বাইল্লাচুলীর গল্প-শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

আজ থিকা বারো বৎসর আগের ঘটনা। এই রাজ্যের রাজার পোলা আছিলাম আমি। একদিন শিকারে গেলাম বন্ধু বান্ধব নিয়া। শিকার টিকার কইরা ফিরা আসতেছি, হঠাৎ দেখি এক বিরাট এক অজগর এক গাছের ডালে কুন্ডলী পাকাইয়া রইসে। দেইখা আমার মনে কি হইলো, ভাবলাম সাপটারে মারুম। সবাই মানা করলো, বন্ধুরা কইলো সাপ মারবি ক্যান? সাপতো আমাগো কিছু করে নাই। কিন্তু আমি রাজার পোলা, যা ভাবি তাই করি, তলোয়ার বাইর কইরা দিলাম এক কোপ। আর সাথে সাথে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো! সাপটার খোলস খুইলা আমার গায়ে আইসা প্যাচাইতে লাগলো।

সবাই উইঠা মুইঠা দিলো দৌড়। ওই অবস্থাতেই আমি দেখতে পাইলাম সাপের খোলস থিকা একটা মানুষ বাইর হইয়া আসতাছে।

আমি যেখানে কোপ দিছিলাম সেখান থিকা রক্ত বাইরাইতাছিল, লোকটা মারা যাইতাছিল। কিন্তু মারা যাবার আগে লোকটা আমারে কিছু কথা কইয়া গেছিল, সে কথাও তোরে কইতে মানা।

বুঝলাম, লোকটাও শাপ পাইছিলো কারো থিকা আর তার শাপই আমার গায়ে লাগছে। তারপর থিকা আমার অজগর জীবন শুরু। আমার এই অবস্থা দেইখা সবাই ভয়ে পালাইছিলো। আমিও আর ফিরা যাই কেমনে, সাপ হইয়া বনেই রইয়া গেলাম।

দুলি সব শুনতাছিল তার অজগর বরের বুকে মুখ গুইজা। সেইরাতে দুইজনে অনেক গল্প করলো। আর গল্প করতে করতেই ঘুমায়া পড়লো। কিন্তু দুলি ঘুমাইলো না। ঠিক যখন সকাল হইবো তার আগ দিয়া সে সাপের খোলস নিয়া দিল এক দৌড়! এক দৌড়ে বাইরে আইসা আগুন জ্বালাইয়া দিলো সাপের খোলস তাতে ফালাইয়া! ভকভকাইয়া গন্ধ বাইর হইলো সেইখান থিকা।

হঠাৎ রাজপুত্রের ঘুম ছুইটা গেল, “করলি কি! করলি কি!” কইয়া দৌড়াইয়া বাইরে আসলো সে! কিন্তু ততক্ষণে খোলস পুইড়া ছাই।

“আপনেরে আর সাপ হইয়া থাকতে হইবো না। দিসি পুড়াইয়া আপনের খোলস!” দুলি কয়। রাজপুত্র তখনো তাকাইয়া আছে তার পোঁড়া খোলসের দিকে।

“এই কথাই কইছিল সেই লোকটা.. এই অভিশাপ কাটানের নাকি এই উপায়। অভিশপ্ত লোকের ঘুমের মধ্যে খোলস নিয়া পুড়ায়া ফালাইতে হয়। কিন্তু তা কইয়া দিলে কাজ করবো না। .. তুই আমারে বাঁচাইলিরে বউ।”

গন্ধ পাইয়া বুড়ি ছুইটা আসছিলো।

আইসাই তো এরকম একটা আধানাঙ্গা মানুষরে দেইখা তার চক্ষু চড়কগাছ। দুলি হাইসা সব খুইলা কইলো মারে। সব শুইনা বুড়ির মুখে হাসি ফুটলো। আস্তে আস্তে গ্রামের সবাই জানতে পারলো এই অদ্ভুত কাহিনী। রাজপুত্র লোক দিয়া রাজধানীতে বার্তা পাঠাইলো।

কয়দিন পরেই রাজা হাজার হাজার লোক লস্কর সৈন্য সামন্ত নিয়া ছুইটা আসলো এই গ্রামে। পোলারে পাইয়া জড়ায়া ধইরা কানলো হাউ হাউ কইরা। তারপর সব শুইনা রাজা তার পোলা, পোলার বউ আর বেয়াইনরে নিয়া রাজধানীর দিকে রওনা দিল।

যাওয়ার আগে গ্রামের সবাইরে নিমন্তন্ন করতে ভুললো না, রাজধানীতে গিয়া নাকি পোলার বিয়া আবারো ধুমধাম কইরা দিবো।

 

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!