বত্রিশ পুতুলের উপাখ্যান: ১ম উপাখ্যান

 

তখন ভোজরাজ মন্ত্রীকে বস্ত্র ও রত্ন দিয়ে সম্মান দেখিয়ে সেই সিংহাসন নগরের মধ্যে আনালেন । এক হাজার থাম বিশিষ্ট একটি মন্দির তৈরি করে তার মধ্যে সেই সিংহাসনটি বসান হল। শুভদিনে রাজা মন্ত্রীদের সাথে সেখানে উপস্থিত হলেন । ব্রাহ্মণগণ রাজাকে আশীর্বাদ করলেন। পাঠকগণ স্তব পাঠ করে রাজার প্রশংসা করলেন । রাজা গরিব দুঃখী প্রজা ইত্যাদি সবাইকে প্রচুর অর্থ দান করলেন।

তারপর তিনি যখন সিংহাসনে ওঠার জন্য প্রথম পুতুলের মাথায় পা দিলেন অমনি সেই পুতুল জীবন্ত হয়ে বললো, মহারাজ, আমার নাম মিশ্ৰকেশী, বিক্রমাদিত্যের মত আপনার যদি সাহস, বীরত্ব, ঔদার্য ইত্যাদি গুণ থাকে তাহলে এই সিংহাসনে বসুন।

রাজা বললেন, তুমি যেসব গুণের কথা বললে তার সব গুণই আমার আছে। আমিও সবাইকে দান করেছি।

পুতুল বললো, আপনি নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করেছেন এটা করা উচিৎ নয়। শাস্ত্রে বলে, দুজন ব্যক্তিকেই নিজ গুণ ও পরদোযষ কীর্তন করতে । দেখা যায়, কিন্তু সজ্জন ব্যক্তি পরদোষ কীর্তন করে না। আয়ু, ধন, মন্ত্র, দান, মান ইত্যাদি গোপন রাখা উচিৎ। অতএব নিজে নিজের গুণ কীর্তন বা পরের নিন্দা কখনও করবেন না।

পুতুলের মুখে এই কথা শুনে ভোজরাজের বিস্ময়ের সীমা রইল না। তিনি পুতুলকে বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক, যে নিজ গুণ কীর্তন করে সে প্রকৃতই মূর্খ। যাহোক, এই সিংহাসন যার তাঁর উদারতার কথা বল |

পুতুল বললো, মহারাজ, এই সিংহাসন রাজা বিক্রমাদিত্যের । তিনি সস্তুষ্ট হলে কোটি কোটি সোনার মোহর দান করতেন। কেউ টাকার আশায় এলে তাকে এক হাজার সোনার মোহর দিতেন। কেউ তাঁর সাথে ভাল ব্যবহার করলে তাকে দশ হাজার, মহৎ ব্যক্তিকে এক লক্ষ এবং যার উপর সন্তুষ্ট হতেন তাকে এক কোটি সোনার মোহর দান করতেন। আপনার যদি সেরকম উদারতা গুণ থাকে তাহলে আপনি এই সিংহাসনে বসুন।

পুতুলের এই কথা শুনে রাজা চুপ করে রইলেন। কিছু বলতে পারলেন না, কারণ তিনি দান করার জন্য অত মোহরই বা পাবেন কোথায় ?

সেদিন আর তাঁর সিংহাসনে বসা হল না।

 

বত্রিশ পুতুলের উপাখ্যান ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!