বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-পর্ব ৪
বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ পানি যমযমের পানি নামে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজীগণ ছওয়ারের নিয়তে ও বিভিন্ন পীড়ার প্রতিষেধক মনে করে ভক্তি সহকারে এ পানি পান করে থাকেন এবং পাত্রভরে দেশে নিয়ে আসেন। সমস্ত মুসলমানেরা অত্যন্ত ভক্তি সহকারে এ পানি পান করে থাকেন।
বিবি হাজেরা গাছপালা ও তরুলতাহীন এ উষ্ণমরু প্রান্তরে যখন স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করলেন তখন খাদ্য খাদকের অভাব দেখা দিলে তিনি ও ইসমাইল (আঃ) শুধু এ পানি পান করে জীবন ধারন করেন। আল্লাহ্ তা’য়ালা এ পানির মধ্যে খাদ্য ও পানীয় সম্পদের উভয়টি মিশ্রিত করে তাঁদের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করেন। বসবাসের নিমিত্ত কোন ঘরবাড়ির ব্যবস্থা দেখানে ছিল না। আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁদের মাথার উপর এক খণ্ড প্রশস্ত পাথর ঝুলিয়ে তাঁদের নিরাপদ বাসস্থান করে দেন। এভাবে কুদরতি নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁদের সেখানে সুখ-শান্তি দান করেন।
হযরত ইসমাইল (আঃ) ও হাজেরা যমযম কূপের পাশেই বসবাসের জন্য মন স্থির করলেন। দু’দিনপরে একদল লোক উক্ত এলাকায় এসে পানির অভাবে খুব বিপদ্গ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন তারা সাফা ও মারওয়া পর্বতের উপর উঠে সর্বদিক তাকিয়ে পানি অনুসন্ধান করছিল। হঠাৎ হাজেরার দিকে তাঁদের দৃষ্টি পড়ল। তখন তারা দ্রুত তাঁর নিকট চলে এল এবং তাঁর কাছে একটু পানির জন্য আবেদন করল। হাজেরা তাঁদেরকে পানি দিলেন। তারা অনেক পানি পান করে তৃপ্তি লাভ করলেন। এতপর তারা হাজেরার নিকট তাঁর পরিচয় এবং এ নিভৃতস্থানে আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। বিবি হাজেরা সমস্ত ঘটনা তাঁদের নিকট বলে দিলেন। তখন তারা, বলল যদি আপনি আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করতে অনুমতি দেন তবে আমরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করব। অবশ্য আমরা আপনার পানি ব্যবহারের জন্য আপনাকে নিয়মিত খজনা দেব। বিবি হাজেরা তাঁদেরকে পানি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং তাঁদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন। সেই থেকে বনিকেরা সেখানে বাড়িঘর তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করে। ধীরে ধীরে স্থানটি একটি নগরীতে রূপ নিতে আরম্ভ করে।
দীর্ঘ সাত বছর যাবত বিবি হাজেরা হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে নিয়ে সেখানে বসবাস করেন এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার বন্দেগীর মাধ্যমে সময় কাটান। যমযমের পানির জন্য খাজনা হিসেবে বিভিন্ন কাফেলার মানুষেরা যে টাকা-পয়সা দিত তাতে বিবি হাজেরা খরচের পরে উদ্বৃত্ত থাকত। তিনি উদ্বৃত্ত টাকা জাতির কল্যাণে ব্যয় করার নিয়তে জমা করতেন।
সাত বছর উত্তীর্ণ হবার পরে একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর স্ত্রী সায়েরার নিকট বললেন, আমার মন চায় একবার ইসমাইল ও হাজেরাকে দেখে আসি।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন