বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ২
বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত্রী এখনও কিছু বাকি আছে। সারা দুনিয়া যেন কি এক বিপদের সম্মুখিন হয়ে নিঝুম হয়ে আছে। কোথাও কারও কোন প্রকার সাড়া শব্দ নেই। আকাশ পানে চেয়ে দেখছেন, সেখানে মনে হল যে, ঐ তিন জন লোক তাকে ধরবার জন্য আসছে। সেই তিনটি চেহারা তার মনের মণিকোঠায় এমনিভাবে অজ্ঞিত হয়েছে যে, তা আর কোন মতে দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে বাদশা নূরউদ্দিন চোখ মুখ বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু কি হবে সেই তিনটি চেহারা লেপের ভিতরে তার সামনে হাজির হয়ে গেছে।
তিনি নিরুপায় হয়ে বিপদ আসন্ন দেখে তিন বার উচ্চস্বরে আস্তাগফিরুল্লাহ ও দশ বার আউযুবিল্লাহ পাঠ করতে করতে তন্দ্রাবিভোর হয়ে পড়েন। এমন সময় তিনি দেখলেন, অতি নিকট হতে আল্লাহ তা’য়ালার নবীর আগমন। তিনি বলেন, নূরউদ্দিন! এই তিন জন লোককে আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করলে এখনি গজবের কঠোর ধাক্কায় নিপাত করে দিতে পারেন, কিন্তু বিশ্ববাসী তাদের নিপাতের মূল কারণ কি, কিছুই অবগত হবে না। আমি চাচ্ছি, তাদের এই চরম বেয়াদবীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে বিশ্ববাসীর সামনে একটা নজির রেখে দাও।
দীর্ঘ দিন যাবত এরা আমার সাথে চরম বেয়াদবী করছে। বাদশা নূরুদ্দিন ক্রন্দনরত অবস্থায় বিছানা পরিত্যাগ করলেন নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালার নবী কোন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি তড়িৎ গতিতে গোসল ও ওজু সেরে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। দ্রুতগামী অশ্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জালালুদ্দিন মৌশুরীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তখন জালালুদ্দীন মৌশুরী সেখানে অবস্থান করছিলেন। সেখানে গিয়ে এক জামে মসজিদে ইমাম হয়ে নামাজ পড়া অবস্থায় পেলেন। নামাজ শেষ হলে সাক্ষাৎ করে তাকে অশ্ব্বের উপর সওয়ার করিয়ে রাজ দরবারে ফিরে এলেন। তারপর গোপন কক্ষে দরজা বন্ধ করে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্বপ্নের বিবরণ ব্যক্ত করলেন এবং কি করা উচিত, এ ব্যাপারে সুপরামর্শ চাইলেন।
জালালুদ্দিন মৌশুলী স্বপ্নের বৃত্তন্ত অবগত হয়ে বললেন, নবী (সাঃ) বিপদে পড়েছেন এবং বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আপনাকে বারবার স্মরণ করছেন। অতএব, কালবিলম্ব না করে অতিসত্বর মদিনার পথে অগ্রসর হোন।
পূর্বাকাশে লালে লাল রবি উদিত হল। বাদশা নূরুদ্দীন ১৬ হাজার দ্রুতগামী অশ্বারোহী সৈন্য এবং বিপুল ধন-সম্পদ নিয়ে বাগদাদ হতে মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। দীর্ঘ ১৬ দিন পর মদিনার দ্বারদেশে উপনীত হয়ে বাদশাহর সৈন্য দলসহ গোসল ও ওজু করে দু’রাকাত নফল নামাজান্তে দীর্ঘ সময় ধরে মুনাজাত করলেন।
তারপর সৈন্যবাহিনী দ্বারা মদিনাকে ঘেরাও করে ফেললেন এবং সাথে সাথে আদেশ জারি করে দিলেন যে, কোন লোক “বাইরে যেতে পারবে না” বাদশা নূরুদ্দীন জুমার খুৎবা দান করলেন এবং ঘোষণা দান করলেন, আমি মদিনাবাসিকে একবেলা অন্নদান করতে চাই। আমার অভিলাষ, কেউ যেন আমার দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়।