বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ৪
বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাদশা জিজ্ঞাসা করলেন, কে তোমরা? এবং কোথা থেকে এসেছো? তোমরা বাদশাহের দাওয়াতে শরিক হলে না কেন? তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে বললো, আমরা মুসাফির। দীর্ঘদিন যাবত আমরা এখানে আছি। আমরা কারও দাওয়াত গ্রহন করি না। এক আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভরশীল আমরা সব সময় এবাদত, রিয়াজাত, পরকালের চিন্তা নিয়ে বিভোর থাকি। কুরাআন তিলাওয়াত আর নফল নামাজে আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়। দাওয়াত খাওয়ার সময় কোথায়?
উপস্থিত জনগণ তাদের পক্ষ হয়ে একইভাবে কথা বললো যে, হুজুর! এরা দীর্ঘদিন যাবত এখানে অবস্থান করছে, এরা খুব ভাল লোক। সব সময় দরিদ্র, গরীব শ্রেণির লোককে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সাহায্য করে থাকে। তাদের দানের উপর অত্র অঞ্চলের অনেক লোকের জীবিকা নির্ভর করে। বাদশা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হলেন, এরাই সেই তিন জন, যাদেরকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। তিনি আবার তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কে? কোথা থেকে এসেছো? তোমরা কী কাজে ব্যস্ত? আমাকে সঠিকভাবে বল।
তারা এবার বললো, “আমরা পশ্চিম দেশ থেকে হজ্বব্রত পালনের জন্য এখানে এসেছি এবং পবিত্র রওজা মোবারকের নৈকট্য লাভের জন্য এখানে অবস্থান করছি।”
ন্যায় পরায়ণ বাদশা ধৈর্য সহকারে প্রশান্ত চেহারা নিয়ে তাদেরকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন এবং তাদের বসবাসের ঘরটিকেও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। মদিনার গণ্যমান্য লোকেরা সেই তিন জনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, আর বলছিলেন যে, এরা খুবই ভালো লোক, এদের আচরণে মদিনাবাসি মুগ্ধ এবং তাদের সাহায্য সহানুভূতিতে বহু লোক উপকৃত। গত কয়েক মাস আগে মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
সে সময় বহু লোক অর্ধাহারে, অনাহারে দিন অতিবাহিত করছিল। সেই কঠিন সময় এই তিন দরবেশের অবদানে অনেক লোকের উপকার হয়েছে। তারা দিনের বেলায় রোজা রাখেন আর রাত্রির বেশির ভাগ সময় এবাদাতে অতিবাহিত করেন। বাদশা ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে নীরবে সব কথা শ্রবণের পর বললেন, আমি তোমাদের কারো কথা শুনতে রাজি নই। তাদের এই বৈঠকখানা বাদ দিয়ে আসল কর্মক্ষেত্র কোথায়? আমাকে বল। বাদশা একটি পর্দা উঠিয়ে নতুন এক কক্ষে দু’খানা কুরআন আর তার সাথে স্বল্প মূল্যের কিছু পোশাক পরিচ্ছেদ দেখতে পান।
তারপর তিনি সেই কক্ষে পদচারণ করতে করতে পদতলের বিছানা উঠিয়ে দেখতে পান একটি গর্ত এবং সেই গর্ত থেকে নবীজীর রওজা মোবারকের দিকে একটি সুঁড়ঙ্গ। তৎক্ষণাৎ তিনি তাদেরকে আটকে ফেললেন। বাক্যালাপ না করে তিনজনকে তাদের আসবাবপত্রসহ মসজিদে নববীর সামনে এক চত্তরে হাজির করলেন। তারপর সৈন্যদের মদীনার পাহারা থেকে নিষ্কৃতি প্রদান করলেন।
লক্ষাধিক জনতার সম্মুখে বাদশা সেই তিন জনকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কে? কোথা থেকে তোমাদের আগমন এবং তোমাদের উদ্দেশ্য কি? পরিষ্কার ভাষায় বল। এহেন অবস্থায় তারা কঠিন বিপদ সামনে দেখে তারা সঠিক পরিচয় দিল। বললো, আমরা ইয়াহুদি। দীর্ঘদিন যাবত আমাদেরকে মুসেল শহরের সুদক্ষ কর্মী দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রচুর অর্থ সহকারে এখানে পাঠিয়েছে।
আমাদের এই জন্য পাঠানো হয়েছে যে, আমরা মদিনায় অবস্থান করে যে কোন কৌশলেই হোক না কেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর লাশ বের করে ইউরুপীয় ইয়াহুদীদের হাতে হস্তান্তর করতে হবে। তাহলে তারা আমাদেরকে বিরাট অংকের পুরষ্কার দান করবেন।
তাই আমরা রওজা মোবারকের কাছে অবস্থান করে রাতে সূঁড়ঙ্গ খনন করে তার মাটিগুলো মদিনার বাইরে নিক্ষেপ করে আসি। দীর্ঘ তিন বছর যাবত এ মহা পরিকল্পনার কাজে অনবরত ব্যস্ত আছি। যে রাত্রিতে আমরা রওজা মোবারকের কাছে পৌঁছে গেলাম। আর আমাদের পরিকল্পনা যে, এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বনবীর লাশ বের করে নিব। ঠিক এমনি সময় অনুভব করলাম যে, আকাশ পাতাল বিদীর্ণ হচ্ছে, ভূমিকম্প আরম্ব হয়ে গেছে। সুঁড়ঙ্গের ভিতর যেন আমরা সমাধিস্থ হয়ে পড়ব। এ ধরনের অবস্থা দেখে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে কাজ বন্ধ রাখছি। সেই প্রভাতেই বাগদাদের ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর আগমন।
বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন