গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
পাছে নিজের চেহারা দেখলে লোকে চিনে ফেলে, দুয়ো দেয় বুড়ে বয়সে পড়তে আসছে, তাই একটা সাজ গায়ে চাপিয়ে হাজির হতো উন্টে রাস্তা ধরে.যদি একটুও বুঝত যে ওকে এইভাবে দেখলে কেউ ভূত ভাববে তাহলে কি ভুলেও এমন কাজ…কি জটাইদা, সত্যি কিনা?
জটাই জিভ কাটে, মাথা নাড়ে। অর্থাৎ রাম বল, ছিছি। কেষ্টধন সমানে দাঁত মেলে হেসে চলেছে। ও এই ব্যাপার, এবার ভূমিশয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান বংকিম-স্যার। আমি বলি কি না কি, তা অনেক ধকল গিয়েছে। কেষ্টধন, একটু চা খাওয়াবে বাবা?
এখুনি আনছি বাবু, বলে লণ্ঠন মাটিতে রেখে কেষ্টধন ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ভোম্বল ভাবে ঢ়ের হয়েছে। এবার মানে মানে কেটে পড়া যাক। কী ভাগ্যি, এই গোলমালের মধ্যে স্যার তার ছবির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। ‘চলো জটাইদা’, সে জটাইকে ইশারা করে, তুমি তো আমাদের পাড়া হয়েই যাবে—’
জটাই শুকনো মুখে মাথা নাড়ে। সে বুঝতে পারে না বংকা-স্যার (জটাইয়ের গ্রাম এই নামটাই চালু) এখনও তার ওপর খাপ্পা রইলেন কিনা!
চললি কোথা?” ডাক শুনে ভোম্বল দেখে স্যার চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে। ভাবে এই রে, স্যার দেখছি ছবির কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
‘বলি জটাই লেখাপড়া শিখবে কি শূন্যে গোল্লা এঁকে? স্যার দাঁত কিড়মিড় করেন, সরকার থেকে যে আমায় গাদা গাদা বর্ণপরিচয় দিয়েছে, সে কি গুদামজাত করে রাখার জনো ? দাঁড়া, এক মিনিট, বলে স্যার চালাঘরের ভেতর ঢুকে যান, ফিরে আসেন বই, শ্লেট আরও কি সব জিনিস নিয়ে।
‘এই ধরো বই, শ্লেট-পেন্সিল আর বনগাঁর মাসি আমায় যে এক বাণ্ডিল আমসত্ত্ব দিয়েছিল তার খানিক, স্যার এক এক করে সব ভোম্বলের হাতে তুলে দেন, ‘নে জটাই, তুই এগো।
ভেম্বলের সঙ্গে আমার কিছু বোঝাপড়া আছে।…কাল থেকে ঠিক ছটার সময় চলে আসিস পাঠঘরে। কোনো ছদ্মবেশ নয় কিন্তু— আঙুল মেড়ে সাবধান করে দেন তিনি।
জটাই মাথা নেড়ে এগিয়ে যায়। ডোম্বল ভাবে, এই রে, এবার ঠিক পালে বাঘ পড়বে। স্যার দেখে নেন জটাই কতটা তফাতে গিয়েছে, তারপর গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘হ্যা রে ভোমলা, একটা কথা বল দিকি তুই ধরলি কি করে যে ও ইয়ে নয়, ইয়ে…’
“এ তো সোজা স্যার, তার বিপদ কেটে গেছে বুঝে খুব ফুর্তি ভোম্বলের, ভূতকে কি মশা কামড়ায় ? বলুন আপনি। আর ব্রহামদৈত্য বলুন আর ইয়েই বলুন ওরা কেউ খৈনি খায় না। আমি জানতুম জটাইদার ওই নেশাটি আছে। তাই যেই দেখলুম খৈনি ভুলতে ডলতে ঘাড়ের ওপর মশা মারতে হাত তুলেছে ভূত। আমনি বুঝলুম হি হি- ভোম্বল হেসেই সারা হয়।
না, স্যার কিন্তু অত গোলমালের মধ্যেও তার সেই ব্যঙ্গচিত্রের কথা ভোলেননি। তাহলে চলি স্যার’, বলে ভোম্বল যেই পেছন ফিরবে, বংকিম-স্যার অমনি তার কাঁধ চেপে ধরেন।
কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলেন, “তুই তো অনেক কথা শোনালি, কাণ্ডও করলি বিস্তর। আমি তোকে একটা কথা বলি? ছবিটা আমার যা এঁকেছিলি না বোর্ডে-যাকে বলে দারুণ!”
ডোম্বল অবাক! স্যার হা হা করে হাসছেন। পাশে কেষ্টধন চা নিয়ে দাঁড়িয়ে। তারও বত্ৰিশপাটি বিকশিত ।