মক্কা বিজয়ের ঘটনা – ৮ম পর্ব

মক্কা বিজয়ের ঘটনা ৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত আব্বাস (রাঃ) বলিলেন, এই যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন কালোবর্ণের দলের সহিত যাইতেছেন। এইদলে মুহাজির ও আনসারগণ রহিয়াছেন। ছোট বড় বহু ঝাণ্ডা পরিলক্ষিত হইতেছে। প্রত্যেক আনসারী বীরের হাতে একটি বড় ও একটি ছোট ঝাণ্ডা শোভা পাইতেছিল। লোহার বর্ম ও শিরস্ত্রাণের দরুন তাহাদের চোখ ব্যতীত কিছুই দেখা যাইতেছিল না। হযরত ওমর (রাঃ) আপাদমস্তক লোহার পোশাকে আবৃত ছিলেন। তিনি উচ্চ ও গুরুগম্ভীর আওয়াজে বাহিনীকে সুশৃঙ্খলরূপে পরিচালনা করিতেছিলেন। আবু সুফিয়ান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আবুল ফযল, উচ্চ আওয়াজে কথা বলিতেছে, লোকটি কে? হযরত আব্বাস (রাঃ) বলিলেন, ইনি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)। আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলিলেন, খোদার কসম, একসময় বনি আদি (অর্থাৎ হযরত ওমর (রাঃ) এর বংশ) নিতান্তই কমসংখ্যক ও দুর্বল ছিল। এখন তাহারা বেশ উচ্চসম্মান লাভ করিয়াছে। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান! আল্লাহ্‌ তায়ালা যাহাকে যেইভাবে ইচ্ছা করেন উচ্চতর মর্যাদা দান করেন।

হযরত ওমর (রাঃ) সেই সমস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাহাদিগকে ইসলাম উচ্চ মর্যাদার অধিষ্ঠিত করিয়াছে।

বর্ণনাকারী বলেন, এই বাহিনীতে দুই হাজার বর্ম পরিহিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন ঝাণ্ডা হযরত সা’দ ইবনে ওবাদাহ (রাঃ) এর হাতে দিয়াছিলেন। তিনি ঝাণ্ডা হাতে বাহিনীর অগ্রভাগে চলিতেছিলেন। হযরত সা’দ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঝাণ্ডা হাতে আবু সুফিয়ান (রাঃ) এর নিকট পৌছিলেন, তখন তিনি তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান, আজকের দিন রক্তারক্তির দিন। আজকের দিনে (মক্কার) হুরমত রহিত করা হইবে। আজ আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরাইশকে অপদস্থ করিবেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হইয়া আবু সুফিয়ান (রাঃ) এর কাছাকাছি পৌছিলে তিনি তাহাকে ডাকিয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি নিজ কওমের লোকদের কতল করিবার আদেশ দিয়াছেন? সা’দ এবং তাহার সঙ্গীগণ আমার নিকট দিয়া অতিক্রমকালে বলিয়া গিয়াছেন যে, আজকের দিন রক্তারক্তির দিন। আজকের দিনে (মক্কার) হুরমত রহিত করা করা হইবে। আজকের দিনে আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরাইশকে অপসস্থ করিবেন। আমি আপনার কওমের ব্যাপারে আপনাকে আল্লাহ্‌র দোহাই দিতেছি।

আপনি সকল মানুষ অপেক্ষা নেক ও সর্বাপেক্ষা সৎসম্পর্কস্থাপনকারী। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা সা’দ সম্পর্কে আশঙ্কা করিতেছি যে, তিনি কোরাইশের উপর হামলা না করিয়া বসেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান, আজকের দিন অনুগ্রহের দিন। আজকের দিন আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরাইশকে সম্মান দান করিবেন।

বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সা’দ (রাঃ) কে অপসারণপূর্বক তাহার পুত্র কায়েস (রাঃ) এর নিকট ঝাণ্ডা হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেন। তাঁহার এই নির্দেশের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আপন পুত্রের নিকট ঝাণ্ডা হস্তান্তরের দরুন হযরত সা’দ (রাঃ) এর অন্তরে ঝাণ্ডা হারাইবার ক্ষোভ থাকিবে না। কিন্তু হযরত সা’দ (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ হইতে কোন নিদর্শন ব্যতীত ঝাণ্ডা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানাইলেন। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পাগড়ি মোবারক তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দিলেন। হযরত সা’দ (রাঃ) উহা চিনিতে পারিলেন এবং নিজ পুত্র হযরত কায়েস (রাঃ) এর নিকট ঝাণ্ডা দিয়া দিলেন। (বিদায়াহ)

মক্কা বিজয়ের ঘটনা নবম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।