মূসা (আঃ) কর্তৃক কিবতী হত্যা
ফেরআউনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূসা (আঃ) গ্রাম্য এলাকা বসবাস করতে লাগলেন। তবে কখনও কখনও ফেরাউনের লোকদের দৃষ্টি এড়িয়ে শহরে আসতেন। একদিন দ্বিপ্রহরে তিনি শহরে প্রবেশ করেছেন। এ সময় সাধারণত শহরের লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকত।
শহর থাকত অনেকটা নীরব শান্ত। তিনি দেখলেন অদূরে দু লোক ঝগড়ায় লিপ্ত। তাদের একজন বনী ইসরাইলী অপরজন কিবতী। বনী ইসরাইলী ব্যক্তির নাম সামেরী আর কিবতী হচ্ছে ফেরআউনের রাজকীয় বাবুর্চি সর্দার।
সে অসহায় বনী ইসরাঈলীর উপর জুলুম করছে। সে অসহায় বনী ইসরাঈলীর উপর জুলুম করছে। বনী ইসরাঈলী লাকড়ি কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিবতী তা কেড়ে নিতে চাইছে। বনী ইসরাঈলী হযরত মূসা (আঃ) কে দেখতে পেয়ে কিবতীর হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানায়।
তিনি কিবতীকে বলেন, এ বেচারাকে ছেড়ে দাও। কিবতী বলল, দেখুন! এ লাকড়ি রাজকীয় চুলার জন্যই তার থেকে নেয়া হচ্ছে। মূসা (আঃ) ক্রোধান্নিত হন।
কেননা, রাজপুত্র হিসেবে রাজ দরবারে, রাজপ্রাসাদে, বাইরে সর্বত্র সর্বসাধারনের নিকট তিনি সম্মানের পাত্র সবাই তাঁকে সমীহ করে। এমনকি রাজ কর্মচারীরা পর্যন্ত তার সাথে সম্মান জনক আচরণ করে। তাই এ কবতীর উচিত ছিল তাঁকে দেখেই এ নেক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকা।
অথচ সেটা তো করেইনি তদুপরি তিনি বলা সত্ত্বেও এ অন্যায় কাজ থেকে বিরত হল না। বরং তিনি তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলে সে অশোভনীয় উত্তর প্রদান করে। এতে তাঁর ক্রোধ আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে তিনি কিবতীকে একটি ঘুষি মারেন, এ ঘুষিতেই সে জমালয় চলে যায়।
এ সময় সেখানে অন্য কোন লোক ছিল না বিধায় ঘটনা প্রকাশ পাবার কোন আশংকা ছিল না। আর বনী ইসরাঈলী ব্যক্তি তো এ ঘটনা প্রকাশ করারই কথা নয়। কারণ, তাকে রক্ষা করতে গিয়েই তো এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হল। বনী ইসরাইলী এবং হযরত মূসা (আঃ) নিরাপদ ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
এ ঘটনা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- আর তিনি একদিন শহরে এমন এক সময় উপনীত হন, যখন তথাকার অধিকাংশ বাসিন্দা (নিন্দ্রায় থাকায়) অসতর্ক ছিল, তখন তিনি দু লোককে কলহে লিপ্ত দেখলেন, একজন তাঁর সম্প্রদায়ের আর অপরজন তাঁর শত্রু সম্প্রদায়ের।
অতএব, তাঁর সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রু সম্প্রদায়ের। অতএব, তাঁর সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রুসম্প্রদায়ের লোকের বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করেন। তখন তিনি তাকে ঘুষি মারলেন, এতেই তার কর্ম শেষ হয়ে যায়।
কিবতীর মৃত্যুজনিত দুর্ঘটনায় মূসা (আঃ) মনে মনে খুবই লজ্জিত হন। যদিও ব্যাপারটা তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেই ঘটেছে। তবুও এটা তাঁর মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিবতীকে হত্যা করার তাঁর কোন ইচ্ছা ছিল না।
ইচ্ছা ছিল মজলুম বনী ইসরাঈলীকে কিবতীর জুলুম থেকে রক্ষা এবং উভয়ের ঝগড়ার অবসান ঘটান। এক ঘুষিতেই পাষন্ড কিবতী অক্কা পেতে পারে এটা ছিল তাঁর ধারণার বাইরে সুতরাং তিনি খুবই অনুতপ্ত হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ এ তো শয়তানী কর্ম, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী।
অনুশোচনা অনুতাপ করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাজনিত কাজের জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইতে থাকেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
“তিনি বলেন, রব! আমি আমার উপর জুলুম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু”।
হযরত মূসা (আঃ) এর দ্বারা কিবতীর হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার সাধারণত প্রশ্ন জাগে, তিনি প্রকারন্তরে এক জুলুমের প্রতিরোধ করতে গিয়ে আরেক জুলুম করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত শরয়ী বিধান না থাকার কারণে এ প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। এ সম্পর্কে শরয়ী বিধান হচ্ছে নিহত কিবতী ছিল হরবী কাফের। সে কোন ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত বাসিন্দা কিংবা মূসা (আঃ)-এর সাথে তার সহাবস্থানের চুক্তিও ছিল না। কাজেই এ হত্যাকান্ড যদি ইচ্ছাকৃতও সংঘটিত হত তবুও তা অপরাধ বিবেচিত হত না।
তদুপরি মূসা (আঃ) ও কিবতীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেন নি। বরং একজন বনী ইসরাঈলী মুসলমানকে তার অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন মাত্র। এতদসত্ত্বেও অনিচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়ে গেলে তিনি এ কাজকে ইবলীসী এবং গুনাহের কর্ম বলে সাব্যস্ত করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবূল করে তাঁকে মাপ করে দেন।
ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি নিজের ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্পর্কে আল্লাহর সাথে প্রতিজ্ঞা করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
“মূসা নিবেদন করলেন, হে আমার রব! যেহেতু আপনি আমাকে অনেক অনুগ্রহ করেছেন, সুতরাং আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্য করব না।