বাঘ ও বুড়ি

তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয়ই চিড়িয়াখানায় গেছ। সেখানে গিয়ে থাকলে নিশ্চয়ই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘ দেখেছো। বাঘ হচ্ছে বিড়াল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্যানথেরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত চারটি বৃহৎ বিড়ালের মধ্যে এটি একটি। বাংলাদেশের জাতীয় পশু হচ্ছে বাঘ। তবে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় বাঘ দেখা যায়। আ্যনিম্যাল প্ল্যানেট চ্যানেলের সমীক্ষা অনুযায়ী- বাঘ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণী।

বাঘ সাধারণত বিভিন্ন নিরামিষ ভোজী প্রাণীদের খেয়ে থাকে। তবে খিদে পেলে বাঘ চিতাবাঘ, কুমির, ভাল্লুক বা অজগরকেও ছাড়ে না। এমনকি হাতিও গণ্ডারের বাচ্চার উপরো বাঘ হামলা করে। অনেক সময় বাঘ মানুষও খেয়ে থাকে। বাঘ ঘন ঝোপে লুকিয়ে আচমকা হামলা করে শিকার করে। বড় প্রাণি শিকারের সময় বাঘ শ্বাসনালী কামড়ে ধরে এবং সম্মুখপেশীর সাহায্যে শিকারকে আঁকড়ে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলে। শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলা আঁকড়ে ধরেই থাকে।

বাঘ বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে। সাদা, কালো, সোনালী এমনকি নীল বাঘও পাওয়া যায় কোন কোন এলাকায়। তবে সবচেয়ে সুদর্শন বাঘ হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন এলাকায় এ বাঘ দেখা যায়। রংধনু আসরে আমরা বাঘের বোকামী নিয়ে একটি গল্প প্রচার করেছি। আর গল্প শেষে রয়েছে এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার।

এক বুড়ি থাকত পাহাড়ের কাছে এক বাড়িতে। বুড়ি একাই থাকত সেখানে। পাহাড়ের ওপরে ছিল এক বাঘ। বাঘটি প্রায়ই নিচে নেমে বুড়ির মুলা ক্ষেতে ঢুকত আর টেনে-টুনে মুলা নষ্ট করত। বাঘটা যদি খাবারের জন্যে এই কাণ্ড করত তাহলে বুড়ির হয়তো কিছুই বলার থাকত না কিন্তু তা তো নয়। বাঘ এমনটা কেবল মজা করবার জন্যে। বুড়ির তাই ভারি রাগ হত।

একদিন বাঘ যখন ক্ষেত তছনছ করছে তখন বুড়ির সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল। এ সময় বাঘকে জব্দ করার জন্য বুড়ির মাথায় সুন্দর একটা বুদ্ধি চলে এলো। বুড়ি মিষ্টি করে বাঘকে বলল, “ও বাঘ, এই পানসে মুলা খাও কেন? আজ রাতের বেলায় আমার বাড়িতে এসো, আমি তোমাকে চাল আর লাল মটরশুঁটি দিয়ে মজাদার পায়েস রেঁধে খাওয়াব।” দাওয়াত পেয়ে বাঘ বেজায় খুশি হল। রাতে অবশ্যই আসবে এই কথা দিয়ে সে পাহাড়ে ফিরে গেল।

বাঘ চলে যাওয়ার পর বুড়ি বাড়িতে ফিরে গেল। সে পায়েস-টায়েস কিছুই রাঁধল না। তার বদলে প্রথমে একটা কাঠকয়লার চুলা ধরিয়ে পেছনের আঙিনায় রেখ আসল। এরপর হেঁসেলের কলসিতে পানি ভরে তাতে অনেকখানি মরিচের গুঁড়ো ছেড়ে দিল। আর একটা গামছায় অনেকগুলো সূঁচ বিধিয়ে সেটা কলসির ওপর আটকে রাখল। সবশেষে হেঁসেলে মেঝের সামনের দিকটায় গোবর ছড়িয়ে, তার ওপর দরজার দিকে মাথা করে একটা মাদুর পাতল। আর একজন মুটেকে বাইরের বেড়ার কাছে ওৎ পেতে থাকতে বলল। এসব করে-টরে বুড়ি ঘরে গিয়ে বাঘের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

এরপর যখন রাতে আঁধার নেমে এল তখন বাঘ এসে হাজির হল। বুড়ি ভাবখানা এমন দেখায় যে, বাঘ আসার সে ভীষণ খুশি হয়েছে। একটুখানি হেসে বুড়ি বলল, “শুভ রাত্রি, তুমি কষ্ট করে এসেছ দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। ভেতরে আসার আগে পেছনের আঙিনা থেকে আমার চুলাটা এনে দাওনা! ঘরে আমার ভীষণ শীত লাগছে।”

বাঘ গেল পেছনের আঙিনা। গিয়ে দেখল, কয়লার আগুন নিভু নিভু। এ অবস্থা দেখে বাঘ বলল, “নানী ও নানী, আগুন তো নিভে যাচ্ছে।”

বুড়ি : “তাহলে ছাইতে ফুঁ দাও। তাতে আগুন আবারো জ্বলে উঠবে।”

বাঘ ফুঁ দিতে লাগল। মুহূর্তেই ছাই উড়ে এসে সোজা তার চোখে গিয়ে ঢুকল। বাঘ চিৎকার করে বলে উঠল, “হায়, হায়, আমার চোখ গেল, চোখ গেল।” এরপর জ্বালা থামানোর জন্য বাঘ চোখ রগড়াতে লাগল। কিন্তু যত জোরে রগড়ায়, জ্বালা ততই বাড়তে থাকল।

শেষে কিছুই বুঝতে না পেরে সে চেঁচিয়ে বলল, “নানী, চোখে ছাই পড়ছে, বড্ড জ্বালা করছে।”

বুড়ি: আহা বাছা, এত কান্নাকাটি করছ কেন-হেঁসেলে কলসিতে পানি আছে। পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেল, সব ঠিক হয়ে যাবে।

বুড়ি কথায় বাঘ দৌড়ে গেল হেঁসেলের কাছে। তারপর কলসির পানি দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ ধুয়ে ফেলল। বন্ধুরা, তোমরা জানোই তো, বুড়ি কলসির পানিতে মরিচের গুঁড়া গুলে রেখেছিল। ফলে ওই পানি চোখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের জ্বালা ভয়ানক বেড়ে গেল।

সেই জ্বালায় বাঘ তখন পাগলের মত চিৎকার করে বলে উঠল : বাঘ: হায় হায়, আমার চোখ গেল নানী, চোখ গেল। জ্বালা যে আরো বেড়ে যাচ্ছে। কিছু একটা কর।

বুড়ি : আহা বাছা, এত অস্থির হয়োনা! কলসির ওপরে ঝুলিয়ে রাখা গামছাটা নিয়ে চোখ মুছে ফেল।

বাঘ তখন প্রায় অন্ধ। সে হাতড়ে হাতড়ে গামছা নিয়ে জোরে জোরে চোখ মুছতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে গামছার সুঁচগুলো তার চোখে বিধে গেল। বাঘ তখন অসহায়ের মতো লাফ-ঝাঁপ দিতে লাগল।

তার আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, বুড়ি তাকে ফাঁদে ফেলেছে। তাই সে পালানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু যেই হেঁসেল থেকে বাইরে দৌড় দিল অমনি পা পিছলে গোবরে ওপর পড়ে গেল।

এদিকে মেঝেয় পা পড়তেই মাদুরটা তার পায়ে জড়িয়ে গেল। সে গড়াতে গড়াতে গিয়ে পড়ল মুটের দিকে। অমনি মুটে তাকে বস্তায় পুরে গট-গট করে নদীর দিকে রওনা হল। সেখানে পৌঁছেই তাকে নদীতে ফেলে দিল।

তবে বেশ কিছুক্ষণ পর বাঘ সাঁতরে ডাঙায় উঠল। কিন্তু তাতে কি? সে আর জীবনেও বুড়ির মুলাক্ষেতে যাওয়ার চিন্তা করল না।

উম্মুল মোমেনীন হযরত খাদিজা (রাঃ)

শেয়াল রাজার সাজা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *