বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৫ম পর্ব
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাছাড়া তিনি একবার আমাদের গ্রামে তাশরীফ এনেছিলেন। তখন আমার গরিব কুঠিরে অনেক দিন কাটিয়েছিলেন। তখন তিনি আমাদের এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বহু মানুষকে তিনি দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং অসংখ্যক মানুষের রোগ ব্যাধির চিকিৎসা করছেন। এতে অত্র এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁর ভক্ত হয়ে আছে। তাঁর সাথে আমার যে ব্যক্তি গত সম্পর্ক ছিল তাতে তোমাকে আমি ভাইয়ের ছেলে মনে করতে পারি। আমি সে পুত্র ধরে আপনার নিকট একটা বিবাহের প্রস্তাব রাখতে চাই। আমাদের এলাকায় এক অপরূপ সুন্দরি ধর্মপরায়ণ এক যুবতি আছে। যার রুপটা এত প্রক্ষর যে , কোন মানুষ এক বার তাঁর দিকে তাকালে দ্বিতীয় বার না তাকিয়ে উপায় নেই। দ্বিতীয় যুবতি এক পিতার একটা মাত্র কন্যা। তাঁর মেষ ও উটের সংখ্যা কয়েক হাজার। জায়গা জমি, দালান – কোঠা ও সহায়-সম্পদ একজন রাজ অধিরাজের ন্যায় সীমাহিন। আপনি যদি তাকে কবুল মনে করেন তা হলে আপনি ভাগ্যবান হবেন আশা করি। সাধারণ লোকের পক্ষে তাকে শাদি করা সম্ভব নয়। একমাত্র আপনার মত লোকের পক্ষে এটা সম্ভব। লোকমান তনয় লোকটির প্রস্তাব শুনে বললেন, আমি এ বিবাহে রাজি নই। আমার পিতা এভাবে পথে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। একথা বলে লোকটি চলে গেল আর এক জন লোক এসে তাঁর সাথে দেখা করল। তখন লোকমান তনয় তাঁর নিকট প্রস্তাবিত কন্যার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। লোকটি বলল, হুজুর! আপনার নিকট যে সমস্ত খবর এসেছি তা সবি সত্য। তবে ইতোপূর্বে মেয়েটির নয় যায়গায় বিবাহ হয়েছিল। নয়জন স্বামী তাঁর বাশর রাতে মারা গেছে। এর প্রকৃত কারণ কি তা কেউ জানেনা। সে থেকে লোকে মেয়েটিকে রাক্ষুসে মেয়ে বলে ডাকে। দিনের বেলায় তাঁর নিকট অনেক লোকের ভিড় থাকে কিন্তু রাত্রি বেলায় কোন মানুষ তাঁর পাশে থাকে না। মেয়েটি সর্বদা কেঁদে কাটাচ্ছে। তাকে তাঁর স্বামী মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমি কিছু জানিনা। কোন স্বামীর কাছ আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমার ঘরে ঢোকার পরই তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যু বরণ করে। লোকমান তনয় লোকটির সমস্ত ঘটনা শুনে বৃদ্ধ চাচার নিকট গিয়ে বলল, বৃদ্ধ বললেন, হ্যাঁ ! তুমি এই মেয়েটি কে বিবাহ করতে পারবে। ইতোপূর্বের স্বামীগণ যেভাবে মৃত্যু বরণ করেছে তোমার সেরূপ মুত্যু বরণ করতে হবে না। আমি সে ঘটনা জানি। তোমার পিতার নিকট থেকেই যৎ কিঞ্চিত তালীম নিয়েছি। তুমি গিয়ে এ বিবাহতে রাজি তা জানিয়ে দাও। বাকি প্রয়োজনীয়ও ব্যাবস্থা আমি করব। লোকমান তনয় বলল, চাচা, আমার খুব ভয় হয়। বৃদ্ধ বললেন, কোন ভয় নেই, আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে কাজ করে যাও। হায়াতের মালিক যখন আল্লাহ তায়ালা তাহলে ভয় কি। যদি হায়াত রেখে থাকেন তাহলে মৃত্যু হবে না। আর যদি হায়াত না থাকে তাহলে যে কোন স্থানে গিয়ে তোমার মৃত্যু হবে। অতএব পিতার আদেশ ও আমার কথা অনুসারে কাজ কর। আল্লাহ তোমার হেফাজাতকারী।
বৃদ্ধআর কথায় লোকমান তনয় সাহস পেল। বিশেষ করে তাঁর পিতা বৃদ্ধর কথা মত চলার আদেশ দিয়েছে। তাই সে প্রথম দিনের আলাপকারী কে বলল, আমি বিবাহে রাজি আছি। আপনি কন্যা পক্ষে কে জানিয়ে বিবাহের ব্যবস্থা করুন। লোকটি লোকমান হাকিমের ছেলের মুখের কথা শুনে আনন্দে আত্নাহারা হয়ে গেল। সে সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির বাড়ীতে গিয়ে লোকমান হাকিমের ছেলের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দিল। মেয়েটি এ প্রস্তাব শুনে আনন্দে প্রস্তাবকারীর জড়িয়ে ধরে বলল, চাচা মিয়া! আপনি আমার পিতার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আমার পিতার অবর্তমানে আপনি আমার পিতা। আমার জীবনের উপর যে এক মহা দুর্যোগের ঘনঘটা চলেছে, তা আপনি সবই জানেন। পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা একই হয়ে গেছে। আমি কিছু দিন পূর্বে সিধান্ত নিয়েছিলাম যে, বাকি জীবনে আর কাউকে বিবাহ করব না। এখন আপনি যখন বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক লোকমান হাকিমের ছেলের সাথে আমার বিবাহ দিতে আশা করেছেন তখন আমার আর দ্বিমত নেই। কারণ আমার মহা বিপদের প্রতিকার হয়ত তিনি করতে সক্ষম হবেন। একমাত্র এ প্রস্তাব ব্যতীত আমি আর কোন প্রস্তাবে রাজি হতাম না। কারণ আমার বাসর ঘরে এনে আর একটি ছেলেকে মুত্যুর ঠেলে দিবার সাহস আমার নেই। আমি বাসর ঘরে আর কত লাশ দেখব। এক এক করে নয়জন নিষ্পাপ মায়ের সন্তানকে এখান থেকে জমের ঘরে আমি ঠেলে দিয়েছি। যেজন্য আজ মানুষ আমাকে ভয় পায়। আমার নাম রেখেছে রাখুসে মেয়ে।
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন