মূসার জন্ম ও অতি নাটকীয় শৈশবকাল

দেশে ফেরাউন ফেঁপে উঠেছিল অহংকারে; সে সেখানকার লোকদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করেছিল। এক শ্রেণীকে নিপীড়ন করছিল তাদের পুত্রদের হত্যা করে ও কন্যাদের বাঁচিয়ে রেখে। নিঃসন্দেহে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন। সে দেশে যারা নিপীড়িত হয়েছিল আমি চাইলাম তাদেরকে অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যদলকে দেখিয়ে দিতে তারা সেই শ্রেণীর কাছ থেকে যা আশঙ্কা করত।(২৮:৪-৫) সময় যখন ফেরাউন হিব্রুদের সকল নবজাত পুত্রসন্তানদেরকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন তখন মূসা (Moses) জন্মগ্রহণ করল। সে ছিল লেবী বংশের ইমরানের পুত্র। হারুণ ও মরিয়ম নামে তার দুই ভাইবোন ছিল। হারুণ তার চেয়ে পাঁচ বৎসরের মত বড় ছিল। মূসা জন্মগ্রহণের পর আল্লাহ তাঁর পরিকল্পণা মত তার মা ইউহানিবের কাছে এই প্রত্যাদেশ পাঠালেন- ‘শিশুটিকে বুকের দুধ দাও। তারপর যখন তার জন্যে তোমার দুর্ভাবনা হবে তখন তাকে নদীতে ফেলে দিতে ভয় পেয় না, দুঃখও কোরও না। আমি তাকে ঠিকই তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব, আর তাকে রসূলদের মধ্যে একজন করব।(২৮:৬-৭) প্রথম তিন মাস মূসার মা মূসাকে নিজ গৃহে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু পরে আর তা সম্ভব ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ছোট একটি নল বনের ঝুড়ি এমনভাবে তৈরী করল যার মধ্যে পানি না ঢুকতে পারে। তারপর প্রত্যাদেশ অনুসারে একদিন অতি প্রত্যুষে শিশুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাতা চলল নীল নদের দিকে। তার সঙ্গে চলেছে তারই চার বৎসরের কন্যা মরিয়ম, হাতে তার ঐ নলবনের ঝুড়ি। তারা যখন নদীর তীরে পৌঁছে, তখনও প্রভাত রশ্মি তেমন করে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠেনি। মাতা তার সন্তানকে শেষবারের মত চুমু খেল, তারপর অতি সাবধানে ঝুড়িতে রেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে নদীতে ভাসিয়ে দিল। নদীর ছোট ছোট ঢেউ ধীরে ধীরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে অতি আদরের সন্তানকে আর মাতা তা চেয়ে চেয়ে দেখছে-কি অদ্ভূত এক দৃশ্য! মায়ের মন বার বার ছুটে যেতে চাচ্ছে ঝুড়িটির পিছনে। কিন্তু মাতা নিজেকে শক্ত করল, কেননা তা করলে কারও সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে, আর তা তার সন্তানের জীবন সংশয় ঘটাবে। সুতরাং সে তার কন্যা মরিয়মকে বলল, ‘ঝুড়িটির দিকে নজর রেখে তার পিছনে পিছনে যাও।’ মায়ের আদেশ পাওয়া মাত্র মরিয়ম সম্মুখে এগিয়ে গেল দৌঁড়ে।ঝুড়িটি ভেসে চলেছে আজানার পথে। আর ভগ্নি মরিয়ম অশ্রুসিক্ত নয়নে দূরে পাড়ে থেকে সেটির প্রতি এমনভাবে নজর রাখল যাতে কেউ বুঝতে না পারে, আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অপেক্ষায় রইল প্রাণপ্রিয় ছোট ভাইটির ভাগ্যে কি ঘটে তা দেখার জন্যে। ফেরাউনের এক স্ত্রী বিবি আছিয়া নদীতে স্নান করতে এলেন। তিনি পানিতে নামলে, ঝুড়িটি ঢেউয়ে ভেসে ভেসে একসময় তার কাছে চলে এল। কৌতুহলবশতঃ তিনি এটি খুললেন এবং ভিতরে ভীত শিশুটিকে দেখলেন। অন্যদিকে আড়ালে লুকিয়ে থেকে আতগ্কিত হয়ে অপলক চোখে চেয়ে রইল মরিয়ম ফেরাউনের স্ত্রীর দিকে।এতক্ষণ পর্যন্ত ঝুড়ির মধ্যে শিশু মূসা চুপপাপ ছিল। কিন্তু এখন অপরিচিত লোক দেখে কান্নাকাটি শুরু করল। এই সুন্দর শিশুটির কান্না বিবি আছিয়ার হৃদয় স্পর্শ করল। সুতরাং তিনি চারিদিক তাকিয়ে তার মায়ের খোঁজ করলেন। কাউকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে তিনি একজন ধাত্রীকে দিয়ে শিশুটিকে স্তন্যপানের চেষ্টা করলেন। কিন্তু শিশু মূসা কিছুতেই কিছু খেতে চাইল না। তখন ফেরাউন পরিবারের শিশুটিকে পালনের ইচ্ছে দেখে মূসার দুর্দান্ত বুদ্ধিমতী মাত্র চার বৎসর বয়সী ঐ বোন মরিয়ম আড়াল থেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে এল এবং নিজের পরিচয় গোপন রেখে ফেরাউন পত্নীকে বলল, ‘আপনাদের কি আমি এমন এক পরিবারের লোকদেরকে দেখাব, যারা একে লালন-পালন করবে, একে বড় করবে আপনাদের হয়ে; আর এর উপর মায়া করবে?’ এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- সে (মূসার মা) মূসার বোনকে বলল, ‘ওর পিছনে পিছনে যাও।’ ওরা যেন বুঝতে না পারে তার জন্যে সে দূর থেকে লক্ষ্য করতে লাগল। আর আমি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যেন মূসা বুকের দুধ না খায় যতক্ষণ না (তার বোন এসে) বলে, ‘আপনাদের কি এমন এক পরিবারের লোকদের দেখাব, যারা একে লালন-পালন করবে। একে বড় করবে আপনাদের হয়ে; আর এর ওপর মায়া করবে?’ (২৮:১১-১২) বিবি আছিয়া নিঃসন্তান ছিলেন। সুতরাং তিনি এই সুন্দর শিশুটিকে নিজের সন্তানের মত লালন-পালনের ইচ্ছায় তাকে প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। তিনি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন ইস্রায়েলীদের প্রতি পুত্রসন্তান নদীতে নিক্ষেপের ফেরাউনের জারীকৃত আদেশে কোন মা তার এই সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। আর ফেরাউন ইস্রায়েলী সন্তান বলে এই শিশুকে প্রথমেই হত্যা করতে চাইবেন, সুতরাং বিবি আছিয়া প্রাসাদে ফিরেই ফেরাউনকে বললেন, ‘এই শিশু হবে চোখের আনন্দ আমার ও তোমার জন্যে। তাকে হত্যা কোরও না। সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা, আমরা তাকে পুত্র হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।’ স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসতেন ফেরাউন। সুতরাং সে আর অমত করল না।এভাবে ফেরাউনের ঘরের বেড়ে উঠল ফেরাউনের শত্রু মুসা (আঃ) ।

“দানশীল তালহা”

চমৎকার কাহিনী!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *