বনি ইসরাইলদের বাছুর পূজা- ২য় পর্ব
বনি ইসরাইলদের বাছুর পূজা- ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ ব্যাপারে বাছুর যদি একটি ডাক দেয় তবে ধরে নেওয়া হয় প্রার্থনাকারীর দোয়া কবুল হয়নি। তখন তাকে অপেক্ষা করতে হয় এবং মূর্তির সম্মুখে হাদিয়া পেশ করতে হয়। এভাবে বিশ দিন যাবত মূর্তির সম্মুখে অবিশ্রান্ত ভিড় জমতে থাকে। দিন দিন মূর্তি পূজকদের দল বৃদ্ধি পেতে থাকে। সারা দেশ ব্যাপি বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বনি ইসরাইল কওমের প্রায় অর্ধেক মানুষ এ পূজায় অংশ গ্রহন করে।এই সময় হযরত মুছা (আঃ) তৌরাত কিতাব নিয়ে দেশে এসে ছামেরীর বাছুর তৈরির ও বনি ইসরাইলদের পূজা অর্চনার কথা শুনে ক্রধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন।
তৌরাত কিতাবের ফলক কাঁধ থেকে নামিয়ে হযরত হারুন (আঃ) এর দাড়ি ও চুল ধরে প্রহার শুরু করলেন। হযরত হারুন কাকতির সাথে সঙ্গে বললেন, হে সহদর ভাই! তুমি বিশ্বাস কর,আমি প্রাণ পণ চেষ্টা করেও এর কোন প্রতিকার করতে পারি নি। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।
তবুও আমি তাদের বারণ করতে দ্বিধা করেনি। হযরত মুছা (আঃ) তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে এই বাছুরের মূর্তি তৈরি করেছে। তখন হযরত হারুন (আঃ) বললেন, আমাদের সম্পর্কীয় ভাগ্নে ছামেরী হযরত মুছা (আঃ) তখন বললেন, কোথায় সে বেঈমান। তাকে এখনই আমার সামনে হাজির কর। হযরত হারুন (আঃ) ও অন্যান্য লোক গিয়ে ছামেরীকে হযরত মুছা (আঃ) এর সম্মুখে নিয়ে আসলেন। হযরত মুছা (আঃ) তাকে দেখা মাত্র জুতাপেটা করলেন। অতপর জিজ্ঞেস করলেন কি দিয়ে এটাকে তৈরি করেছ। ছামেরী তখন জিবরাঈল (আঃ) এর অশ্বের পদচিহ্ন থেকে মাটি সংগ্রহ করে স্বর্ণের তৈরি বাছুরের মুখে রেখে দেওয়ার বিবরণ বিস্তারিত ভাবে তাকে জানলেন। সে আরও বলল, ঐ মাটি মূর্তির মুখে পুরে দিলে সে ডাকবে সে কথা আমার জানা ছিল না। এটা মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরত।
হযরত মুছা (আঃ) ছামেরীর বক্তব্য শুনে আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত তুলে বললেন, হে প্রভু! মূর্তি না হয় ছামেরী তৈরি করেছে। কিন্তু তার মুখের শব্দ কে দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বললেন, আমি দিয়েছি। তখন হযরত মুছা (আঃ) বললেন হে প্রভু! তোমার কুদরতের রহস্য বুঝা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি যাকে যেভাবে চাও তাকে সেই ভাবে পরিচলনা কর।
এতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। হে মহা মহিম! তুমি আমার অন্যায় ও অতিরিক্ত কৃতকর্মের অপরাধ ক্ষমা কর। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে নবী! তুমি বাছুর পূজারিদের হেদায়াতের দাওয়াত দাও। হযরত মুছা (আঃ) তখন বনি ইসরাইলদের নিকট গিয়ে বাছুর পূজার অপকারিতা সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন, এবং আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনার জন্য অনুরোধ করলেন। এমনকি তৌরাত কিতাবের উপর আমলের গুরত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেক বুঝালেন। বনি ইসরাইলরা হযরত মুছা (আঃ) এর কথায় মৌখিক ভাবে বাছুর পূজার অন্যায় স্বীকার করে মনে মনে তারা বাছুর পূজার প্রতি আকর্ষন বেড়ে গেল।
তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুছা (আঃ) কে জানিয়ে দিলেন বনী ইসরাইলে দের অপরাধ ক্ষমা করার দুটি পথ আছে। এর মধ্যে যেটি তারা স্ব ইচ্ছায় গ্রহন করে তাতে তারা ক্ষমা লাভ করতে সক্ষম হবে। প্রথমটি হল শুন্য অবস্থায় তারা দেশ ত্যাগ করবে। দ্বিতীয়টি হল তারা অন্ধকার স্থানে সমবেত হয়ে তলোয়ার বাজি রেখে একে অপরের হত্যা করবে। হে নবী অতি সত্তর আপনার উম্মতের সাথে কথা বলে তওবা দুটি পন্থার মধ্যে একটি গ্রহন করতে বলুন না হয় সারা দেশ ব্যপি আমি গজব নাজিল করব। হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আদেশে বনি ইসরাইলদের এক যায়গায় ডেকে আন হল এবং আল্লাহ তায়ালার ফরমান তাদের নিকট জানিয়ে দিলেন। তখন বনি ইসরাইল এর সকল লোকেরা চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনেক ক্ষন চিন্তা করার পর তারা চিন্তা করে বললেন। আমাদের দেশ ত্যাগের চাইতে তলোয়ারবাজি উত্তম। আমরা একটা গ্রহন করবে। অতপর নবীর আদেশ অনুসারে দুদিন পর তাদের মধ্যে ঈমানদার ব্যক্তিরা অন্ধকারে এক জায়গায় জমা হয়ে উলঙ্গ শরীরে তলোয়ারবাজী আরম্ভ করেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী