গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
তারপর চারশো পঞ্চাশ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি ছোটালেন অমৃতসরের দিকে।
হার্ট-ব্যাঙ্কের পার্কিং জোনে গাড়ি পার্ক করে একটু এগোতেই প্রোফেসর গোবিন্দলাল বর্মনের সঙ্গে দেখা।
গোবিন্দলাল বর্মনের ওপর ভোঁদড়ের দায়িত্ব ছিল। যত দূর জানেন বিনোদবিহারী, গোবিন্দলাল লুপ্তপ্রায় বাংলাদেশি ভোঁদড় জোগাড় করে ফেলেছেন।
নিউজ চ্যানেলগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল সংবাদটা। কারণ আর কিছুই নয়, কয়েকটি বিতর্কিত প্রশ্ন উঠেছিল ভোঁদড় দুটোকে নিয়ে।
গোবিন্দলাল ভোঁদড় দুটোকে ধরেছিলেন আফ্রিকার জঙ্গল থেকে। প্রশ্ন উঠেছিল, আফ্রিকার জঙ্গলে বাংলাদেশি ভোঁদড় আসে কী করে? শেষে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল গেল, স্টিভ হ্যামিলটন নামে এক খামখেয়ালি সাহেব ছিলেন বহু বছর আগে।
জন্তু-জানোয়ার নিয়ে অদ্ভুত-অদ্ভুত পরীক্ষা চালাতেন।
যেমন কুমিরের জ্বর মাপতেন, বাঁদরের ব্লাডপ্রেশার দেখতেন, ছাগলের লিভার ফাং টেস্ট করতেন।
সেসব আবার তৎকালীন কিছু চ্যানেল প্রচারও করত। তা সেই সাহেব গবেষণার কাজে কটা বাংলাদেশি ভোঁদড় দেশে নিয়ে যান।
এই ভোঁদর দুটো তাদেরই সাক্ষাৎ বংশধর, এতদিন কোনওরকমে টিকেছিল ওখানে।
গোবিন্দলালকে দেখে কৌতুহল দমন করতে পারলেন না বিনোদবিহারী। বললেন, “আপনি এখানে যে! আপনারও হার্টের প্রবলেম নাকি?’
গোবিন্দলাল বললেন, “আমার নয়, মায়ের।’
‘আপনার মায়ের!’ একটু অবাক হয়ে গেলেন প্রোফেসর বিনোদবিহারী।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গোবিন্দলাল যা বললেন তার মর্মার্থ এই যে,
তিনি যখন ভোঁদড় ধরতে আফ্রিকায় গিয়েছিলেন তখন তাঁর মা বাড়িতে বসে চিন্তা করে-করে হার্টটাকে ড্যামেজ করে ফেলেছেন।
ওই দুর্গম জঙ্গলে ছেলে কী করছে, এই ছিল তার রাতদিনের চিন্তা। গোবিন্দলাল যত তাকে বোঝান যে, আফ্রিকার সে জঙ্গল আর নেই, সেখানেও এখন মানুষ বসতি গড়েছে, এমনকী বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌছে গিয়েছে। তা কে কার কথা শোনে! দিনরাত শুধু চিন্তা করেছেন ছেলের জন্য।
বিনোদবিহারী বললেন, ‘মায়ের মন তো, ছেলেপুলের জন্য আনচান করবেই।
যাক। আপনার আসল কাজ তো উদ্ধার হয়ে গিয়েছে। আমার যে এদিকে কী অবস্থা কী বলব!’
আপনার তো ভূত?
‘হ্যা,’ বিনোদবিহারী হতাশার সঙ্গে বললেন, ভূত বোধ হয় ভূ-ভারতে আর একটাও নেই। যে জিনিস নেই, সে জিনিস কেমন করে ধরে আনি বলুন তো? এদিকে মিউজিয়াম অথরিটি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, রোজ তাগাদা দিচ্ছে।’
একটু কী যেন চিন্তা করে গোবিন্দলাল বললেন, ‘আছে, ভূত আছে।’
‘কোথায়? খুব ব্যগ্র হয়ে বিনোদবিহারী জিগ্যেস করলেন।
গোবিন্দলাল বললেন, ‘আমার মামার বাড়ি বঁনগার দিকে। কিছুদিন আগে আমার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
ও বলল, ওখানে একটা পোড়ো বাড়িতে একদল ভূত এখনও আছে। তবে তারা খুবই ভিতু প্রকৃতির। ভয়টয় দেখানো দুরের কথা, নিজেরাই সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। জনসমক্ষে কখনও আসে না।
শুধু সুযোগ পেলে মাঝে-মাঝে গৃহস্থের বাড়ি থেকে মাছ ভাজাটাজা চুরি করে নিয়ে যায়।