বংকা স্যারের ব্যঙ্গচিত্র –শৈবাল চক্রবর্তী-১ম পর্ব

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

ভর সন্ধেবেলার ইস্কুল। ছাত্র এক এক করে বেড়ে তিন মাসে দাঁড়িয়েছে দশে। এরা সাধারণ গৃহস্থবাড়ির ছেলে। যে বয়সে লেখাপড়া শেখার কথা তখন কোনো কারণে তা করা হয়নি, খেয়াল হয়েছে পরে। মাস কয়েক হল গ্রামের দু-চারজন মাতধ্বর মিলে সরকারি সাহায্য জুটিয়ে এই সব ছেলেদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। ঝাপড়দার তেঁতুলতলার পাঠ-ঘর’ এমনি এক রাত-ইস্কুল।

ছাত্র দশজন হলেও মাস্টার কিন্তু একজনই-বংকিম রায় বা বাঁকাবাবু। তিনিই বাংলা, ইংরেজি পড়ান, অংক কষান। পড়ানোর মধ্যে বাংলার ওপরই জোর বেশি, ইংরেজি কেবল অক্ষর চিনিয়ে দেওয়া। দশটি ছাত্র মাটিতে চাটাই পেতে ধারাপাত মুখস্ত করে কি বর্ণপরিচয় পড়ে আর বংকিম-স্যার তেঁতুলগাছের ডালে ব্ল্যাক-বোর্ড ঝুলিয়ে চেয়ারের ওপর বসে থাকেন এক পায়ের ওপর আর এক পা তুলে। তার হাতে বেত, নজর সব ছেলের ওপর।

দশটি ছেলের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু হল ভোম্বল। ছেলের যে পড়ায় মাথা নেই এমন নয় কিন্তু বেশি ঝোঁক তার খেলায়। একবার ফুটবল খেলায় ডাক পড়লে আর রক্ষে নেই-অমনি সব কাজ ফেলে ছুটবে মাঠে। তাই মাঝে মাঝেই স্কুলের কাজ করে নিয়ে আসতে ভুল হয়ে যায় তার। বংকিম-স্যার তাই একটু চোখে চোখে রাখেন ভোম্বলকে! স্যারের চেহারা ছিপছিপে, মাথায় বাবরি চুল, নাকের নিচে তরোয়ালের মতো সরু গোঁফ। হাতে একটি বেত রাখেন, তা দিয়ে মারেন না। কিন্তু সপাং সপাং আওয়াজে তটস্থ রাখেন সবাইকে। বংকিমবাবুর গান-বাজনার শখ আছে। আর আছে ভূতের ভয় । মাসখানেক ধরে একটা দেড়ে ভূত নাকি তাঁকে বেজায় ভোগাচ্ছে। এ ঘটনা বংকিমবাবু গোপনে তার বন্ধু রাজেন কবিরাজকে বলেছেন। কিন্তু সে খবর সে আর কেউ জানে না, এমন নয়।

ভোম্বল যে দুষ্টুমিতে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট তাতে সন্দেহ নেই। কার বাগানের ফলে পাক ধরেছে, কাদেরপুকুরে নতুন রাজহাঁসের জোড়া ছাড়া হয়েছে—এসব খবর পৌছে যায় তার কাছে সবার আগে তারপর দেখা যায় যে হিমসাগর গাছে পাকা আম আর একটি নেই আর মল্লিকদের হাঁসের জোড়া আলো করে আছে চৌধুরীদের পুকুর। তবে তার একটি গুণের কথা না বললে সব কথা বলা হয় না।

সেটি হলো তার ছবি আঁকার হাত । রঙিন খড়ি দিয়ে মেঝের ওপর, কি কাগজ-কলম দিয়ে-—যারা ছবি বোঝে তারাই বলে, ‘বাঃ, ছেলেটির আঁকার হাত তো দারুণ। ভোম্বলের এক কাকা আমতা স্কুলের ড্রইং মাস্টার, তিনিই ভেম্বরকে এ কাজে খুব উৎসাহ দিয়ে যান। ভোম্বলের বাবা হারাধনের কিন্তু ডোম্বলকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। সে ছেলেকে বোঝায়, মাস্টার-স্যার যখন যা কাজ দেবে তা করে নিয়ে যেতে ভুলিস না যেন । যদি লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে পারিস তবে সুখে থাকবি। আমার মতো রেলস্টেশনে ঘণ্টা বাজানোর কাজ করতে হবে না।’

ভোম্বল মাথা নেড়ে বলে, “সে তুমি কিছুই ভেবে না বাবা।

কিন্তু যেই বাপ কাজে বের হয়ে যায় অমনি ভোম্বলও পড়া ফেলে হাজির গড়পুকুরের মাঠে ।

আজ বড় ম্যাচ খেলা হবে। কলকাতার সেরা খেলোয়াড়রা সকালে প্রাকটিস করবে, ভোম্বল কি তা না দেখে থাকতে পারে! সন্ধেবেলা তাই বাড়ির কাজ না করে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বংকিম-স্যারের কাছে বকুনি খায় সে। স্যার হয়তো তার কানটাই মলে দিতেন যদি না সে সময় তার বন্ধু রাজেন কবিরাজ এসে বাইরে থেকে হ্কঁ দিতেন, ‘বংকু আছে নাকি হে? বাঁকাবিহারী–

ডাক শুনে বংকিমবাবু ভোম্বলকে ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, ‘এই যে রাজু, ফিরছ? তোমার বেশ, ঝাঁপ বন্ধ করতে পারলেই ছুটি। আমার তো সবে শুরু।

তেঁতুলগাছের নীচে একটি তেঁতুলকাঠেরই বেঞ্চ, তার ওপরেই বসেন দুজনে । দু’বন্ধু এক ক্লাসের পোড়েছিলেন ঝাঁপড়দা হাইস্কুলে। আরও যারা ছিল এদিকে-ওদিকে ছিটকে গেছে। কেউ কেউ বিলেত-আমেরিকাও পাড়ি দিয়েছে।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!