মে’রাজের বিবরণ-৩য় পর্ব
মে’রাজের বিবরণ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারপর এমন এক প্রান্তরে পৌঁছালেন যেখানে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর বায়ু এবং মেশক আরম্বের খোশবু প্রবাহিত হতে লাগল এবং একটি শব্দও তার কর্ণে আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? জিব্রাইল (আঃ) বললেন, এটা বেহেশতের শব্দ ও তার সুগদ্ধি। তারপর একটি ভয়াবহ প্রান্তরে পৌঁছালেন এবং বিকট শব্দ শুনতে পান। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, এটা জাহান্নামের শব্দ।
রাসূল (সাঃ) বলেছেল, আমাকে ডান দিক হতে একজন লোক ডাক দিল আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। বাম দিক হতেও ডাক দিল সে দিকেও ভ্রুক্ষেপ করলাম না। আর একজন মহিলা আমাকে ডাক দিল তাতেও সারা দেই নি। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ডান দিকের আহ্বানকারী ইহুদী এবং বাম দিকের আহ্বানকারী খৃষ্টান এবং মহিলাটি দুনিয়া। আপনি যদি তাদের ডাকে সাড়া দিতেন তাহলে আপনার উম্মত যথাক্রমে ইহুদী, নাসারা ও দুনিয়াদার হয়ে যেত।
রাসূল (সাঃ)-এর নিকট একটি খোশবু ভেসে আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? জিব্রাইল (আঃ) উত্তর করলেন, ফেরাউনের কন্যার দাসী ও তার সন্তানগণের খোশবু। ফেরাউনের কন্যার দাসী একদিন ফেরাউনের কন্যাকে চিরুনী করার সময় হাত হতে চিরুনী পড়ে যায়। তখন সে তা উঠাবার সময় বিসমিল্লাহ বলল। ফেরাউনের কন্যা জিজ্ঞেস করল, তুমি কার নাম বলছ? আমার পিতার নাম? চিরুনী কারিনী বলল, না, আমার প্রতিপালকের নাম যিনি তোমার পিতারও প্রতিপালক। ফেরাউনের কন্যা বলল, আমার পিতা ছাড়া আবার কোন প্রতিপালক আছে? দাসী উত্তর করল, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আছে। এ কথা ফেরাউনের কর্ণগোচর হল। সে ক্রোধান্বিত হয়ে একটি তাম্রমূর্তি আগুনে জ্বালিয়ে সে উত্তপ্ত দগ্ধ তাম্রের মধ্যে দাসী ও তার সন্তানগণকে নিক্ষেপ করল। কিন্তু তবুও তারা তৌহীদ হতে ভ্রষ্ট হয় নি।
রাসূল (সাঃ) একখানা কাষ্ঠদণ্ড অতিক্রম করেন। তার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় কাপড় বা বস্তু যা হউক তা ছিড়ে ফেলে। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন এটা কি? জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনার উম্মতের ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে পাথরের উপর বসে ও রাহাজানী করে। তারপর তিনি এমন এক কওমকে দেখতে পেলেন যারা নিজেদের তাম্র নখের দ্বারা ছিনা ও মুখমণ্ডল আঁচড়াচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তারা পরের গীবতকারী ও অপরের দোষত্রুটি অন্বেষণকারী।
তারপর তিনি এমন এক ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হলে যিনি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ইনি হযরত ঈসা (আঃ)। তারপর হযরত মূসার সঙ্গে দেখা হল তিনি আল্লাহর দরবারে খুব দোয়া মুনাজাত করছেন। অতঃপর সম্মুখে অগ্রসর হয়ে একটি নূর ও বহু চেরাগ দেখতে পেলেন। নূরটি একটি বৃক্ষের আকারে এবং চেরাগগুলি তার ফল সরূপ প্রকাশিত হল। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? জিব্রাইল (আঃ) বললেন আপনার উর্ধতন পুরুষ ইব্রাহীমের বৃক্ষ। আপনি নিকটে গমন করুন। তিনি নিকটে যেয়ে দেখলেন, ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরগণ তাঁর নিচে আছেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সালামের উত্তর প্রদান করলেন। হজরত রাসূল (সাঃ)-এর জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, আপনি আজ রাত্রে আপনার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবেন। আপনার উম্মত সর্বশেষ ও সর্বাপেক্ষা দুর্বল।
অন্য এক বর্ণনায় আছে হযরত মূসাকে একটি লাল মাটির কবরে নামাজ পড়তে দেখতেন। ইয়াজুজ মাজুজের নিকটও তাঁর গমন হয়েছে। তাদেরকে তিনি আল্লাহর এবাদতের প্রতি আহবান করলেন। কিন্তু তারা অগ্রাহ্য করল। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তারা নাফরমানদের সাথে দোযখে যাবে।
তারপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হন। বায়তুল মুকাদ্দাসের সামনে একটি পাথর আছে। যাকে ছাখারায়ে বায়তুল মুকাদ্দাস বলে। ঐ পাথরের মধ্যে একটি ছিদ্র আছে। পূর্বেকার সমস্ত নবীগণ এ হালকা বা ছিদ্রতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সওয়ারী বেঁধেছেন। হযরত রাসূল (সাঃ) দুনিয়ার প্রথা অনুযায়ী সে পাথরের হালকায় বোরাককে বাঁধলেন। সে হালকাটি যেস্থানে বিরাজমান আছে ঐ স্থানের নাম বাবে মুহাম্মাদ হয়ে গিয়েছে। যদিও বোরাকটি বেহেশতের প্রাণী হওয়ার কারণে বাঁধার দরকার ছিল না তবুও তিন কারণে নবীজী বোরাক সেখানে বেঁধেছিলেন। সে তিন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ এ যে, তিনি দুনিয়াকে শিক্ষা দিলেন যে দুনিয়া অছিলার ঘর বা দারুল আছবাব। এ জগতে প্রত্যেক কাজেই অছিলা অবলম্বন করতে হবে। অছিলা ছাড়া আল্লাহর অনুগ্রহ ও কার্যে সফলতা লাভ করা যাবে না। দু নম্বর কারণে এ যে, যদিও বোরাকটি জান্নাতী প্রাণী কিন্তু হতে পারে দুনিয়ায় আসতে এ জগতের স্বভাবে তার মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে। তিন নম্বর কারণ হল, সমস্ত আম্বিয়াগণের প্রথা হিসাবে এটা করা হয়েছে।