ফুরফুরে-নামচা

সাতসকালে তিরতিরে রোদ মাখা নলখাগড়ার ডগাটায় উড়ে এল ফুরফুরে। শাপলা দিঘির আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে ভারি খুশি হল সে। এই তো কেমন বেশ দেখাচ্ছে! ঝিরঝিরে ডানায় রোদের ঝিলমিল—ঠিকরে পড়া আলোয় হালকা হলুদ-নীলের ফুলঝুরি। আ-আ-আঃ– শাপলা শালুকের মিহি বাসে ভরে গেল মনপ্রাণ। আরে আরে, ওই মস্ত বড়ো পদ্মপাতার ওপর কে রে ওটা? গোল গোল চোখ করে তার দিকেই দেখছে বটে! ফুরফুরের প্রাণটা একটু থমকে গেল যেন। নাঃ, এমন সুন্দর একটা সকালে এমন ভয় ভয় ভাবটাকে আমল দিতে না চেয়ে ফুরফুরে একটু পেছন ঘুরে গেল। পদ্মপাতার ওপর থেকে আলসে চোখে দেখতে দেখতে গোবদু ব্যাঙা মুচকি হাসল। আরে বাবা, পেছন ঘুরলেই কি আর আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবি? থাকগে যাক, আজ এমন সকালটায় আর গোলমালে কাজ কী? যে যেখানে আছে থাক গে—এই না ভেবে ব্যাঙা দাদা টুপ করে দিঘির জলে।পাড়ের পাশেই গোবদুদাদার বাসা। সেখানে ভুটকি বউদি আর দু-চারটে ছানার সংসার। ছানাগুলোর এই সবে পা গজিয়েছে, কানকো খসেছে, তবে তেমন চৌখস হয়নি এখনও। এমন সময় জল কেটে কেটে এগিয়ে আসছে ওরা কারা? ওঃ হো, তেচোখো মাছের ছোট্ট একটা ঝাঁক। নলখাগড়ার ঝোপের ধারেপাশেই মশার আড্ডাখানা কিনা। মশার ডিম যে ভারি মচর মচর। মুচমুচে মশার ডিম নিয়ে মাছেদের কাড়াকাড়ি দেখতে দেখতে ফুরফুরের দেদার মজা। আরে, আরে করছে দেখো! অমন মারামারি করলে আর খাবি কী?

কী? খুব যে ডানায় ঝকমকাচ্ছ, বলি, হচ্ছেটা কী? — গম্ভীর গলার প্রশ্নটা শুনেই ফুরফুরের খাবি খাওয়ার জোগাড়। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে দেখে পাশের শালুক ডাঁটার ওপর একটা মস্ত বড়ো হলুদ-সবুজ ফড়িং বসে। ওঃ বাবাঃ, যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে না! ফুরফুরে এতক্ষণে আবার খোশমেজাজে। কেন, কেন? ভয়টা কীসের? সবুজ ডোরাকাটা লেজটা নাচিয়ে ফড়িংদাদা কথাটা বলেই হঠাৎ ফুড়ুৎ। যাঃ বাবা! কথা বলাই বা কেন, চলে যাওয়াই বা কেন? বড়োদের ব্যাপার স্যাপার বোঝাই যায় না। যাক গে—এবার একটু ঘুরে আসা যাক ওপার থেকে। যেই না ভাবা, সেই না ওড়া—-ফুরফুরের ঝিরঝিরে ডানায় কাঁপতে থাকা রোদের ঝিলিক। নিমেষে চোখের বাইরে—সে-ই—সে-পারের কোন সুদূরের ডাকে—এক ঝটকা উড়ান জলফড়িঙের।

আকাঙ্খা

সাধু আর শয়তান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *