গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
কিন্তু এঁরা দুজন রয়ে গেছেন সাবেক ঝাঁপড়দায়। ভোম্বলও এখনও বংকিম-স্যারের পিছু পিছু এসে দাঁড়িয়েছে। রাজেনবাবুর মাথা জোড়া টাক, গালভরা হাসি, বুকের ওপর মোট পৈতে, গায়ে সাদা সুতির চাদর। ভোম্বলকে দেখে একগাল হেসে বলেন, ‘কে ও ? ভোম্বল না? আজ আমাদের টিম কেমন খেলল, বল । মোহনবাগানকে কেমন ঠেসে ধরেছিল-এ্যাঁ! এক এক নয়, ওটা আমাদেরই জেতা গেম। দ্বিতীয় গোলটা রেফারী যে অফসাইড বলে দিল না ওটা স্রেফ বড় টিমের মান বাঁচানোর জন্যে। সত্যি কিনা বল ?’
ভোম্বল মাথা নেড়ে বলে, ‘হ্যাঁ জেঠু, মাঠেও অনেকে তাই বলছিল যাই হোক, মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র করাও কম কথা নয়। হঠাৎ তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে, জানেন জেঠু, আজ ভোরে আমি
গড়পুকুরের মাঠে সুব্রত ভটচাজ আর বাবু মানিকে প্রাকটিস করতে দেখেছি। উঃ আমার যেন গায় কাঁটা দিচ্ছিল!’
‘বলিস কি রে!” রাজেন কবিরাজের চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসে। ভেম্বলের মতো তিনিও ফুটবল-পাগল। এককালে ঝাঁপড়দা স্পোটিংয়ের হয়ে বিস্তর গোল করেছেন।
খেলতেন হাফ-ব্যাকে কিন্তু বল পেলে তেড়েফুড়ে এগিয়ে আসতেন বিপক্ষের পেনাল্টি সীমানা পর্যন্ত ।
দুটো-একটা গোল ঠুসে দিয়ে তবে ফিরে যাওয়া নিজের জায়গায়।
ভোম্বলের আরও কিছুক্ষণ গল্প করার ইচ্ছে ছিল। রাজেন ভট্টচাজকে দেখলেই তার সারা শরীর চনমনিয়ে ওঠে। দুর্দান্ত ফুটবল খেলতেন উনি। শৈলেন মান্না নাকি ওঁর শট দেখে বলেছিলেন, ‘বাবা, এ যে দেখি বোমারু বিমান!”
কিন্তু বংকিম-স্যারের তাড়া খেয়ে চলে আসতে হয় তাকে। প্রাকটিস দেখার ঝোঁকে বাড়ির কাজ করে আনেনি সে, তিনি তাই দাঁতখিচুনি দিয়ে বলেছেন, যা শিগগির অংকগুলো কর গিয়ে ?
বংকিমবাবু বেরিয়ে আসতে রাজেন শুধোন, “কি হল হে! আজি বাজারে দেখলুম না কেন তোমায়?”
‘না, আজ বাজারে যাওয়া হয়নি, বেঞ্চে বন্ধুর পাশে বসতে বসতে বংকিম-স্যার বলেন, ‘আজ সকলে হঠাৎ আমার সেই বনগীর মাসি এসে হাজির। তা তার সঙ্গে গল্প করতে করতে এত বেলা হয়ে গেল যে তখন আর বাজারে যাওয়ার সময় নেই। মাসিও বারণ করল, বলল, তোকে এখন আর মাছের জন্য বাজারে ছুটতে হবে না। ঘরে মোচা আছে দেখছি, আমি নারকেল নিয়ে এসেছি ! ঘণ্ট রাঁধি, দেখবি খেতে কোন অসুবিধে হবে না?
রাজেনবাবু খাইয়ে লোক। বিয়েবাড়িতে ভিয়েনের দায়িত্ব নেন, মিষ্টির ভঁড়ারে চৌকিদারি করেন। হেসে জিজ্ঞেস করেন, তা হল মোচার ঘণ্ট?’
‘হ্যাঁ। তোফা হয়েছিল। সেই সঙ্গে পোস্তর বডাঁ। মনে হল যেন অমৃত খাচ্ছি। আমার ধিনিকেষ্ট যা রাধে না যে ফাঁসির আসামীকে দিলে সে দড়ি ধরে ঝুলে পড়তে চাইবে।”
হা হা করে হেসে ওঠেন রাজেন ভটচাজ। বংকিম-স্যারও হাসেন মিটমিটি। অংক কষতে কষতে ওদের ওই হাসিমুখ দেখতে দেখতে ভোম্বলের মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি ভর করে। পা টিপে টিপে ব্ল্যাকবোর্ডটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে হাতে তুলে নেয় স্যারের চকখড়ি। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দু বন্ধু খোসগল্পে মশগুল ?
গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।