মাটি সম্পর্কিত মু’যিযা
হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হিজরতের সময় সূরাকা ইবনে মালিক আমাদের অনুসরণ করে। আমি তাকে নিকটে উপস্থিত দেখে নবী করীম (সাঃ) কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ ব্যক্তি এখনই আমাদেরকে ধরে ফেলবে। জবাবে তিনি বললেন, কোন চিন্তা করো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর তিনি সুরাকার জন্য বদ দোয়া করলেন। ফলে তার ঘোড়ার পা কঠিন মাটিতে পেট পর্যন্ত ডুবে গেল। ভীত-সন্ত্রস্ত সুরাকা বলল, আমার মনে হচ্ছে, তোমরা আমার জন্য বদ দোয়া করেছ, এখন পুনরায় আমার জন্য বিপদ-মুক্তির জন্য দোয়া কর। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যে কেউ তোমাদের সন্ধানে এদিকে আসবে আমি তাকে ফিরিয়ে দেব। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসহায় সুরাকার জন্য দোয়া করলেন। মুক্তি পেয়ে সুরাকা ফিরে গেল এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও হযরত আবূ বকরের অন্বেষণকারী দের যাকেই সামনে পেল তাকেই এ বলে ফিরিয়ে দিল যে, এদিকে তাদের কোন সন্ধান নেই।
উপরোক্ত ঘটনার সাথে হযরত মুসা (আঃ) এর একটি মু’যিযার মিল পাওয়া যায়। বায়জীভসহ অন্যান্য কিতাবে হযরত মূসা (আঃ) এর ঐ মু’যিযার ঘটনায় বলা হয়েছে দুরাচার কারুণ বিবিধ উপায়ে হযরত মূসা (আঃ) কে জ্বালাতন করত। কিন্তু কারুন যেহেতু তাঁর চাচাত ভাই ছিল তাই তিনি তার সকল অপরাধ ক্ষমার চক্ষে দেখে আসছিলেন।
সম্পদের উপর জাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) কারুণকে বললেন, তুমি হাজার দেরহামের বরাবরে মাত্র এক দেরহাম জাকাত আদায় কর। কারুণ দেখল যে, এ হিসেবে জাকাত আদায় করলেও তাঁর ভান্ডার থেকে বিপুল সম্পদ জাকাতের খাতে চলে যাবে। সুতরাং সে টাল-বাহানা ও কূট-কৌশলের আশ্রায় নিল এবং হযরত মূসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। বনী ইস্রাইলকে সে উৎসাহিত করে লাগল যেন তারা হযরত মূসার ধর্মীয় বিধানের উপর থেকে তাদের সামর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এক পর্যয়ে সে একজন নষ্ট মহিলাকে বহু অর্থের বিনিময়ে হযরত মূসা (আঃ) এর নামে কলঙ্ক লেপনের জন্য রাজী করিয়েছিল।
একবার হযরত মূসা (আঃ) ঈদের নামাযের পূর্বে খোতবা প্রদান করছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি চুরির অপরাধে হস্ত কর্তন এবং ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের বিধানের উল্লেখ করলেন। এ সুযোগে কারুণ বলে উঠল, আপনি নিজেই অপরাধ করলে তার শাস্তি কি হবে? উত্তরে তিনি বললেন, আমাকেও একই শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। দুরাচার কারুণ এবার বলল, বণী ইস্রাইলের অমুক মহিলার সাথে আপনার অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ আছে। হযরত মূসা (আঃ) ঐ মহিলাকে ডেকে এনে বললেন, তুমি আল্লাহর নামে কসম করে সত্য প্রকাশ কর। উত্তরে সে মহিলা জানাল, আপনি আল্লাহর রাসূল! কারুণ আমাকে অর্থের বিনিময়ে আপনার নামে কলঙ্ক রটাতে সম্মত করিয়াছিল।
