সহায়হরি চাটুজ্যে উঠোনে পা দিয়েই স্ত্রীকে বলিলেন—
“একটা বড় বাটি কি ঘটি, যা হয় কিছু দাও তো। তারক খুড়ো গাছ কেটেছে, একটু ভালো রস আনি।”
স্ত্রী অন্নপূর্ণা খড়ের রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া শীতকালের সকালবেলা নারকেল তেলের বোতলে ঝাঁটার কাঁটি পুরিয়া দুই আঙুলের সাহায্যে কাটার কাটিলগ্ন জমা তেলটুকু সংগ্রহ করিয়া চুলে মাখাইতেছিলেন। স্বামীকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি গায়ের কাপড় একটু টানিয়া দিলেন মাত্র, কিন্তু বাটি কি ঘটি বাহির করিবার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাইলেন না, এমনকি বিশেষ কোনো কথাও বলিলেন না।
সহায়হরি অগ্রবর্তী হইয়া বলিলেন—
“কী হয়েছে, বসে রইলে যে? দাও না একটা ঘটি? আহ ক্ষেন্তি-টেন্তি সব কোথায় গেল এরা? তুমি তেল মেখে বুঝি ছোবে না?”
অন্নপূর্ণা তেলের বোতলটি সরাইয়া স্বামীর দিকে খানিকক্ষণ চাহিয়া রহিলেন। পরে অত্যন্ত শান্ত সুরে জিজ্ঞাসা করিলেন—
“তুমি মনে-মনে কী ঠাউরেছ বলতে পারো?”
স্ত্রীর অতিরিক্ত রকমের শান্ত সুরে সহায়হরির মনে ভীতির সঞ্চার হইল। ইহা যে ঝড়ের অব্যবহতির পূর্বে আকাশের স্থিরভাব মাত্র, তাহা বুঝিয়া তিনি মরিয়া হইয়া ঝড়ের প্রতীক্ষায় রহিলেন। একটু আমতা-আমতা করিয়া কহিলেন—
“কেন… কী আবার… কী?”
অন্নপূর্ণা পূর্বাপেক্ষা আরও শান্ত সুরে বলিলেন—
“দেখ, রঙ্গ কোরো না বলছি—ন্যাকামি করতে হয় অন্য সময় কোরো। তুমি কিছু জানো না, না কি খোঁজ রাখো না? অত বড় মেয়ে যার ঘরে, সে মাছ ধরে আর রস খেয়ে দিন কাটায় কী করে তা বলতে পারো? গায়ে কী গুজব রটেছে জানো?”
সহায়হরি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—
“কেন? কী গুজব?”
—“কী গুজব জিজ্ঞাসা করো গিয়ে চৌধুরীদের বাড়ি। কেবল বাগদী-দুলে-পাড়ায় ঘুরে ঘুরে জন্ম কাটালে ভদ্রলোকের গায়ে বাস করা যায় না। সমাজে থাকতে হলে সেইরকম মেনে চলতে হয়।”
সহায়হরি বিহ্বল হইয়া কী বলিতে যাইতেছিলেন, অন্নপূর্ণা পূর্ববৎ সুরেই পুনর্বার বলিয়া উঠিলেন—
“একঘরে করবে গো তোমাকে, একঘরে করবে। কাল চৌধুরীদের চণ্ডীমণ্ডপে এসব কথা হয়েছে। আমাদের হাতে ছোয়া জল আর কেউ খাবে না। আশীর্বাদ হয়ে মেয়ের বিয়ে হল না—ও নাকি উলুগু করা মেয়ে। গায়ের কোনো কাজে তোমাকে আর কেউ যেতে বলবে না। যাও, ভালোই হয়েছে তোমার। এখন গিয়ে দুলে-বাড়ি, বাগদী-বাড়ি উঠে বসে দিন কাটাও।”
সহায়হরি তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ করিয়া বলিলেন—
“এই! আমি বলি, না জানি কী ব্যাপার। একঘরে! সবাই একঘরে করেছেন, এবার বাকি আছেন কালীময় ঠাকুর!”
ওহ!…
পুঁইমাচা ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।