পুঁই মাচা-১ম অংশ–বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর গল্প

সহায়হরি চাটুয্যে উঠানে পা দিয়েই স্ত্রীকে বলিলেন-একটা বড় বাটি কি ঘটি যা হয় কিছু দাও তো, তারক খুড়ো গাছ কেটেছে, একটু ভালো রস আনি।
স্ত্রী অন্নপূর্ণ খড়ের রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া শীতকালের সকালবেলা নারিকেল তেলের বোতলে ঝাটার কাটি পুরিয়া দুই আঙুলের সাহায্যে কাটার কাটিলগ্ন জমানো তৈলটুকু সংগ্ৰহ করিয়া চুলে মাখাইতেছিলেন। স্বামীকে দেখিয়া তাড়িতাড়ি গায়ের কাপড় একটু টানিয়া দিলেন মাত্র, কিন্তু বাটি কি ঘটি বাহির দিবার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ তো দেখাইলেনই না, এমনকি বিশেষ কোনো কথাও বলিলেন না।
সহায়হরি অগ্রবর্তী হইয়া বলিলেন-কী হয়েছে, বসে রইলে যে? দাও না একটা ঘটি? আহ ক্ষেন্তি-টেন্তি সব কোথায় গেল এরা? তুমি তেল মেখে বুঝি ছোবে না?

অন্নপূর্ণা তেলের বোতলটি সরাইয়া স্বামীর দিকে খানিকক্ষণ চাহিয়া রহিলেন, পরে অত্যন্ত শান্ত সুরে জিজ্ঞাসা করিলেন-তুমি মনে-মনে কী ঠাউরেছ বলতে পারো?
স্ত্রীর অতিরিক্ত রকমের শান্ত সুরে সহায়হরির মনে ভীতির সঞ্চার হইল। ইহা -যে ঝড়ের অব্যবহতি পূর্বের আকাশের স্থিরভাব মাত্র, তাহা বুঝিয়া তিনি মরিয়া হইয়া ঝড়ের প্রতীক্ষায় রহিলেন। একটু আমতা আমতা করিয়া কহিলেন-কেন…কী আবার …কী
অন্নপূর্ণ পূর্বাপেক্ষাও শান্ত সুরে বলিলেন-দেখ, রঙ্গ কোরো না বলছি-ন্যাকামি করতে হয় অন্য সময় কোরো। তুমি কিছু জানো না, না কি খোঁজ রাখো না? অতবড় মেয়ে যার ঘরে, সে মাছ ধরে আর রস খেয়ে দিন কাটায় কী করে তা বলতে পারো? গায়ে কী গুজব রটেছে জানো?
সহায়হরি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন- কেন? কী গুজব?
-কী গুজব জিজ্ঞাসা করো গিয়ে চৌধুরীদের বাড়ি। কেবল বাগদী দুলে-পাড়ায় ঘুরে ঘুরে জন্ম কাটালে ভদ্দরলোকের গায়ে বাস করা যায় না। সমাজে থাকতে হলে সেইরকম মেনে চলতে হয় ।
সহায়হরি বিক্ষিত হইয়া কী বলিতে যাইতেছিলেন, অন্নপূর্ণ পূর্ববৎ সুৱেই পুনর্বার বলিয়া উঠিলেন-একঘরে করবে গো তোমাকে একঘরে করবে, কাল চৌধুরীদের চণ্ডীমণ্ডপে এসব কথা হয়েছে। আমাদের হাতে ছোয়া জল আর কেউ খাবে না। আশীবার্দ হয়ে মেয়ের বিয়ে হল না-ও নাকি উলুগু করা মেয়ে-গায়ের কোনো কাজে তোমাকে আর কেউ যেতে বলবে না-যাও ভালোই হয়েছে তোমার। এখন গিয়ে দুলে-বাড়ি বাগদী-বাড়ি উঠে বসে দিন কাটাও ।
সহায়হরি তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ করিয়া বলিলেন-এই! আমি বলি, না জানি কী ব্যাপার। একঘরে! সবাই একঘরে করেছেন, এবার বাকি আছেন কালীময় ঠাকুর!
ওহ!…

 

পুঁইমাচা ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

দুঃখিত!