ভূত ধরলেন বিনোদবিহারী — উল্লাস মল্লিক-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বিনোদবিহারী দৌড়ে গেলেন; ব্যাগ থেকে লম্বা একটা কন্টেনার বের করে অ্যান্টিভ্যানিশিং-ম্প্রে ফসফস করে ছিটিয়ে দিলেন ভূত দুটোর গায়ে। সাতাশরকম জড়িবুটির সঙ্গে ওঝাদের হাঁচি আর কাপালিকের হাই মিশিয়ে, তারপর তার মধ্যে দিয়ে আলফা, বিটা আর গামা রে পাস করিয়ে, তৈরি এই প্রে সম্প্রতি উবুন্ডুর এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন। এর এমনই আশ্চর্য গুণ যে, ভূতের গায়ে প্রে করে দিলে তার চব্বিশ ঘণ্টা হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়।

গোবিন্দলাল চলে এসেছেন কাছে। ব্যাগ থেকে একটা থলে বের করে ভূত দুটোকে বিনোদাবিহারী ভরে ফেলেন তার

মধ্যে। গোবিন্দলাল বললেন, সাবধান, বাচ্চা ভূত কিন্তু খুব কামড়ায়।’

বিনোদবিহারী বললেন, চব্বিশ ঘণ্টা ওরা কিছু করতে পারবে না।’

গোবিন্দলাল বললেন, কী বলেছিলাম না আপনাকে, আছে এখানে…। ”

গোবিন্দলালের হাত দুটো বাঁকিয়ে বিনোদবিহারী বললেন, ‘মেনি মেনি থ্যাঙ্কস। আপনার ঋণ কোনও দিনও ভুলব না।’ ঠিক তখন কুঁই-কিক, কুঁই-কিক করে করুণ একটা কান্নার মতো শব্দ শোনা গেল।

জি ডি ডি সিগনাল দিতে শুরু করেছে আবার। বিনোদবিহারী তাড়াতাড়ি ম্যাজিক-টর্চের আলো ফেললেন শব্দ অনুসরণ করে। শব্দটা থেমে গেল, কিন্তু কিছু চোখেও পড়ল না। একটু পরে আবার অন্যদিক থেকে এল সেই কান্নার মতো শব্দ। এবারেও ম্যাজিক-টর্চ জেলে কিছু দেখতে পেলেন না বিনোদবিহারী।

গোবিন্দলাল বললেন, ‘এটা মনে হচ্ছে মা-ভূতটা। আপনি ঠিক করে ম্যাজিক-টর্চ ফেলে ধরে ফেলুন ওটাকে।

বললেন, ‘আসলে টর্চের চার্জটা কমে গিয়েছে। চার্জারটাও ভুলে ফেলে এসেছি কলকাতায়। মা-ভূতটা চালাক খুব, আলো ফেললেই চলে যাচ্ছে রেঞ্জের বাইরে।’

গোবিন্দলাল বললেন, তা হলে ?’ ‘তা হলে আর কী? বিনোদবিহারী বললেন ‘আমার দুটাে ভূত দরকার ছিল, পেয়ে গিয়েছি। কাজ মিটে গিয়েছে আমার। চলুন ‘

ঘুম ভেঙে গেল বিনোদবিহারীর। সবেমাত্র ঘুমটা এসেছিল, তখনই সেই কুই-কিক কান্নার শব্দ। কে যেন বাড়ির চারদিকে ঘুরে-ঘুরে কাঁদছে। কাল শুতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাড়ি ফেরার পর জনে-জনে থলের মুখ খুলে ভূত দেখাতে হল। বাড়ির বাচ্চারা তো আবার থলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আদরও করে দিল ভূতগুলোকে।

গোবিন্দলাল শুয়েছেন দিদিমার কাছে। অনেকদিন পর মামার বাড়ি এসেছেন, তাই দিদিমার কাছে শুয়ে ভূতের গল্প শোনার লোভ সামলাতে পারেন না। একা একটা ঘরে শুয়েছেন বিনোদবিহারী। মুখবন্ধ থলেটা রেখে দিয়েছেন খাটের নীচে। উঠে পড়লেন বিনোদবিহারী।

ম্যাজিক-টর্চটা নিয়ে বাইরে এলেন। টর্চের আলো ফেললেন চারিদিকে। আরও কমে গিয়েছে আলোর তেজ। সেই নিস্তেজ আলোয় কিছু দেখতে পেলেন না তিনি।

ঘরে এসে আবার শুয়ে পড়লেন বিনোদবিহারী। ঘুমটা সবে আসব-আসব করছে, আবার সেই করুণ কান্না !

‘ধুত্তোর,’ বলে উঠে পড়লেন তিনি।

সকালবেলা বিনোদবিহারীকে ঘুম থেকে তুললেন গোবিন্দলাল। বললেন, কী করি বলুন তো? দিদিমা খুব করে বলছেন আজ থেকে যেতে। রাতে মালপোয়া আর পুলিপিঠে করবেন।

বিনোদবিহারী একটা আড়মোড়া ভেঙে বললেন, মালপোয়া! আহা কী খেতে! কতদিন খাইনি। পুলিপিঠেও অবশ্য খারাপ লাগে না।’

মেঝের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন

গোবিন্দলাল, এ কী! ভূত কোথায়? বস্তার মুখ যে খোলা!”

বিনোদবিহারী বললেন, ‘ছেড়ে দিয়েছি।”

“ছেড়ে দিয়েছেন! অবাক হয়ে গোবিন্দলাল বললেন, ‘কেন ছেড়ে দিলেন কেন? এত কষ্টের জিনিস…?

একটা হাই তুলে বিনোদবিহারী বললেন, ‘ধুর! ঘুমের দফারফা করে দিচ্ছিল। আমার মশাই ঘুম না হলে মাথার ঠিক থাকে না। ঘুম জিনিসটা মালপোয়ার চেয়েও বেশি ভালোবাসি’

খুব অবাক চোখে বিনোবিহারীর দিকে তাকিয়ে রইলেন গোবিন্দলাল।

বিনোদবিহারী বললেন,‘কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদলে কি ঘুম হয়? কিন্তু মায়ের জাত যে! ঘ্যানঘ্যান করবেই। করতেই থাকবে। ঘুম, মালপোয়া যেমন ভালোবাসি, কান্না জিনিসটা তেমনই খারাপ বাসি আমি।

খু-উ-ব খারাপ বাসি। তাই ছেড়ে দিলাম ব্যাটাদের!

 

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!