মসজিদে নববী-শেষ পর্ব
মসজিদ নির্মাণ করার সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার মসজিদের ছাউনী হযরত মূসার মসজিদের ছাউনীর ন্যায় হওয়া চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মূসার ছাউনী কিরূপ ছিল? জিব্রাইল (আঃ) বললেন, মূসা (আঃ) দাঁড়ালে ছাদ তার মাথায় লাগত। আপনিও অনুরূপভাবে ছাউনী দিবেন।
রাসূল (সাঃ) তাই করলেন। মসজিদ নির্মিত হল। পাথরের দেয়াল, খেজুর গাছের খুঁটি। মাটির ভিট এবং খেজুর পাতার ছাউনী। রৌদ্রের সময় রৌদ্রে এবং বৃষ্টির সময় পানি পড়ত। মাটি কাদা হয়ে যেত। একটি কুড়ে ঘরের ন্যায় মসজিদ গৃহটি দিনের বেলায়ও অন্ধকার থাকত। হযরত তমীমদারী (রাঃ) মুসলমান হওয়ার পর মসজিদে নিয়মিত তেলের বাতির ব্যবস্থা করলেন। তাতে হযরত রাসূল (সাঃ) অতিশয় আনন্দিত হয়ে বললেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর ঘরকে আলোকিত করেছ সে রূপ আল্লাহ তোমাকেও আলোকিত করুক।
কিছুদিন পর মসজিদের ভিটায় কাকর বিছাইয়ে দেয়া হল। মসজিদের তিনটি দরজা ছিল। একটি দরজার নাম বাবে রহমত দ্বিতীয়টির নাম ছিল বাবে জিব্রাইল এবং তৃতীয়টি পশ্চাৎ দিকে ছিল। রাসূলে পাক (সাঃ) বাবে জিব্রাইল দ্বারা মসজিদে প্রবেশ করতেন। তখন বায়তুল মুকাদ্দাস কিবলা ছিল। হিজরতের ষোল মাস পরে রজব মাসের পনের তারিখ সোমবারে বায়তুল্লাহর দিকে কিবলা ফিরিয়ে দেয়া হয়।
খায়বার বিজয়ের পর সাত হিজরিতে উক্ত মসজিদ বৃদ্ধি করা হয়। হযরত ওসমান (রাঃ)-এর যুগে পুনরায় মসজিদ বৃদ্ধি করা হয় এবং কারুকার্য খচিত পাথর দ্বারা তাকে সুশোভিত করা হয়। প্রস্তরের স্তম্ভ ও প্রাচীর এবং শাল কাঠ দ্বারা ছাদ নির্মাণ করা হয়। ইসলামের রওনক বৃদ্ধিই ছিল তার উদ্দেশ্য। মসজিদে নববী পৃথিবীতে চার নম্বরের মসজিদ এক নম্বর মসজিদ বায়তুল্লাহ। দু’নম্বর বায়তুল মুকাদ্দাস। তিন নম্বর মসজিদে বনী ছালমা। চার নম্বর মসজিদে নববী। তবে ফজিলতের দিক দিয়ে তা দু’নম্বর। বায়তুল্লাহ শরীফে এক রাকাতে এক লাখ রাকাতের সওয়াব এবং মসজিদে নববীতে পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়।
মসজিদ নির্মাণ কার্য সমাধান করার পর উম্মাহাতুল মুমিনীনের জন্য কাঁচা ইট দ্বারা হুজরা নির্মাণ করলেন।
সাত হাজার প্রশস্ত ও দশ হাত দীর্ঘ হুজরাসমূহ তৈরি করা হয়েছে। হযরত আয়েশার হুজরা মসজিদের সংলগ্ন ছিল এবং অপরাপর হুজরা তার পর ছিল।
মদিনায় পৌঁছে স্থায়ীভাবে মনজিল করার পর রাসূল (সাঃ) তাঁর পরিবারকে মক্কা হতে মদীনায় আনার জন্য হযরত যায়েদকে দু’টি উট ও পাঁচশত দিরহাম এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে মক্কায় প্রেরণ করেছিলেন। আবু রাফে এবং আবদুল্লাহকে তাঁর সঙ্গে দিলেন এবং পথ প্রদর্শক হিসাবে আবদুল্লাহ বিন আরিকাতকে দিলেন। হযরত ফাতিমা, হযরত উম্মে কুলসুম, হযরত আয়েশা, হজরত সওদা, উম্মে আইমান, উসামা বিন যায়েদ, আসমা, আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের, হযরত আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারবর্গ সকলে হজরত আবদুল্লাহ বিন আবি বকরের সঙ্গে মদীনায় আসলেন। হযরত রোকেয়া তখন হযরত ওসমানের সঙ্গে হারলে ছিলেন এবং জয়নাল বিনতে রাসূল কাফের স্বামীর অধীনে ছিলেন। হিজরতের অনুমতি না পেয়ে তারা মক্কায় রয়ে গেলেন এবং বদরের যুদ্ধের পর হিজরত করেন। প্রায় এক বছর আবু আইয়ুবের গৃহে অবস্থান করার পর রাসূল (সাঃ) মসজিদ সংলগ্ন হুজরায় চলে যান।