মক্কা এবং তায়েফে চরম সংকট-১ম পর্ব
আবু তলেবের মৃত্যুর পর রাসূল (সাঃ) যখন দেখলেন কোরাইশগণের শত্রুতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা মূর্তি পূজা বর্জন করা তো দূরের কথা বরং তৌহীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠল এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে পূর্বের চেয়ে অধিক পরিমাণে কষ্ট যাতনা দিতে লাগল, তখন রাসূল পাক (সাঃ) স্বীয় আজাদ করা গোলাম করা জায়েদ বিন হারেছাকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার উপকণ্ঠে তাবলীগে ইসলামের জন্য রওয়ানা হয়ে যান। সর্বপ্রথম বনু বকরের নিকট উপস্থিত হয়ে সাহায্য সহানুভূতি করার পরিবর্তে তারা নানা প্রকার গালি গালাজ ও অসহনীয় কষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছে। অতঃপর রাসূল (সাঃ) কাহতান কওমের নিকট যেয়ে ইসলামের সৌন্দর্যও তার নেক পরিণামের কথা তাদেরকে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে বলেন। কিন্তু তারাও বনু বকরের ন্যায় অস্বীকার করল। তারপর তিনি মক্কা হতে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তায়েফে বনু ছাকীফের নিকট ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চলে যান।
তায়েফবাসীগণ মুসাফির মেহমানের সম্মান করার পরিবর্তে অপমানজনক ব্যবহার করল। তাঁকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সফরের ক্লান্তি দূর করার সময়টুকুও দেয়া হল না। বরং তাঁকে অতি কর্কশ ভাষায় বলা হল যদি ভাল চাও তাহলে সত্বর এ স্থান ত্যাগ কর। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নৈরাশ হয়ে দুঃখভরা হৃদয়ে ফিরে এলেন।
এদিকে তারা শহরের গুণ্ডাশ্রেণী ও ছেলেদেরকে লেলিয়ে দিল যেন পাথর মেরে তাঁকে শেষ করে দেয়া হল। যখন তিনি শহর হতে বের হলেন তখন চতুর্দিকে শুধু বিপদ আর বিপদই দেখতে পান। যেদিকে তাকান সেদিকেই দুশমনের চেহারা দেখা যায়। চতুর্দিক হতে পাথরের বারিবর্ষণ শুরু হয়ে যায়। একদিক হতে পাথর এসে আঘাত হনলে তিনি অন্য দিকে যাওয়ার জন্য মুখ করেন তখন সেদিক হতেও অনুরূপ পাথরের বর্ষণ হতে থাকে। যায়েদ বিন হারেছা সাধ্য পরিমাণ তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেন। নূর নবীর নূর বদনে পাথরের আঘাত যেন না পড়ে সে জন্য তিনি পাথরের সামনে নিজ দেহকে ঢাল সরূপ পেতে দেন। কিন্তু কি হবে?
একদিক হতে পাথর আসলে কিছুটা সম্ভব হত। চতুর্দিক হতে পাথর বর্ষণ হচ্ছে। যায়েদের দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল এবং তার দেহকে অতিক্রম করে নূরবদনকে রক্তাক্ত করে ফেলল। হযরত রাসূল (সাঃ)-এর সর্ব অঙ্গ জখম হ্যে গেল। তদুপুরি জনৈক কাফেরের একটি প্রস্তর তাঁর পা মুবারকে ভীষণ আঘাত হানল। ফলে রক্তধারা ঝর্ণার ন্যায় প্রবাহিত হতে লাগল। জুতার মধ্যে রক্ত জমাট হয়ে গেল। তিনি একটি আঙ্গুর বাগানের ছায়ায় বসে পড়লেন। বাগানটি ছিল ওতবা ও শায়বার।