ফেলিক্স ইয়ানওয়ার সিয়াউ

ফেলিক্স ইয়ানওয়ার সিয়াউ (চীনা: 蕭正國; জন্ম ৩১ জানুয়ারি, ১৯৮৪):

একজন চীনা-ইন্দোনেশিয়ান ইসলামি ধর্মগুরু (উস্তাদ), প্রচারক, লেখক এবং দাঈ। তিনি ইসলামী দল হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়া (HTI)-এর সাথে জড়িত এবং ইসলামের ব্যাখ্যায় কঠোর, পুরাতনপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত। সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ জনপ্রিয়, তিনি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, নারীবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সমালোচনা করে তার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। সিয়াউ জন্মগ্রহণ করেন এবং বড় হন একটি ক্যাথলিক পরিবারে, তবে ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ক্যাথলিক ধর্ম থেকে দূরে সরে যান। ২০০২ সালে, বোগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি প্রথম ইসলামের সাথে পরিচিত হন এবং কলেজ জীবনের সময় হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়ার এক কর্মীর সাথে পরিচিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। সিয়াউ ২০০৬ সালে বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তার চারটি সন্তান রয়েছে।

 

ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:

ফেলিক্স সিয়াউ ২০০২ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন, যখন তিনি বোগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়ার এক কর্মীর সাথে দেখা হওয়ার পর তিনি ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। ক্যাথলিক পরিবেশে বড় হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ধর্মীয়ভাবে ক্যাথলিক থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণের পথকে সহজ করে দেয়। ইসলাম গ্রহণের পর, সিয়াউ ইসলামী মতাদর্শ ও শাসন ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং HTI-এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। তিনি ইসলামের কঠোর, রক্ষণশীল ব্যাখ্যা এবং আধুনিক পশ্চিমা চিন্তাধারার সমালোচনা শুরু করেন। এরপর থেকেই তিনি ইসলামী প্রচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন এবং তার বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে ইসলামের প্রচার করতে থাকেন। সিয়াউ একজন জনপ্রিয় ইসলামিক প্রচারক, যার টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী রয়েছে। তিনি একজন লেখকও, যিনি মূলত হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়া (HTI)-এর সাথে সম্পর্কিত বিষয় এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখালেখি করেন। এই গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাসের ভুল উপস্থাপনার জন্য একাধিকবার সমালোচিত হয়েছে। ২০১৭ সালের জুনে, তিনি HTI নিষিদ্ধ করার সরকারী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং এটিকে ইসলামের দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেন।

ইসলাম গ্রহণের পর ফেলিক্স সিয়াউ ইসলামী জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করেন। তিনি বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার যুব সমাজের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেন। সিয়াউ বিভিন্ন ইসলামিক বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন, যেখানে তিনি ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার বইগুলোতে হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়ার মতাদর্শ এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। সিয়াউ টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ইসলামের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার রক্ষণশীল মতাদর্শ এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যা লাখ লাখ মানুষ অনুসরণ করে। তিনি গণতন্ত্র, নারীবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, পুঁজিবাদ ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে সমালোচনা করেছেন। সিয়াউ বিভিন্ন সেমিনার, বক্তৃতা ও টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দেন। তার বক্তৃতায় তিনি তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জোর দেন এবং ইসলামের শুদ্ধ এবং কঠোর অনুশীলনকে গুরুত্ব দেন। সিয়াউ হিজবুত তাহরীর ইন্দোনেশিয়ার সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেন এবং HTI-এর আদর্শ প্রচার করেন, যা ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত। HTI নিষিদ্ধ হওয়ার পর তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং এটিকে ইসলামের দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন। তার এই অবদানগুলো তাকে ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামী প্রচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।