ঘটনাটি ৩–৪ বছর আগে আমার মামার সঙ্গে ঘটেছিল। ঘটনাটি মামার ভাষায় শোনাচ্ছি।
তখন রাত ১টা বাজে। দোকান বন্ধ করব বলে উঠলাম। হঠাৎ মোবাইলে কল এলো। দেখলাম বন্ধু শাহীন ফোন করেছে। ভাবলাম, এত রাতে ফোন কেন? ফোন ধরতেই শুনতে হল দুঃসংবাদ—তার চাচা কিছুক্ষন আগে মারা গেছেন। জানাজা হবে পরের দিন সকালেই। এখন মসজিদে গিয়ে হুজুরদের বলতেই হবে যেন ফজরের সময় মাইকিং করা হয়।
ওর সঙ্গে যেতে পারব কিনা জানতে চাইল। আমি এক কথায় রাজি হলাম। আধ ঘণ্টার মধ্যে ওর বাসায় হাজির হলাম। তারপর দুজনে একসাথে বের হয়ে বিভিন্ন মসজিদে যেতে লাগলাম। তখন ৩টা বা ৩:৩০টা বাজে।
দুজনে এক মসজিদ থেকে বের হয়ে আরেক মসজিদের দিকে যাচ্ছিলাম। যেই মসজিদে যেতে হলে, মাঝখানে একটি ডোমপাড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
দুজনে ডোমপাড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বন্ধুর মন খারাপ, তাই সে কিছু বলছিল না। পাড়াটি অত্যন্ত নোংরা, রাস্তার পাশে কিছু দূরপরপর স্ট্রিট লাইটপোস্ট।
কিছুদূর এগোনোর পর অদ্ভূত অনুভূতি হল—মনে হলো, কেউ আমাদের আড়াল থেকে দেখছে। পরে জানলাম শাহীনও একই অবস্থা অনুভব করেছিল। অস্বস্তি কাটানোর জন্য দুজনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে চললাম।
রাস্তার একটা মোড় ঘুরতেই দেখি সামনে ১০–১২ বছরের একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে এত ছোট একটি ছেলে এখানে কী করছে? আমরা এগিয়ে গিয়ে বললাম, “এই, তোর বাড়ি কোথায়? এত রাতে এখানে কি করছ?” পিচ্চিটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে হাঁটা ধরল।
এরপর সে যা করল, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সে রাস্তার পাশের ড্রেনের দিকে এগিয়ে গেল এবং আস্তে আস্তে ড্রেনের মধ্যে পুরোপুরি ঢুকে গেল! আমরা সাথে সাথে দৌড়ে ড্রেনের কাছে গিয়ে উকি দিলাম। কিন্তু পিচ্চিটার ছায়াও দেখা গেল না। ড্রেনটা এত সরু যে কোনো ১০–১২ বছরের ছেলে সেটায় পুরোপুরি ঢুকতে পারে না।
রাস্তার স্ট্রীট লাইটের আলোতে পুরো দৃশ্য চোখে পড়ল। কিছুটা ধোঁকা লাগল। যাই হোক, পাত্তা না দিয়ে চলতে থাকলাম। অদ্ভূত অনুভূতিও রয়ে গেল।
আরেকটু এগোনোর পর, হঠাৎ একটা লাইটপোস্টের মাথার দিকে নজর গেল। যা দেখলাম, দম বন্ধ হয়ে গেল—পোস্টের মাথায় ঝুলছে সেই পিচ্চির লাশ!!! এবার বুঝলাম কিসের খপ্পরে পড়েছি। শাহীনও লক্ষ্য করেছে, তার পরের কথায় বোঝা গেল। সে শুধু বলল, “দোস্ত, ভাগ।” দুজনে দৌড়ালাম। অনেকদূর দৌড়ানোর পর থামলাম। মনে হলো, বেঁচে গেছি।
কিন্তু হঠাৎ শাহীনের চিত্কার। তার দিকে তাকাই—উপরের দিকে আঙুল দেখাচ্ছে। উপরের দিকে তাকাতেই দেহে কাঁপুনি ধরল। সেই পোস্ট, সেই লাশ! চারপাশও পরিচিত মনে হলো। কিছুক্ষণ আগেই এখান থেকে পালিয়েছিলাম।
মাটিতে ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনে ঘুরে দেখি, শাহীন মাটিতে পড়ে আছে। হঠাৎ বিদঘুটে হাসির শব্দ শুনে পোস্টের দিকে তাকাই—কল্পনাতীত দৃশ্য! পোস্টের মাথায় কোন লাশ নেই। তার নিচে দাঁড়িয়ে অট্টহাসি হাসছে পিচ্চিটা!
হঠাৎ সে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের মাথা ছিঁড়ে ফেলল। আলোতে স্পষ্ট দেখা গেল চারপাশে রক্ত ছিটকে পড়ল। কাটা মাথা হাতে ধরে আমাদের দিকে এগোতে লাগল। আমি সহ্য করতে পারলাম না। “আল্লাহ! আল্লাহ!” চিৎকার করতে করতে চেতনা হারালাম।
পরদিন যখন হুঁশ পেলাম, দেখি আমরা একটি মসজিদে আছি। পরে জানতে পারি, ফজরের সময় মসজিদে আসার পথে আমাদের পড়তে দেখে মুসল্লীরা আমাদের মসজিদে নিয়ে এসেছে। এটি সেই মসজিদ যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা রওনা হয়েছিলাম।
ইমাম সাহেবের কাছে সব বললে তিনি জানালেন, এটি খারাপ প্রকৃতির প্রেতের কাজ—যা মানুষের পথ ভুলিয়ে দেয় এবং ভয় দেখিয়ে ক্ষতি করে। তিনি রাতের বেলায় বাইরে থাকার নিষেধাজ্ঞা দিলেন। সেই কথা আজও মেনে চলি।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।