বাইল্লাচুলীর গল্প–১ম পর্ব

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

কোন এক গ্রামে এক বুড়ি আর তার মাইয়া থাকতো। বুড়ির চাল-চুলাই সম্বল। বুড়া মারা গেছিল সে অনেকদিন আগে। রাইখা গেছিল একটা ছাগল। গ্রামের এক কোনায় বুড়ির বাসা। বাসার থিকা একটু হাঁটলেই বন। বুড়ির মাইয়া ঐ বনে ছাগল চড়াইতো, পথের ধারের শাক-লতা-পাতা, গাছের ফল কুড়াইতো, লাকড়ি টুকাইতো। সেই শাক লতাপাতা খাইয়া আর বাড়ি বাড়ি লাকড়ির যোগান দিয়া কোনমতে তাগো দিন কাটতো। বুড়ির মাইয়ার নাম আছিলো দুলি।

একদিন বুড়ির মাইয়া ছাগল চড়াইতে গেল বনে। সারাদিন বনে টো টো কইরা ঘুরলো, শাকপাতা-ফলমূল কুড়াইলো, পূজার ফুল তুললো, গাছে উইঠা শালিকের বাসার থিকা বাচ্চা নিয়া খেইলাধুইলা আবার রাইখা দিলো। এমন করতে করতে যখন দিনের আলো ঢইলা পড়লো, তখন মাইয়া ছাগলের খুটা উঠাইয়া রওনা দিলো বাড়িতে। বুড়া বটগাছটার পাশ দিয়া যাইতাছে, আর তখনই, কে জানি হিসহিসাইয়া কইয়া উঠলো কি রে ছাগল-রাখুনী বাইল্লাচুলী, আমার লগে বিয়া বইবি?”

শুইনাই মাইয়া বিষম ভয় পাইয়া পড়ি কি মড়ি দৌড় আর এক দৌড়ে বাড়ি! মাইয়ারে এমনে আইতে দেইখা বুড়িও ছুইটা আইলো,

“কিরে মা? কি হইসে? এমন করতাসস ক্যা? ভয় পাইসস?”

মাইয়া হাঁপাইতে হাঁপাইতে কইলো ঘটনা। শুইনা তো বুড়ি হাসে, কয়,

“অঅ-মা! এই নি কান্ড! ধুরু, কেউ মজা করসে!”

কিন্তু মাইয়ার মন মানে না, ক্যান জানি ডর লাগে, কেমন জানি গলা ওই ব্যাটার!

পরের দিন দুলি আবারো বনে ছাগল চড়াইতে যায়। সারাদিন ঘুইরা যখন বাড়ি যাইবো, বটতলার নীচে দিয়া দুই কদম না যাইতেই আবারো সেই কথা,

কি রে ছাগল-রাখুনী বাইল্লাচুলী, আমার লগে বিয়া বইবি?দৌড় দিয়া চইলা আসে মাইয়া। মারে আবারো কয়। বুড়ি শুইনা হাসে, কয় –

“কালকে গেলে একটা কাজ করবি। আবারো যদি জিগায় তাইলে কইবি ভাল বর পাইলে বিয়া করুম না ক্যান।

“এহ আমি এইটা কমু ক্যান? আমারে বাইল্লাচুলী কয়!”

“হ কইবো না! চুলে ত্যাল পড়ে না, বাইল্লার বাসার মত চুল, বাইল্লাচুলী কইবো না তো কি কইবো? তোর মত আভাগীর বেটিরে যে বিয়া করতে চায় এইটাই তো বেশি!”

দুলি থম ধরে। মার দিকে রাগ কইরা তাকায়।

পরদিন আবারো বনে যায়। আজকে আর ফুল তুলে না, ফলমূল কুড়ায় না। খালি বটগাছের দিকে টানে মাইয়ারে। পা টিপ্পা টিপ্পা যায় দুলি। কত বড় বটগাছ! মাথা সমান উঁচুতে একটা বড় খোড়ল। কাছে আইতেই খোড়লটার থিকা হিসহিস কইরা কইয়া উঠে কে যেন,

বুক ধড়ফড় করে মাইয়ার, ভয়ে ভয়ে কয়,

“ভাল বর পাইলে বিয়া বমু না ক্যান?”

কোন আওয়াজ আসে না। দুলি জিগায়, “আপনে আমারে বিয়া করতে চান ক্যান?”

“তোরে আমার ভাল লাগে, .. বিয়া করবি তাইলে?” কথা কয় গাছের খোড়ল।

“কেমনে বমু? আমাগো চাল নাই চুলা নাই, বিয়ার আয়োজন কেমনে করুম?””ও এই কথা? শুন তাইলে.. এইখান থিকা একশো কদম উত্তরে হাইটা গেলে একটা বড় মান্দার গাছ পাবি।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!