মায়ের কোলে মূসা (আঃ) – শেষ পর্ব
মায়ের কোলে মূসা (আঃ) – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অতঃপর সম্রাজ্ঞী আছিয়া মূসার মাতাকে বলেন, আমাদের বাসনা, তুমি এ শিশুটিকে স্তন্যদান এবং প্রতিপালন করবে। আর এটা রাজপ্রাসাদে থেকেই করবে। এখানেই তোমার থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করা হবে।
শিশুটি আমার খুবই প্রিয় আমি ওকে ছাড়া একদন্ডও থাকতে পারব না। আছিয়ার প্রস্তাবে মূসার মাতা বলেন, আপনার স্নেহের শিশুকে স্তন্যদানে প্রতিপালনে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে আমার ঘরবাড়ি ও স্বামী সন্তান রয়েছে।
আমাকে স্বামী সন্তানের সেবা পরিচর্যা এবং ঘরবাড়ি দেখাশোনা করতে হয়। তদুপরি আমার একটি শিশুও রয়েছে যে দুধপান করে সুতরাং এসব কিছু বিসর্জন দিয়ে রাজপ্রাসাদে থেকে আপনার শিশুকে স্তন্যদান ও তার প্রতিপালন আমার জন্য একরকম দুরুহ ব্যাপারই বটে।
তাই যদি শিশুটিকে আমার গৃহে রেখে স্তন্যদান ও প্রতিপালনের আদেশ দেন এবং তাকে আমার গৃহে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করেন তবে আমি আপনার আদেশ পালনে রাজি আছি।
আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমার গৃহে আপনার আদরের শিশুর সামান্যতম কষ্টও হবে না এবং আপনার অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমি বিন্দুমাত্র অবহেলা করব না। আপনি নিশ্চিন্ত মনে আমার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রাখতে পারেন।
মূসার মাতার বক্তব্যে আছিয়া খুবই চিন্তায় পড়ে যান। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না শিশুটির প্রতি তাঁর সীমাহীন স্নেহ মমতার কারণে লালন-পালনের জন্য হলেও তাঁকে দৃষ্টির আড়ালে রাখতে পারেন না। ওদিকে তাকে স্তন্যদানের জন্য ধাত্রীও মোটেই সহজলভ্য নয়। যদিও বা একজনকে পেলাম তাও সে রাজমহলে থাকতে রাজি নয়। আর এ ধাত্রীকেও যদি হাতছাড়া করি তা হলে তাঁর প্রাণপ্রিয় শিশুকে বাঁচানো যে দুঃসাধ্য হবে। এ সব ভাবনা ভেবে অবশেষে আছিয়া ধাত্রীবেশী মূসার মাতার শর্তই মেনে নিয়ে শিশুকে তার হাতে তুলে দেন।
মূসার মাতা মনের আনন্দে স্বীয় পুত্রকে সাথে নিয়ে ঘরে ফিরেন। এখন তাঁর আল্লাহ প্রদত্ত ওয়াদার কথা স্মরণ হয়। মূসা (আঃ)-এর জন্মের পর আল্লাহ গায়েবী নির্দেশে তাঁকে ওয়াদা দিয়েছিলেন যে কিছু দিনের জন্য তাঁর হৃদয়ের ধনকে তাঁর থেকে বিছিন্ন রাখা হলেও পুনরায় তাঁর স্নেহের কোলেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন করীমে ইরশাদ করেন – অর্থঃ আমি এভাবে মূসাকে তাঁর মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু শীতল হয় এবং চিন্তান্বিত না থাকে, আর যাতে একথা জেনে নেয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝে না।
এভাবে আল্লাহ পাক হযরত মূসা (আঃ) কে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। আর মা সানন্দচিত্তে তাঁকে নিয়ে ঘরে প্রত্যাবর্তন করেন। তাকে স্তন্যদান ও লালন-পালনের জন্য ফেরআউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া এক দীনার ভাতা বরাদ্ধ করেন। আল্লাহর কুদরত বুঝার সাধ্য কারো নেই।
যে ফেরআউন তাঁর স্নেহের নিধিকে দুনিয়া থেকে চির বিদায় করতে চেয়েছে, লাখ লাখ বনী ইসরাঈল বংশের আদম সন্তানের যে হত্যাকারী, আজ আল্লাহ স্বীয় কুদরতে তাকে দিয়ে তার ভবিষ্যত রাজ রাজত্ব, রাজক্ষমতার ধ্বংসকারী বনী ইসরাঈল শিশু মূসাকে প্রতিপালন করাচ্ছেন।
চরম শত্রু হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ মূসাকেই ফেরআউনের উত্তরাধিকারীর মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। মূসার মাতা যতই এসব ভাবছেন ততই মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মস্তক অবনত হয়ে আসছে।
আছিয়া প্রতিদিনই তাঁর প্রাণপ্রিয় স্নেহের শিশুর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ধাত্রীবেশী মূসার মায়ের কোলে আছিয়ার প্রাণপ্রিয় শিশুটি অত্যাধিক আদর যত্নে লালিত পালিত হচ্ছে। প্রতিদিনই তিনি এ সুখবর পাচ্ছেন।
এতে আছিয়াও মূসার মায়ের প্রতি অত্যন্ত সুপ্রসন্ন ছিলেন। কিন্তু শিশুটি তাঁর দৃষ্টির আড়ালে অবস্থান তাঁকে মানসিক ভাবে দারুণ পীড়া দিচ্ছিল। দিন যতই গড়াচ্ছিল ততই আল্লাহ পাক বিবি আছিয়ার অন্তরে শিশু মূসার প্রতি স্নেহ ও মায়া মমতার আধিক্য সৃষ্টি করে দিচ্ছিলেন।