাঁড়াতে পারছিল না। এ কারনে ফাঁসির তক্তার উপরে একটা টুল দিয়ে তাকে বসানো হল। তারপর প্রভোস্ট মার্শালের ইঙ্গিতে জল্লাদ পুনরায় রশি টান দিল। উপস্থিত জনতার চোখে মুখে আতংক ছেয়ে গেল। অস্থিরভাবে জোসেফ স্যামুয়েল পরিণতি দেখছিল। পায়ের নিচ থেকে তক্তা সরে যাওয়ায় জোসেফ স্যামুয়েল ঝুলে পড়ল এবং তার দেহ জোরে ঘুরতে লাগল। ফাঁসির রশি খুলে যেতে লাগল এবং তার পা মাটিতে এসে ঠেকল। উপস্থিত জনতা এরকম বিস্ময়কর ঘটনা দেখে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। তারা চিৎকার করে বলছিল জোসেফ নির্দোষ। মহান আল্লাহ চান না তার মৃত্যু হোক, তার ফাঁসি হোক।
কিন্তু প্রভোস্ট মার্শাল মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিল না। সে অলৌকিক কোন ঘটনাও বিশ্বাস করত না। সে ক্ষেপে গিয়ে পুলিশ এবং জল্লাদকে আদেশ দিল যে, এই ফাঁসির আসামিকে যে কোন ভাবেই ফাঁসি দিতে হবে। তাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না। নতুন রশি নিয়ে আস। তৃতীয় বার তার গলায় রশি পরিয়ে জল্লাদ রশি টেনে ধরল। এবার রশি জোসেফের মাথার খানিকটা উপর দিয়ে ছিড়ে গেল এবং জোসেফের পা মাটি স্পর্শ করল। একজন সৈনিক এগিয়ে গিয়ে জোসেফের গলার রশির বাঁধ ঢিলা করে দিলেন যেন জোসেফ নিঃশ্বাস নিতে পারে। উত্তেজিত জনতা সেনাবাহিনীর জওয়ান এবং পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ছুটে গেল এবং জোসেফ স্যামুয়েলকে ঘিরে রাখল। জানতার উত্তেজনা দেখে মার্শাল ভয় পেয়ে গেল। সে ঘোড়ায় আরোহন করে দ্রুতবেগে গভর্ণরের বাসভবনের দিকে ছুটে গেল। এরকম বিস্ময়কর ঘটনার বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর প্রয়োজন করল।
গভর্ণর সাথে সাথে জোসেফ স্যামুয়েলের প্রতি ক্ষমা ঘোষণার আদেশ লিখে দিলেন। জোসেফ তিনবার ফাঁসির মঞ্চ থেকে বেঁচে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। সে বুঝতে পারছিল না, সে বেঁচে আছে নাকি তার ফাঁসি হয়ে গেছে। উত্তেজিত জনতা জোসেফ স্যামুয়েলকে শূন্যে তুলে ধরে কারাগারের সীমানার বাইরে নিয়ে গেল।
উত্তেজনা প্রশমিত হবার পর প্রভোস্ট মার্শাল এ ঘটনা পর্যালোচনা করল। সে সন্দেহ করলে যে, স্যামুয়েলের জীবন রক্ষায় কেউ ষড়যন্ত্র করেছে। প্রভোস্ট মার্শাল তিনটি রশি পরীক্ষা করল। বিশেষভাবে শেষের রশিটি তিনটি রশির সমান মোটা করা হয়েছিল। সেই রশিতে পাঁচ মণ ওজনের জিনিস বেঁধে রশি টেনে ধরা হল। পাঁচ মণ ওজনের সেই জিনিস শূন্যে ঝুলে রইল, একটুও ছিড়ল না। তাছাড়া পর পর তিনটি রশিই কিভাবে ছিড়ে গেল এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী সময়ে আইজাক সিমন্ডের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হল এবং তাকে ফাঁসি দেওয়া হলো।
যিনি মৃত্যু দেন তিনিই জীবন দান করেন-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন