বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-পর্ব ১

গর্ভবতী হাজেরা বিবি সায়েরার চাপের সম্মুখে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করতেন। সায়েরা তাঁর প্রতি অনেক নির্যাতন চালাতেন এবং ভীষণ ঈর্ষা পোষণ করতেন। থাকা, খাওয়া ও বসবাসের ক্ষেত্রে ক্রীতদাসীর ন্যায় ব্যবহার করতেন।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এ ব্যাপারে তাঁকে অনেক বুঝিয়েছেন এবং আরো বলেছেন আল্লাহ্‌র নির্দেশ অনুসারে সে সমব্যবহার পাওয়ার অধিকারিণী হয়েছেন। শরিয়াতের বিধান অনুসারে কোন দাসী সন্তানের মা হলে সে বিবাহিত স্ত্রীর অধিকার লাভ করে। অতএব তাঁর প্রতি উদার হতে অনেক অনুরোধ করলেন। কিন্তু সায়েরা কোন কথা ভ্রুক্ষেপ না করে বার বার বলতে থাকেন “আমি সন্তানের মা হতে পারব না আর হাজেরা দাসী হয়ে আমার সম্মুখে সন্তানের মা হবে। এটা আমি সহ্য করতে পারব না।”

দিন মাস গড়িয়ে দীর্ঘ নয় মাস পার হয়ে গেল। হঠাৎ একদিন বিবি হাজেরা এক পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। প্রসব কালে হাজেরার নিরব কোঠরিতে অনেক ধাত্রী ও সেবিকাদেরকে তিনি দেখলেন যাদেরকে ইতোপূর্বে তিনি কোন দিন দেখেন নি। এমন কি নবজাতের কানে আজান পর্যন্ত কে যেন শুনিয়ে ছিলেন। অতপর ধোয়া-মোছার পরে নতুন কাপড় জড়িয়ে সন্তানটিকে হাজেরার কোলে তুলে দিয়ে ধাত্রী ও সেবিকারা বিদায় হয়েছেন। সবকিছুই হাজেরার নিকট অলৌকিক ও স্বপ্ন বলে মনে হল। সর্বোপরি যে সন্তানটি তিনি প্রসব করেছেন তাঁর মুখশ্রী এত উজ্জ্বল ছিল যাতে ঘরের অন্ধকার পর্যন্ত দূরীভূত হল। তিনি ভাবলেন এ সব কিছুই আল্লাহ্‌ তা’য়ালার অপার করুণা।

বিবি সায়েরা সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার অর্ধদিবস পরে খবর পেয়েছেন। তখন তিনি হাজেরার কুশলাদী জিজ্ঞেস না করে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে খবর দেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার খবর শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। এবং উতফুল্লমনে ঘরে ফিরলেন। সায়েরা বিবি দরজায় দাঁড়ায়ে ছিলেন। তিনি নবীর সম্মুখে কেঁদে অস্থির হলেন এবং বললেন, তুমি হাজেরাকে এ নবজাত সহ আজকেই জন মানবহীন প্রান্তরে ফেলে আস। যেখানে গাছপালা ও খাদ্য খাদক কিছুই নেই। না হয় আমি আজকে তোমার ঘর ছেড়ে যেদিকে ইচ্ছা চলে যাব। আমাকে তুমি কোন ক্রমে মুহুর্তক্ষণ আর ধরে রাখতে পারবে না। অতএব তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি আছ কিনা বল ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, একটু অপেক্ষা কর আমি এক নজর সন্তানটিকে দেখে নেই। তারপরে তোমার সমস্ত শর্ত মেনে নেব। সায়েরা বললেন, না তা হবে না। এই মুহুর্তে তুমি আমাকে জবান দাও। আমার সমুদয় শর্ত তুমি এখনই পালন করবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আর কোন ক্রমে রেহাই পেলেন না। অগত্যা তিনি বাধ্য হয়ে সায়েরার শর্ত পালন করার ওয়াদা করলেন।

অতপর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বিবি হাজেরার কক্ষে গিয়ে দেখলেন চন্দ্র সাদৃস্য এক সন্তান কোলে নিয়ে হাজেরা বসে আছেন। নবীকে দেখে তিনি ছালাম করলেন ।অতঃপর সন্তানটিকে তাঁর কোলে তুলে দিলেন।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বৃদ্ধ বয়সের এ সন্তান যে কত আদরের ধন তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তিনি সন্তানকে বুকে লাগালেন, মুখে লাগালেন এবং পরম তৃপ্তিভরে তাঁর প্রতি তাকিয়ে থাকলেন। দীর্ঘ সময় তিনি সন্তানকে নিয়ে আদর সোহাগ করলেন। হাজেরা তাঁর পুত্রের প্রতি পিতার মমতা দেখে খুব তৃপ্তি লাভ করলেন। তিনি জীবনে অবহেলিত অবস্থায় যত আঘাত পেয়েছেন,সায়েরার অত্যাচার ও নির্যাতন ভোগ করেছেন তাঁর সকল কষ্ট তিনি ভুলে গেছেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

বিবি হজেরাকে নির্বাসন প্রদান-দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।