এ ঘটনার পর হযরত মূসা (আঃ) সেজদায় পড়ে কারুণের বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন, সাথে সাথে আল্লাহ পাক ওহীর মাধ্যমে হযরত মূসা (আঃ) কে জানালেন, হে মূসা! জমিনকে আপনি আপিনার অনুগত করে দিলাম। আপনি তাকে যা আদেশ করবেন সে তাই পালন করবে। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ পাওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) জমিনের উপর হুকুম জারী করে বললেন, হে জমিন! “কারুণকে পাকড়াও কর” সাথে সাথে কারুণের উভয় পা হাটু পর্যন্ত জমিনের মধ্যে ঢুকে গেল। হযরত মূসা (আঃ) পুনরায় জমিনকে একই আদেশ করলেন। জমিন এবার কারুণের কোমর পর্যন্ত গিলে ফেলল। পুনশ্চঃ তিনি ঐ একই নির্দেশ দিলে জমিন তাকে গলা পর্যন্ত গিলে ফেলল। হযরত মূসা (আঃ) চতুর্থ ও শেষ বারের মত জমিনকে হুকুম দিলেন, “হে জমিন! “কারুণকে গ্রাস কর” আল্লাহর হাবীবের আদেশে জমিন এবার কারুণের আপাদ মস্তক গিলে ফেলল।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলঃ হযরত মূসা (আঃ) এর বিনয় নির্দেশে জমিন যখন থেকে কারুণকে গিলতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই সে অনুনয় বিনয় করে মুক্তির নিবেদন করেছিল। কিন্তু হযরত মূসা (আঃ) তার নিবেদনে সাড়া দেননি। এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ পাক ওহীর মাধ্যমে হযরত মূসা (আঃ) কে বললেন, হে মূসা! কারুণ আপনার নিকট বহুবার মুক্তির নিবেদন করেছে; আমার নিকট সে একবার ক্ষমা প্রার্থনা করলে আমি টা কবুল করতাম।
উক্ত ঘটনার পর বণী ইস্রাইলের লোকেরা অপ-প্রচারে লপ্ত হল যে, হযরত মূসা (আঃ) কারুণের সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যই তাকে ভূগর্ভে প্রেরিত করেছে। তাদের এ প্রচারণার জবাবে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন যেন কারুণের প্রাসাদসহ তার যাবতীয় বিষয় সম্পত্তি ভূগর্ভে ধ্বসে যায়। আল্লাহ পাক সাথে সাথে তাঁর দোয়া কবুল করলেন।
উপরোক্ত ঘটনার আলোকে কারুণ ও সুরাকার ঘটনারদ্ব্যের তুলনামূলক পর্যোলোচনা করে দেখা যাক।
উপরোক্ত দু’টি ঘটনায় নিঃসন্দেহে মু’জিযা আমাদের পর্যালোচনা হলঃ দুটি ঘটনায় প্রতিপক্ষের কোন নবী অগ্রগামী ছিলেন?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বদ দোয়ার কারণে সুরাকার ঘোড়ার উভয় পা যখন ভূগর্ভে ঢুকে যায় তখন সে বিনয়ের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহায্য প্রার্থনা করল। তার জন্য শুধু যে উপস্থিত বিপদ মুক্তির জন্যই দোয়া করলেন তাই নয়, বরং তাঁর জন্য স্থায়ী নিরাপত্তার গ্যরান্টি দিয়ে বললেন, তুমি কি বলতে পার, সম্রাট কিসরার হাতের কস্কন যখন তোমার হস্তে পরানো হবে তখন তোমার উৎফুল্ল চিত্তের অনুভূতি কেমন হবে?
পরবর্তীতে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর শাসনামলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ ভবিষ্যদ্বাণীটি পূর্ণ হয়। পারস্য বিজয়ের পর সম্রাট কিসরার হাতের কস্কন সুরাকাকে পরানো হয়।
কিন্তু কারুণ হযরত মূসা (আঃ) এর নিকট কাতর নিবেদন করলেও তিনি তাকে ক্ষমা করেননি। কাজেই দেখা গেল, প্রতিপক্ষের উপর দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে রাহমাতুল্লিল আলামীনই আগ্রগামী ছিলেন।