ভিক্ষুকের দোয়ার বরকত

হযরত শিবলী (রহঃ) বলেন, একবার আমি এক গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম, এক অল্প বয়সী যুবক দুটি কবরের মাঝে বসে আছেন। যুবকের দেহটি একেবারেই শীর্ণ, পরনে ময়লা ও পুরাতন কাপড় এবং চুল এলোমেলো। হঠাৎ সে দুহাতে ধুলাবালি নিয়ে নিজের চেহারায় মেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নেড়ে কি যেন বলল, আমি দেখতে পেলাম, সাথে সাথে তার উভয় চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অতঃপর সে গভীর মনোযোগের সাথে দোয়া ও ইস্তেগফারে মশগুল হয়ে পড়ল।

যুবকের এ অবস্থা দেখে আমার মন ক্রমেই তার প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগল। আমি আমার যাত্রা স্থগিত করে তার সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে তার দিকে রওয়ানা হলাম। আমাকে আসতে দেখে নিজের আসন ছেড়ে একদিকে পালাতে লাগল। আমিও তার পেছনে পেছনে ছুটলাম। কিন্তু কিছুতেই আমি তার নাগাল পেলাম না। ক্রমেই যেন তার সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে লাগল। অবশেষে আমি চিৎকার করে বললাম হে আল্লাহর ওলী! তুমি আমার উপর রহম কর। তোমার চলার গতি একটু কমিয়ে দাও। যেন আমি তোমার সাক্ষাৎ পাই। সে আমার দিকে ফিরে বলল, আল্লাহর কসম, আমি এরূপ করব না। আমি আবার বললাম, আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি একটু দাঁড়াও। এবার সে ইশারা করে আমাকে জানাল সে দাঁড়াতে পারবে না। এবং মুখে বলল, আল্লাহ, আমি বললাম, হে যুবক! তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহর সাথে তোমার সম্পর্কের কিছু লক্ষণ দেখাও। সাথে সাথে সে চিৎকার করে আল্লাহ আল্লাহ বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ল।

হযরত শিবলী (রহঃ) বলেন, আমি ছুটে গিয়ে যুবকের গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম সে মৃত্যুবরণ করেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি মনে মনে বেশ পেরেশান হলাম এবং এ মুহূর্তে আমার কি করণীয় কি এ বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। পরে ভাবলাম, আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলে যে কোন সময় সে কোন মানুষের উপরই রহমত নাযিল করতে পারেন। অতঃপর لا حول ولا قوة الا بالله পাঠ করতে করতে যুবকের দাফন-কাফনের ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে এক গ্রামের ভেতর গেলাম পরে এসে দেখি লাশ নেই। পরে আমি আশেপাশে বহু খোঁজ করেও যুবকের লাশের কোন সন্ধান পেলাম না।

এবার আমি ভাবতে লাগলাম, আমি গ্রাম হতে ফিরে আসতে বিশেষ বিলম্ব হয়নি। এ অল্প সময়ের মধ্যে এসে কে যুবকের লাশ নিয়ে গেল। এমন সময় গায়েব হতে আওয়াজ এল, হে শিবলী যুবকের ব্যাপারে তুমি আর ভেবো না।

ইতোমধ্যেই ফেরেশতা তার দাফন কাফনের আয়োজন করে তোমাকে এ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দিয়েছে। তুমি তোমার সৃষ্টি কর্তার ইবাদতে মশগুল থাক এবং বেশী বেশী সাদকা করতে থাক। কেননা, এ যুবকও সারা জীবনে একটি মাত্র সাদকার কারণে এমন মর্যাদা লাগ করেছে যে ফেরেশতাদের দ্বারা তার দাফন কাফনের আয়োজন করা হয়েছে।

হযরত শিবলী (রহঃ) সেই আওয়াজের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর ওয়াস্তে যুবকের সেই সাদকার ঘটনা আমার নিকট বর্ণনা কর। গায়েব হতে পুনরায় আওয়াজ এল, হে শিবলী! এই যুবক প্রথম জীবনে একজন বড় ফাসেক, ব্যভিচারী ও নাফারমান ছিল। পরে আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে একটি স্বপ্ন দেখে তার মনে ভয় ও পেরেশানী সৃষ্টি হল। সে স্বপ্নে দেখল, তার পুরসাঙ্গ একটি অজগর সাপে পরিণত হতে তাকে ঘিরে ধরেছে। অতঃপর ঐ সাপের মুখ হতে নির্গত আগুনের স্ফুলিঙ্গ তার মুখের ভেতর ঢুকে তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলেছে।

উল্লেখিত স্বপ্ন দেখার পর তার মনে এমন ভয় ঢুকল যে, অতঃপর সে দুনিয়ার যাবতীয় সম্পর্ক ত্যাগ করে বনে জঙ্গলে গিয়ে ইবাদতে মশগুল হল। এভাবে সে ক্রমাগত বার বছর ইবাদতে বন্দেগী ও কান্নাকাটিতে পার করে দিল।

গতকাল তার নিকট এক ফকীর এসে খাবার চাইল। কিন্তু তার নিকট কোন খাবার ছিল না, তাই সে গায়েব জামাটি খুলে ফকীরকে দান করে দিল। প্রথম যেন ফকীরের বিশ্বাসই হচ্ছিল না এবং সে এতটা আশাও করেনি। এ দান পেয়ে সে এত খুশী হল যে, সাথে সাথে আকাশের দিকে হাত তুলে যুবকের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করল। আল্লাহ পাক যুবককে মাফ করে দিলেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।