ভূতের ডিগবাজি-শেষ পর্ব- মাহমুদ মেনন

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

রুশো বললো এটা কি হলো? ভূত ছানা বললো, খিঁদে পেঁয়েছে তোঁ তাঁই এঁকটুঁ খেঁয়ে নিলাম। ডিগবাজি খেলে তো ক্ষুধা আরও বাড়ে বোকা.. বললো রুশো। ভূত ছানা বললো না.. না.. ডিঁগবাঁজিও তোঁ এঁক ধঁরনের খাঁওয়া। খিঁদে পেঁলে আঁমি ডিঁগবাজি খাঁই।

আবার হেসে ফেললো রুশো। আর হঠাৎ করেই টের পেলো সশব্দে আবারও হিসু বের হচ্ছে। সম্বিত ফিরে পেলো, বুঝলো ভয়েই মাঝপথে আটকে ছিলো। এবার ভয় কিছুটা কাটতেই বাকিটা হয়ে গেলো।

হিসু শেষ করতেই ভূত ছানাটি বলে উঠলো… তুঁমি কিঁ এঁখনই ঘুঁমিয়ে পঁড়বে।

রুশো বললো কেনো? ভূত বললো না তোমার মাঁ আঁমার নামে গঁল্পে কঁত কিঁছু যেঁ বঁললো সেঁগুঁলো কঁতঁটা সঁত্যি তাঁ দেঁখঁবে না।

রুশো বললো মাতো বলেছে, এ ভূত শুধু গল্পেই থাকে সত্যিকারে কোনো ভূত নেই। আর তাছাড়া বাবাও বলেছে ভূত বলে কিছু নেই।

তাঁহলে আঁমি কেঁ? এ কথা বলেই ভূতের ছানাটি অদৃশ্য হয়ে গেলো। আবার পরক্ষণেই ফিরে এসে বললো.. এইযে দেখো আমি ছিলাম না… আবার এসে পড়েছি।

এসেই আবার দুটো ডিগবাজি খেলো।

আরে তুমি আবার ডিগবাজি খেলে যে.. কাণ্ডটা কি। ভূতছানা বললো.. খিদে পেলে খাবো না বুঝি?

এখনই না খেলে এরমধ্যেই আবার খিদে। বললো রুশো।

ভূতছানা বললো… আমার একটু বেশিই ক্ষিদে পায়। রুশো বললো.. ও..

মা যে বললো ভূতেরা অন্ধকার খায়.. তুমিও খাও নাকি। ভূতছানা বললো না.. শহরের ভেজাল অন্ধকার খেতে ভালো লাগে না। রাতে ঘুঁটঘুঁটে আঁধার না হলে খেয়ে মজা নেই। লোডশেডিং হলে মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়। তাও আজকাল কম হচ্ছে। আর তোমরা আবার জেনারেটর চালাও। ঝট করে বাতি জলে ওঠে। এসব চিন্তা করে নিজের বিকল্প খাবার হিসেবে ডিগবাজিই বেছে নিয়েছি।

ঠিক আছে তুমি ডিগবাজি খাও যত পারো.. আমি যাই ঘুমাতে।

না যেও না রুঁশোঁ.. তোমার সঙ্গে গল্প করে খুব মজা পাচ্ছি। আর তা ছাড়া বাথরুম ছেড়ে তুমি গেলে তুমি আর আমাকে দেখতে পাবে না। কারণ আজ আমার বাথরুমেই দর্শনরাত। তাইতো সেই রাত দশটা থেকে ভেন্টিলেটারে বসে আছি। তোমার যদি ঘুম ভাঙে সেই আশায়।

দর্শনরাতটা আবার কি জিনিস? হেসে বললো রুশো।

তুমি জানবে না, ভীষণ নিয়ম নীতির মধ্যে বড় হতে হয়। নড়চড় হলে মায়ের সে কি শাস্তি? সবচেয়ে বড় শাস্তি খেতে দেবে না।

তোমার তাতে চিন্তা কি? তুমি তো ডিগবাজি দিয়েই খেয়ে নিতে পারো।
আরে তার কি জো থাকে… হাত পায়ে মা এমন কিছু করে দেয় যে তুমি হাঁটতে পারবে, হাত নাড়াতে পারবে কিন্তু ডিগবাজি খেতে পারবে না।

তোমার মাতো ভীষণ খারাপ? বললো রুশো।

চেঁচিয়ে উঠলো ভূতছানা। বললো, না… আমার মাকে খারাপ বলবে না। নিয়ম-কানুন তো সবাইকেই মানতে হয়। তা না হলে কী আর ভূতের মতো ভূত হয়ে ওঠা যায়।

আবার হাসি পেলো রুশোর। মনে পড়লো সেদিন বাবা বলেছিলো, বাবা মায়ের কথা মতো চলো… মানুষের মতো মানুষ হও।

এভাবে নানা কথা চলতেই থাকলো ভূত ছানার সঙ্গে।

হঠাৎ বললো এবার চলি। তোমার সঙ্গে খেলার সময় শেষ।

কেনো থাকো না… বললো রুশো।

ভূত ছানা বললো.. নারে বাবা … তুমি কি আমার ডিগবাজি খাওয়া বন্ধ করতে চাও?

বলতে বলতেই গোটা তিনেক ডিগবাজি খেয়ে নিলো। লাফিয়ে উঠে গেলো ভেন্টিলেটারের কার্নিসে। কাচের ফাঁকা গলিয়ে বেরিয়ে গেলো মামদো ভূতের ছানা।

সকালে রুশোর যখন ঘুম ভাঙলো দেখলো মা.. বড় আপু ও কাজের মেয়ে রাহিলা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। রুশোর বুঝতে বাকি থাকলো না… হিসু করে গোটা বিছানা ভিজিয়েছে বলেই সবাই এভাবে মুখ টিপে হাসছে।

 

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!