বনি ইসরাইলদের বাছুর পূজা- ৩য় পর্ব
বনি ইসরাইলদের বাছুর পূজা- ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কয়েক ঘন্টা তলোয়ার বাজীর ফলে নাকি সত্তর হাজার বনি ইসরাইল নিহত হয়েছিল। হযরত মুছা (আঃ) তখন অস্থির হয়ে পড়েন। আল্লাহ তায়ালা তাকে সান্তনা দিয়ে বলেন যারা নিহত হয়েছে তারা কোন দিন বেহেস্ত লাভ করার যোগ্য পাত্র ছিল না। তবে আল্লাহার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তারা প্রাণ দিয়েছে এখন তাদের জন্য বেহেস্ত ওয়াজেব হয়ে গেছে। বাকি যারা এ কতল ও কেতালের জমাতে আদৌ আসেনি তাদের তৌরাত কিতাব পাঠ করতে বলুন না হয় তাদের প্রতি কঠিন আজাব আসবে।
হযরত মুছা (আঃ) নির্দেশ অনুসারে বনি ইসরাইল দের আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিলেন। তারা বলল, আমরা তৌরাত কিতাব পড়ব কিন্তু মানব না। আর যদি মানি তাহলে পড়ব না। দুটির একটি আমরা পালন করব। এ কথায় আল্লাহ তায়ালা অখুশি হলেন এবং তাদের প্রতি গজবের ব্যবস্থা করলেন। বড় বড় কেয়েক হাজার পাহাড় উঠিয়ে তাদের কে চাপা দিয়ে খতম করা জন্য হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে হুকুম দিলেন।
হযরত জিবরাঈল (আঃ) কয়েক হাজার পাহাড় তুলে আকাশ পথে বাতাসের সাহায্য মিশরের আকাশে এনে দিলেন। তখন চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে বনি ইসরাইলরা ভীত হল। তবে তাদের কথা রাখল। তারা বলল, আমরা যদি তৌরাত পাঠ করি তাহলে মানব না। আর যদি মানি তাহলে পাঠ করব না। হযরত জিবরাঈল (আঃ) পাথর গুলাকে নিচে নামিয়ে আনলেন। এবার তারা স্পষ্টভাবে পাহাড় গুলা দেখতে পেল। তখন তারা সকলে হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট গিয়ে বিপদ মুক্তির জন্য দোয়া প্রর্থনা করল। হযরত মুছা (আঃ) বললেন, এবার এ গজব শুধু আমার দোয়ায় বহিভুত হবে না। অতত্রব তোমরা সকলে সেজদায় পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তখন সকল মানুষ একত্রিত হয়ে মাঠিতে কপাল মিশিয়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে বলল, আল্লাহ আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার প্রেরিত তৌরাত কিতাবের যাবতীয় আদেশ নিশেধ আমরা পালন করব।
বনি ইসরাইল অঝোর নয়নে কেঁদে কেঁদে মাটি ভিজিয়ে ফেলল। হযরত মুছা (আঃ) নিজেও সেজদায় পড়ে উম্মতের গুনাহ মাপের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন এবং পাহাড় গুলা সরিয়ে নেবার জন্য হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে হুকুম দিলেন। বনি ইসরাইল এর লোকেরা কাত করে আড়ে আড়ে তাকিয়ে মাথার উপর ঝুলন্ত পাহাড়গুলা অবস্থা দেখছিল। যখন পাহাড় গুলা সরে গেল তখন তারা উঠে দাড়াল এবং স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করল। এমন কঠিন অবস্থার পরেও কতক লোক ছামেরীর ঘরে গিয়ে গোপনে গোপনে বাছুর পূজা করত।
হযরত মুছা (আঃ) এ খবর জানতে পেরে একদিন ছামেরী ঘরে গিয়ে বাছুরের মূর্তিটিকে পাথর দিয়ে আঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন। অতপর তা আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিলেন। সর্বশেষে সেগুলো নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন। তখন পূজাকারীদের মধ্যের অতি ভক্ত একদল লোক বাছুরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য এবং নিজেরা অধিক পুন্যবান হবার লক্ষ্য নদীবক্ষে ঝাপ দিয়ে পেট ভরে পানি পান করল কতকে পাত্র ভরে পানি বাড়ীতে নিয়ে আসল।
কথিত আছে বাছুর ভক্তদের যারা নদিতে পানি পান করেছিল। তারা তীরে উঠার পরে শরীরের চামড়া ভেদ করে এক প্রকার ফোস্কার ন্যায় পীড়াদায়ক ফোড়া উঠে সমস্ত শরীর ভরে যায়এবং তারা ছটফট করে তারা সকলে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী