পুরস্কার পাঁচ হাজার ডলার— তৃতীয় অংশ

“কাস্টমারদের লাইনের অন্য সাইডে একটা পাটাতনের মতো আছে। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড ও কয়েকজন কর্মচারি বসে। প্রথম দু’দিন সেখানে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম। শেষ তিন দিন মিস জোনসের ঠিক পেছনে বুক কিপারদের একটা টেবিল আছে, সেখানে ছিলাম।”
তার মানে স্যার, আপনি চারজন টেলারকেই ভালো করে দেখতে পারছিলেন।”
অ্যাবসোলুটলি! শুধু দেখা নয়, সবার কথাও শুনতে পারছিলাম।”
একেনবাবু বোধহয় আর একটা প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু প্রমথ বলে উঠল, “আরে, ওটা কী হল?।”
আমিও ব্যাপারটা লক্ষ করছিলাম। একজন কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সিলভিয়া হঠাৎ‌ কানে হাত দিলেন।
রাজ সিং বললেন, “কানে হাত দেওয়াটা তো? ওটা ওঁর মুদ্রাদোষ। আমারও প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু প্রতিদিন কতবার যে উনি কানে হাত দিয়ে দুল ঠিক করেন, তার ইয়ত্তা নেই ।”
“দাঁড়ান, দাঁড়ান, অত সহজে ব্যাপারটা নাকচ করবেন না,” প্রমথ বলল। “দেয়ার মে বি সাম সিক্রেট কোড। ধরুন, গুণ্ডাদের সঙ্গে ওঁর একটা আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং আছে যে প্রত্যেকবার নয়, শুধু তিন বারের বার কানে হাত দেওয়াই হল আসল সিগন্যাল। সে ক্ষেত্রে যেই উনি থার্ড টাইম কানে হাত দেবেন, গুণ্ডারা সঙ্গে সঙ্গে সেই কাস্টমারকে ফলো করবে।”
রাজ সিং এ নিয়ে বোধ হয় খুব একটা চিন্তা করেননি। তাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, “না, না, জ্যাক সাইপ্রাসও বলেছিলেন যে দুল ঠিক করার সঙ্গে মাগিং ভিকটিমের কোনও সম্পর্ক নেই।”
একেনবাবু বললেন, “স্যার, মিস জোনস কি শুধু বাঁ হাত দিয়েই কানের দুল ঠিক করেন, না মাঝে মাঝে ডান হাতও ব্যবহার করেন?”
রাজ সিং কয়েক মুহূর্ত ভেবে বললেন, “ইয়েস, দুটো হাতই ব্যবহার করতে দেখেছি।”
“দেন দেয়ার আর মোর কোডিং পসিবিলিটিস,” প্রমথ বলল।“যেমন ধরুন, যে মুহূর্তে উনি হাত চেঞ্জ করবেন, সেটাই হবে ইণ্ডিকেশন। ফর এগজাম্পল, উনি বারবার বাঁ হাত দিয়ে দুল ঠিক করছেন। একবার হঠাৎ ডান হাত দিয়ে করলেন, সেটাই হবে গুণ্ডাদের ক্লু।”
আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে এই পসিবিলিটিগুলো রাজ সিংয়ের মাথায় খেলেনি। কিন্তু নিজের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে বলে সেগুলো ঠিক স্বীকার করে নিতে পারছেন না! হাজার হোক, প্রথর কি ক্রেডেনশিয়াল? এদিকে উনি হচ্ছেন একজন লাইসেন্সধারী ইনভেস্টিগেটর!
এমন সময় একজন মোটাসোটা কাস্টমার সিলভিয়া জোনসে কাছে এসে দাঁড়াতেই রাজ সিং বলে উঠলেন, “এই যে লোকটাকে দেখছেন মিস্টার সেন, এ হচ্ছে একজন মাগিং ভিক্টিম।”
শোনামাত্র আমরা সবাই নিঃশব্দে মিস জোনসের মুভমেণ্ট স্টাডি করতে শুরু করলাম। লেনদেন শেষ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাস্টমার চলে গেলেন। দেয়ার ইজ নাথিং, অ্যাবসলিউটলি নাথিং, যেটা আমার মনে হল সাসপিশাস! সিলভিয়া কানের দুল ঠিক করলেন না, কোনও স্পেশাল মুভ লক্ষ করলাম না, এভরিথিং ইজ কম্প্লিটলি নর্মাল!”
“দেয়ার গোজ ইয়োর কোডিং থিয়োরি,” আমি প্রমথকে খোঁচা দিলাম।
“নট সো ফাস্ট,” প্রমথ বলল, “হয়তো কানে হাত না দেওয়াটাই হল আসল সিগন্যাল।”
“কিন্তু সেটাও সত্যি নয়। কারণ, ঠিক পরের জনের বেলাতেও সিলভিয়া ওয়াজ অ্যাজ নর্মাল অ্যাজ বিফোর!”
“নাউ মাই থিয়োরি ইজ গন,” প্রমথ স্বীকার করল। “আনলেস দ্য কোড ইজ ভেরি কম্পিকেটেড।”
“আমি তো আগেই বলেছিলাম,” রাজ সিং বললেন।
“মুশ্কিল হল স্যার, ভিডিওটা টকি নয়, মনে নো সাউণ্ড,” একেনবাবু বললেন।
“দ্যাটস ট্রু। কিন্তু বিশ্বাস করুন মিস্টার সেন, আই ডিড নট ফাইণ্ড এনিথিং ইন হার ভয়েস হুইচ ইজ সাসপিশাস।”
“উনি কি স্যার নর্মাল ভাবেই সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন?”
“ইয়েস। ইন ফ্যাক্ট শি সাউণ্ডেড মোর নর্মাল দ্যান আদার্স।”
একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “মোর নর্মাল মনে কি স্যার?”
“হোয়াট আই মিন, অন্যান্য টেলারের মতো উনিও কাস্টমার সামনে এসে দাঁড়ালে বলছিলেন, মে আই হেল্প ইউ, এবং কাজ শেষ হওয়ার পর, থ্যাঙ্ক ইউ অ্যাণ্ড হ্যাভ অ্যা নাইস ডে। কিন্তু সেটা মোটেই আর সবার মতো যান্ত্রিক ভাবে নয়। ওঁর কথার মধ্যে একটা ফ্রেণ্ডলিনেস ছিল। এমন কি কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনি হাসিমুখে কাস্টমারদের সঙ্গে গল্পও করছিলেন।”
একটু ভাবুন স্যার, উনি কি কথার ফাঁকে এমন কিছু কাউকে বলেছিলেন যেটা অন্য কাউকে বলেননি? অনেক সময় যেগুলো আমাদের খেয়ালও হয় না স্যার, যেমন, সবাইকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে শুধু একজনকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার’ বলা? বা ঐ জাতীয় কিছু?”
“নো। আই অ্যাম শিওর। আমি খুব মন দিয়ে ওঁর প্রত্যেকটা কথা শুনেছি। দেয়ার ইউ সি অ্যানাদার ওয়ান,” রাজ সিং বলে উঠলেন, “আর একজন মাগিং ভিকটিম!”
নাঃ, রাজ সিং অ্যাবসলিউটলি রাইট, এটাতেও কোনও ক্লু নেই! আর তখনই আমার মাথায় সম্ভাবনাটা ঝিলিক দিল, হোয়াট অ্যাবাউট এ ট্রান্সমিটার? মেয়েটা যদি একটা সিম্পল রেডিও ট্রান্সমিটার কোমরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে, আর তাতে একটা পুশ বাটন থাকে যেটা অতি সহজে টাকা গুনতে গুনতে কনুই দিয়ে প্রেস করা যায়! দ্যাটস অল হোয়াট ইজ নিডেড। গুণ্ডাদের একজনের কাছে নিশ্চয়ই একটা হ্যাণ্ড হেল্ড রিসিভার আছে! মেয়েটা পুশ বাটন টিপলেই রিসিভারের ইণ্ডিকেটর লাইটটা ব্লিঙ্ক করবে আর সঙ্গে সঙ্গে গুণ্ডাটা দেখতে পাবে, কে বড় অঙ্কের ক্যাশ উইথড্র করছে!
আমি আমার থিয়োরিটা বলতেই রাজ সিং বললেন, “সেটাই জ্যাক সাইপ্রাস প্রথমে ভেবেছিলেন। তাই উনি একটা ছুতো করে বেরোবার আগে টেলারদের একটা সারপ্রাইজ সিকিউরিটি সার্চ করেন। কিন্তু কারও কাছে কিছু পাওয়া যায়নি!”
প্রমথ আমায় খোঁচা দিল, “দেয়ার গোজ ইয়োর থিয়োরি, ডাউন দ্য ড্রেন!”
“মিস জোনস কতদিন হল কাজ করছেন স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“মাস তিনেক। চারজনের মধ্যে মিস জোনস আর একজন হলেন নতুন। বাকি দু’জন দু’বছর ধরে কাজ করছে।”
“হাউ অ্যাবাউট দ্য ফোর্থ ওয়ান স্যার?”
“আই অ্যাম নট শিওর,” রাজ সিং উত্তর দিলেন।
একেনবাবু দেখলাম ঘন ঘন পা নাচাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী, কিছু বুঝলেন?”
“আই হ্যাভ এ সাসপিশান স্যার।”
“হোয়াট ইজ দ্যাট?” রাজ সিং খুব আগ্রহবরে জিজ্ঞেস করলেন।
“আই সাসপেক্ট দ্যাট উই আর লুকিং অ্যাট দ্য রং পার্সন।”
“তার মানে?” আমি আর রাজ সিং প্রায় একসঙ্গে প্রশ্ন করলাম।
“ধরুন স্যার, একজন নয়, এই কনস্পিরেসিতে দু’জন টেলার জড়িত। একজন হচ্ছেন মিস জোনস, আর দ্বিতীয়জন হলেন মিস জোনসের পাশে যে দুজন বসেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন। যখনই কেউ এসে অনেক টাকা তুলছে, মিস জোনস ওঁর পার্টনারকে হয় কাগজ পাস করে, নয় পায়ে একটা খোঁচা দিয়ে সেটা জানাচ্ছেন। দ্যাটস নট ডিফিকাল্ট, কারণ সবাই একেবারে পাশাপাশি বসে আছেন। কিন্তু ভেবে দেখুন স্যার, কি দারুণ স্ট্র্যাটেজি! আমরা সন্দেহবশত শুধু মিস জোনসকেই দেখছি। আর সেই ফাঁকে আর একজন নিশ্চিন্তমনে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন।”
“মাই গড!” রাজ সিং ক্ষুব্ধ হয় মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, “হোয়াট এ ক্লেভার প্ল্যান! তার মনে, উই শুড লুক অ্যাট অদার্স ফর শোইং সিগন্যালস!”
“আই থিঙ্ক সো, স্যার।”
“এক্সেলেণ্ট, আই অ্যাম গোইং টু ডু দ্যাট।” রাজ সিং দারুণ খুশি হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। “আমি জানতাম আপনার কাছে এলে একটা হদিস হয়ে যাবে! ভালো কথা মিস্টার সেন, আপনাদের সকলকে একদিন লাঞ্চে নিযে যেতে চাই। ইউ আর অলওয়েজ সো কাইণ্ড অ্যাণ্ড হেল্পফুল!”
একেনবাবু অ্যাজ ইউজুয়াল, “আরে, ছি ছি, না,” বলতে যাচ্ছিলেন। প্রমথ বলল, “ফাইন, হাউ অ্যাবাউট দিস মানডে।”
“বেশ তো, আসুন না। ফর্টি সেকেণ্ড স্ট্রিটে কয়েকটা ভালো খাবার জায়গা আছে, তার একটাতে যাওয়া যাবেখন।” এই বলে রাজ সিং বিদায় নিলেন। চলে যাওয়ার পর খেয়াল হল, উনি ভিডিওটা ফেলে গেছেন। যাক, সোমবার নিযে গেলেই চলবে!

সোমবার দিন সকালে আমার ক্লাস ছিল। ক্লাসের পর অনেক সময়েই ছাত্রদের অনেক প্রশ্ন থাকে। সেটা শেষ করে সময় মতো আমি লাঞ্চে পৌঁছোতে পারব কি না বুঝতে পারছিলাম না। তাই স্কুলে যাওয়ার আগে একেনবাবুকে বলে গেলাম, আমার জন্য সাড়ে এগরোটা থেকে এগরোটা পঁত্রিশ পর্যন্ত পোর্ট অথরিটি টার্মিনালের সামনে অপেক্ষা করতে। তার মধ্যে যদি না যাই তা হলে যেন আমাকে ছাড়াই ওঁরা লাঞ্চে যান। একেনবাবু অবশ্য একটু ঘ্যানঘ্যান করলেন, কিন্তু শেষমেশ মেনে নিলেন। আগে থেকে ব্যাপারটা ঠিক করে রেখে ভালোই হযেছিল, কারণ সেদিনি পিলপিল করে ছেলেমেয়েগুলো ঘরে এল। সকলের হাজারগণ্ডা প্রশ্ন। ফ্রি লাঞ্চতো মিস করলামই, সব কিছু চুকোতে চুকোতে প্রায় একটা। আমি বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরে প্রমথের কাছে শুনলাম রাজ সিং নাকি ভীষণ আপসেট, কারণ একেনবাবুর থিয়োরি টোটালি ফেল মেরেছে! পরে অবশ যোগ করল, রাজ সিংয়ের যা বিদ্যেবুদ্ধি ও অবজারভেশন পাওয়ার – সেটা সত্যি নাও হতে পারে। যাই হোক, একেনবাবু আসেন নি। রাজ সিংকে অত্যন্ত বিচলিত ও আশাহত দেখে মরাল সাপোর্ট দিতে সিটি সেণ্ট্রাল ব্যাঙ্কে গেছেন।

একেনবাবু সন্ধ্যেবেলা যখন ফিরলেন, তখন আমি আর প্রমথ নিউজ শুনতে বসেছি। সিকিউরিটি ভিডিওটা টেবিল থেকে তুলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “স্যার, আপনার ভিডিও প্লেয়ারটা একটু চালাব?”
