মদিনার পথে রাসূল (সাঃ)-পর্ব ২
মদিনার পথে রাসূল (সাঃ)-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ পাক জমীনে আপনার আদেশের অধীনে করে দিয়েছেন। যা আদেশ করবেন, জমীন তাই শুনবে। রাসূল (সাঃ) জমিনকে আদেশ করলেন, ছোরাকাকে গিলে ফেলার জন্য। যখন ছোরাকা সামনে চলছিল তখন হঠাৎ তার ঘোড়াটির পা জমীনে ধ্বসে যায়। ছোরাকা বুঝতে পারল রাসূল (সাঃ)-এর বদদোয়া তার উপর পড়েছে। সে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল, আপনারা আমাকে কোন প্রকার সন্দেহ করবেন না। আমি কোন ক্ষতি করব না। অতঃপর সে রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে পৌঁছলে, সমস্ত ঘটনা খুলে বলল এবং বলল যে, আমার পক্ষ হতে এ মাল আছবাব আপনার খেদমতে পেশ করছি।
তার বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করে দেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত তোমার মাল দৌলত আমি গ্রহণ করতে পারি না। ছোরাকা বলল, আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে যে, একদিন আপনার তাওহীদ বাণী জয়যুক্ত হবে এবং সমগ্র আরব-আজম আপনার নিকট মস্তক নত করবে। আপনি যে দিন শক্তিলাভ করবেন সে দিন যেন আমি নিরাপদ থাকতে পারি সেজন্য আমাকে একটি আমান নামা লিখে দিন।
রাসূল (সাঃ) আমের বিন ফুহায়রার দ্বারা চামড়ার টুকরায় তাকে অভয়পত্র বা আমান নামা লিখে দিয়ে বিদায় করলেন।
রাসূল (সাঃ) তার ক্ষুদ্র কাফেলাকে সঙ্গে নিয়ে রাত্র নিশীতে অবিরাম পথ চলতে লাগলেন। পথিমধ্যে এক জায়গায় একটি প্রকাণ্ড পাথরের ছায়ায় অবতরণ করলেন। হযরত ছিদ্দিকে আকবর (রাঃ) তাঁর কম্বলখানা বিছিয়ে দিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর উপর শয়ন করলেন। যেহেতু তিনি খুব পরিশ্রান্ত ক্লান্ত তাঁর ঘুম এসে গেল।
তখন একজন বকরী চারণকারীও সে প্রস্তরের ছায়ায় আশ্রয় নিল। তাঁর অনুমতিতে আবু বকর একটি একটি বকরীর দুধ দোহন করে রাসূল (সাঃ) কে পান করার জন্য রেখে দিলেন। তখন বেলা দ্বিপ্রহর প্রচণ্ড রৌদ্রের তাপ। রাসূল (সাঃ) জাগ্রত হয়ে তা হতে পান করলেন এবং আবু বকর (রাঃ) কে দিলেন।
সূর্যের তাপ কমে যাওয়ার পর আবার যাত্রা আরম্ভ হল। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর তাঁদের ক্ষুধা তৃষ্ণা হল। তাঁর উম্মে মাবদ নামক জনৈকা মহিলার গৃহে অবতরণ করলেন। মহিলাটি যদিও দানশীলা ছিল কিন্তু সেদিন মেহমানদারী করার মত তাঁর নিকট কিছুই ছিল না। তবে তাঁর গৃহের আঙ্গিনায় একটি দুর্বল ও অল্প বয়সের বকরী ছিল।
রাসূল (সাঃ) বললেন, অনুমতি দিলে আমি তা দোহন করতে পারি। উম্মে মাবাদ বলল যে, তা দুধ দেয়ার মত বকরী নয়। একদিকে তা অল্প বয়সের অপর দিকে তাঁর এত দুর্বল যে, হেটে চারণ ভূমিতে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং অতীতে কখনও তার বাচ্চা হয় নি। রাসূল (সাঃ) তার দুধে হাত দেয়া মাত্র ঘন দুধে ভরে গেল।
এত দুধ আসল যে, কাফেলার সকলে ও উম্মে মাবাদ এবং প্রতিবেশী সকলে পান করল। কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করার পর আবার দোহন করে সকলকে পান করিয়ে এবং নিজেও পান করে পুনরায় ভ্রমণ আরম্ভ করলেন। সন্ধ্যায় উম্মে মাবাদের স্বামী গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে সমস্ত ঘটনা জানতে পারলেন। তিনি বললেন, হায়! ইনিই তো কোরাইশদের মধ্যে প্রেরিত শেষ নবী। আমি উপস্থিত থাকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনতাম। অবশ্য পরে তাঁরা স্বামী স্ত্রী উভয়ে মুসলমান হয়েছেন। ঐ দিন হতে বকরীটি অত্যাধিক দুধ দিতে আরম্ভ করল। সকাল বিকাল দু’বার দোহন করতে হত এবং হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)-এর জমানা পর্যন্ত জীবিত ছিল।