মক্কা বিজয়ের ঘটনা – ৩য় পর্ব
মক্কা বিজয়ের ঘটনা – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু সুফিয়ান আমার পিছনে চড়িয়া বসিল এবং তাঁহার দুই সঙ্গী ফিরিয়া গেল। আমি তাহাকে লইয়া দ্রুত চলিলাম। পথে মুসলিম বাহিনীর স্থানে স্থানে জ্বালানো আগুনের পাশ দিয়া অতিক্রম কালে তাহারা জিজ্ঞাসা করিতেছিল যে, কে যায়? পরক্ষণেই তাহারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খচ্চর দেখিয়া বলিতেছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা তাঁহার খচ্চরে চড়িয়া যাইতেছেন।
এমনিভাবে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর আগুনের পাশ দিয়া অতিক্রমকালে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কে এই লোক? তারপর তিনি আমার নিকট উঠিয়া আসিলেন এবং আবু সুফিয়ানকে খচ্চরের পিছনে দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন, আবু সুফিয়ান, আল্লাহ্র দুশমন! আল্লাহ্ তায়ালাই জন্যই সকল প্রশংসা যিনি কোনরূপ পূর্ব প্রতিশ্রুতি ও শর্ত ব্যতিরেখেই তোমাকে আয়ত্তের মধ্যে আনিয়া দিয়াছেন। এই বলিয়া তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে দৌড়াইতে লাগিলেন।
আমি খচ্চরকে জোরে চালাইলাম এবং আরোহী ব্যক্তি যেমন পায়দলের উপর অগ্রগামী হয় তেমনি আমি তাঁহার পূর্বেই পৌছিয়া গেলাম। খচ্চরের উপর হইতে লাফাইয়া নামিয়া দ্রুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পৌছিয়া গেলাম। ইতিমধ্যে হযরত ওমর (রাঃ) ও সেখানে পৌছিয়া গেলেন এবং বলিলেন, ইয়া রাসূল্ললাহ! এই দেখুন আবু সুফিয়ান। কোনরূপ পূর্ব প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি ব্যতিরেকেই আল্লাহ্ তায়ালা তাঁহার উপর আয়ত্ত দান করিয়াছেন।
অনুমতিদান করুন, আমি তাঁহার গর্দান উড়াইয়া দেই। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি তাহাকে আশ্রয় প্রদান করিয়াছি। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসিয়া বলিলাম, না, খোদার কসম, আজকের রাত্রিতে আমি একাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত কথাবার্তা বলিব। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) আবু সুফিয়ানের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিতে লাগিলেন। আমি বলিলাম, থাম, হে ওমর! খোদার কসম, এই ব্যক্তি যদি (তোমার গোত্র) বনি আদি ইবনে কা’বের কেহ হইত তবে তুমি এরূপ বলিতে না। কিন্তু সে বনি আব্দে মানাফের লোক বলিয়া তুমি এরূপ বলিতেছ।
হযরত ওমর (রাঃ) (এই কথা শুনিয়া) বলিলেন, থামুন, হে আব্বাস! খোদার কসম, আপনার ইসলাম গ্রহণের দিন আমি যে পরিমাণ আনন্দিত হইয়াছি সেদিন আমার পিতা ইসলাম গ্রহণ করিলেও আমি এত আনন্দিত হইয়াছি সেদিন আমার পিতা ইসলাম গ্রহণ করিলেও আমি এত আনন্দিত হইতাম না, কারণ আমি জানি যে, আপনার ইসলাম গ্রহণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ অপেক্ষা অধিক প্রিয়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, হে আব্বাস, তুমি এখন তাহাকে তোমার তাবুতে লইয়া যাও। সকালে আমার নিকট লইয়া আসিও। অতএব আমি তাহাকে আমার তাবুতে লইয়া আসিলাম এবং রাত্রে সে আমার নিকট রহিল। পরদিন সকালে আমি তাহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট লইয়া গেলাম। তিনি আমাকে দেখিয়া বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান, তোমার ভাল হোক! তোমার কি এখনও এই সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আসে নাই যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই? আবু সুফিয়ান বলিলেন, আমার পিতামাতা আপনার উপর কোরবান হউক! আপনি কতই না সম্মানিত, কতইনা ধৈর্যশীল, আর কতইনা উত্তম সম্পর্ক স্থাপনকারী! এখন ত আমার দৃঢ়বিশ্বাস হইয়া গিয়াছে যে, যদি আল্লাহ্র সহিত আর কোন মা’বুদ শরীক থাকিত তবে অবশ্যই আমার কোন কাজে আসিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান!
তোমার ভাল হোক! এখন কি তোমার সময় আসে নাই যে, আমাকে আল্লাহ্র রাসূল বলিয়া বিশ্বাস করিবে? আবু সুফিয়ান বলিলেন, আমার পিতামাতা আপানার উপর কোরবান হউক! আপনি কতই না ধৈর্যশীল, কতইনা সম্মানিত, আর কতইনা (আত্মীয়তার) সম্পর্ক স্থাপনকারী। এই ব্যাপারে এখনও মনে কিছুটা খটকা রহিয়াছে। হযরত আব্বাস (রাঃ) বলিলেন, হে আবু সুফিয়ান, তোমার নাশ হোক! তোমার গর্দান উড়াইয়া দেওয়ার আগেই মুসলমান হইয়া যাও এবং সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই, আর হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিব ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল। অতএব আবু সুফিয়ান কলেমায়ে শাহাদাত পড়িয়া মুসলমান হইয়া গেলেন।