“শিওর। কিন্তু কি ব্যাপার, নিউজ শুনবেন না?”
“শুনব স্যার, একটা জিনিস চেক করে এক্ষুণি আসছি” বলে ওপরের তলায় আমার অ্যাপার্টমেণ্টে চলে গেলেন। যখন নেমে এলেন, তখন লোক্যাল, ন্যাশনাল দুটো নিউজই শেষ, মনে, প্রায় এক ঘন্টা পরে!
প্রমথ জিজ্ঞেস করল, “কি মশাই, কি করছিলেন এতক্ষণ ধরে!”
“কিছু না স্যার, আসলে মিস্টার সিং এত ঝামেলায় পড়েছেন! তাই ভিডিওটা আবার একটু দেখছিলাম স্যার, যদি কোনও ক্লু বেরিয়ে যায়!”
“ধন্য আপনার বন্ধুপ্রীতি!” প্রমথ ধমকের সুরে বলল, “জানেন, আপনার এই রাজ সিং গত সপ্তাহে কম সে কম দু’হাজার ডলার পকেটে পুরেছে! ফর গডস সেক, লেট হিম আর্ন হিজ ওন মানি।”
“তা তো বটেই স্যার,” একেনবাবু অপরাধী মুখ করে বললেন।
আমি প্রমথকে বললাম, “কেন ওঁকে জ্বালাচ্ছিস? উনি হচ্ছেন কর্মযোগী! নিজের কাজ উনি কর যাবেন, অর্থপ্রাপ্তি হোক বা না হোক। কি বলেন একেনবাবু, ঠিক কিনা?”
“কি যে বলেন স্যার। সামান্য একটু সাহায্য…”
“যাক, ওসব কথা,” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মিস্ট্রি সলভ হযেছে? শুনলাম আপনার থিয়োরিও নাকি ফেল?”
“হ্যাঁ স্যার, কালকেরটা ফেল তবে এবার আর এটা থিয়োরি ট্রাই করছি।”
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রাজ সিংয়ের ফোন। একেনবাবুর খোঁজ করছেন। একেনবাবু ফোন ধরবার জন্য উঠতেই খেয়াল করলাম যে ওঁর চেয়ারে একটা কাগজ, আর তাতে ২০, ১০০, ৫৫, ১২০, ৪০, ১১০, ৫৩, ১৩০, ইত্যাদি অনেক সংখ্যা লেখা। তার মধ্যে আবার ৫৫ আর ৫৩-র চারদিকে একটা করে গোল আঁকা। কি হাবিজাবি লিখেছেন কে জানে! একেনবাবু ওদিকে ফোন তুলে বললেন, “আই গট দ্য টাইম স্যার ফ্রম ফিফ্টি সেকেণ্ডস টু ওয়ান মিনিট। তবে সাউণ্ড নেই বলে কিছুটা স্যার গেস ওয়ার্ক করেছি।”
রাজ সিং কি বললেন শুনতে পেলাম না, কিন্তু একেনবাবু উত্তরে বললেন, “দ্যাটস ইট স্যার, উই গট ইট! সিম্পল, বাট এ ক্লেভার প্ল্যান।”
রাজ সিং বোধ হয় আবার কিছু একটা বললেন। উত্তরে একেনবাবু বললেন, “ইউ শুড থ্যাঙ্ক বপিবাবু। উনি কথাটা না তুললে আমার ব্যাপারটা স্ট্রাইক করত না। ঠিক আছে স্যার, কাল বিকেলে তা হলে দেখা হবে। বাই স্যার।”
একেনবাবু ফোন নামিয়ে রাখতেই প্রমথ প্রশ্ন করল, “কী ব্যাপার বলুন তো? বাপিটা এত থ্যাঙ্ক ইউ পাচ্ছে কেন, হোয়াটস গোইং অন?”
“আমাদের থিয়োরিটা কনফার্মড হযে গেল স্যার!”
“ওয়েট এ মিনিট, আমাদের থিয়োরি বলতে কোনটা? কালকের থিয়োরিগুলো তো সব ফেল মেরেছে বললেন!” আমি বলে উঠলাম।
“বলছি স্যার, বলছি, একটু সবুর করুন। আপনিও একেবারে প্রমথবাবুর মতো অবুঝ হয়ে পড়ছেন।“
“খামকা আমার নিন্দা করবেন না!“ প্রমথ ধমক দিল।
“তুই চুপ কর তো! বলুন, একেনবাবু, কি বলছিলেন।“
“মনে আছে স্যার, সকালে আপনি বলেছিলেন সাড়ে এগরোটা থেকে এগরোটা পঁয়ত্রিশের মধ্যে যদি আপনি না আসেন, তা হলে আমরা যেন চলে যাই।”
“তা বলেছিলাম।”
“সেটা শোনামাত্রই আমার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। এখানে কোডিং হল টাইম স্যার, টাইম হচ্ছে সিমপ্লেস্ট ওয়ে টু পাস ইনফরমেশন। ওই যে আপনি বললেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে না এলে আমি আর আসব না। ইট ইস এ পারফেক্ট মোড অব কমিউনিকেশন, বিকজ উই অল হ্যাভ আওয়ার ওয়াচ। বুঝতে পারছেন তো স্যার?”
সত্যি কথা বলতে কী, এর সঙ্গে মাগিং-এর কী সম্পর্ক আমার কাছে তখনও ক্লিয়ার নয়।
একেনবাবু বলে চললেন, “এবার খেয়াল করুন স্যার, কাস্টমার এলে মিস জোনস বলছেন, মে আই হেল্প ইউ। তারপর কাজকর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর বলছেন থ্যাঙ্ক ইউ অ্যাণ্ড হ্যাভ এ নাইস ডে। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মে আই হেল্প ইউ’ আর ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ এর মধ্যে যে সময়টা, কুড দ্যাট বি ইউজড টু সেন্ড এ মেসেজ? আই ফাউণ্ড দ্যাটস হোয়াট প্রিসাইসলি ওয়াজ দান। টাইম গ্যাপটা যদি পঞ্চাশ সেকেণ্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে হয়, তা হলে কাস্টমার অনেক টাকা তুলেছে। সেটা না হলে জাস্ট ইগনোর দ্য কাস্টমার। বুঝতে পারছেন স্যার?”
“ও বুঝুক না বুঝুক, আমি বুঝেছি,” প্রমথ বলল।
“জলবৎ তরলম!” কাগজের নম্বরগুলো দেখিযে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি সেটাই ভিডিও থেকে চেক করছিলেন নাকি?”
“ইয়েস স্যার, যে দুটো কেস মিস্টার সিং বলেছিলেন, সে দূটোই এক মিনিটের খুব কাছাকাছি। তবে শব্দ ছিল না বলে এগজ্যাক্ট টাইমটা বের করা অসম্ভব। কিন্তু অন্য কাস্টমারদের ক্ষেত্রে সমযগুলো বেশি বা কম। মিস্টার সিং বলেছিলেন না যে মিস জোনস কাস্টমারদের সঙ্গে মাঝেমাঝে গল্প গুজব করতেন? আমার ধারণা স্যার গল্পগুজব করেই উনি টাইমিংগুলো ঠিক ঠাক রাখতেন। এনিওয়ে স্যার, আজকের মাগিং রিপোর্ট থেকে মিস্টার সিংও থিয়োরিটা কনফার্ম করলেন। পরদিন রাজ সিং এসে পুরো রিপোর্ট দিলেন। ছদ্মবেশী পুলিশ রাজ সিংয়ের কাছ থেকে ক্লু নিয়ে প্রসপেকটিভ মাগিং ভিকটিমদের ফলো করে দুজন মাগারকে গ্রেফতার করছে। তাদের স্বীকারোক্তি থেকে মিস জোনসকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ সিং আমাদের না বললেও পরে শুনেছি, ম্যানহ্যাটানের মাগিং মিস্ট্রি সলভ করার জন্যে ক্লিফোর্ড জনসন নাকি রাজ সিংকে ওঁর প্রাপ্য টাকা ছাড়াও আরও পাঁচ হাজার ডলার পুরষ্কার হিসেবে দিয়েছেন।

গল্পের প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!