পিতা ও পুত্রের মিলন (হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী)-৩য় পর্ব
পিতা ও পুত্রের মিলন (হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী)-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর সবলতা ফিরে এল, মনের সাহস বেড়ে গেল এবং তাঁর প্রাণে বইতে আরম্ভ করল এক মহাআনন্দ উচ্ছাস। তাই তিনি আর ক্ষণিকের জন্য পরনির্ভরশীল না হয়ে তড়িৎ যাত্রা প্রস্তুতি নিতে প্রবৃত্ত হলেন। উটের বহর এনে দরজায় সম্মুখে রাখলেন। জামা-কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সকলকে সত্তর গুছিয়ে নিতে বললেন।
তৃতীয় দিনে অতি ভোরে তিনি আপনজন, আত্নীয়-স্বজন ও নিকটস্থ পরশীদেরকে নিয়ে মিশরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। সে এক বিরাট কাফেলা। হযরত ইয়াকুব (আঃ) সকলকে বলে দিলেন, প্রতিযোগিতা করে পথ চলতে হবে। কে আগে যেতে পারে তা দেখে তাঁকে পুরস্কার করা হবে। তাই সকলে নিজ নিজ ছওয়ারী দ্রুত পরিচালনায় সচেষ্ট হল। মিশরের কাছাকাছি পৌঁছে দেখা গেল প্রতিযোগিতায় হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর ছওয়ারী সবার সম্মুখে চলে গেছে। সকলে বলাবলি করল, হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিকট প্রেরিত জামার বরকতে সব কিছু এমন হচ্ছে।
আর পথ চলার পরে মিশরের সীমারেখায় গিয়ে দেখা গেল। হযরত ইউসুফ (আঃ), বেনিয়ামিন, রাজ দরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ কয়েক হাজার অশ্বারোহী নিয়ে তাঁদের আগমনের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
পিতাকে সম্বর্ধনার উদ্দেশ্য রওয়ানা করার পূর্বে হযরত ইউসুফ (আঃ) মিশরের বৃদ্ধ ও অচল রাজা রায়হানের নিকট সব কিছু বলে রওয়ানা করেছিলেন। তখন রাজা তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, হে যুবরাজ ! তুমি অশ্ব থেকে নেমে পিতাকে বা অন্য কাউকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করবে না। এটা মিশরীয় আইনের পরিপন্থী। হযরত ইউসুফ (আঃ)- রাজার কথা পালন করার লক্ষ্যে পূর্বেই নামাজ পড়ার অছিলায় এক মসজিদে নেমে পড়েছিলেন। এ সময় কাফেলা সেখানে এসে পৌঁছালে, হযরত ইউসুফ (আঃ) মসজিদের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) মসজিদের কাছে এসে উট থেকে অবতরণ করে মসজিদের দিকে অগ্রসর হতেই হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে দরজায় দাঁড়ান দেখলেন। অমনি দৌড়ে গিয়ে ইউসুফকে বুকে চেপে ধরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। খাদেমেরা তখন তাঁদেরকে বেষ্টন করে বাতাস দিতে লাগল এবং সরবত এনে পিতা-পুত্রের মিলনক্ষণে মিষ্টিমুখ করাল। দীর্ঘ সময় তারা একের পানে অপরে তাকিয়ে থাকলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ)-পিতার নিকট থেকে যেদিন শেষ বিদায় নিয়েছিলেন, সেদিন পিতার যে স্বাস্থ, সৌন্দর্য ও সবলতা দর্শন করেছিলেন। আজ ত্রিশ বছর পরে এই শুভ মিলনক্ষণে তাঁকে সম্মূর্ণ সে পূর্বের অবস্থায় দেখতে পেয়ে আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পিতা ও পুত্রের হৃদয় নিংড়ানো মায়া, মমতা ও প্রীতি আদান প্রদানের পরে তারা রাজ দরবারের দিকে রওয়ানা করলেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে নিজ ছওয়ারীর উপর উপবিষ্ট করে পথ চলতে আরম্ভ করলেন।
এই মহামিলনের আনন্দঘন দৃশ্য অবলোকনের নিমিত্ত রাজ দরবারে হাজার হাজার জনতার ভীড় জমেছিল। সে দিন রাজ মহলকে এমন অপরূপ সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল। যা মিশর রাজ্যের ইতিহাসে আর কোন দিন হয় নি। সেটা ছিল যেন এক স্বপ্নপুরীর বাস্তব রূপ।
মহা ধুমধামে আরম্ভ হল রাজমহলে আনন্দ অনুষ্ঠান। গান, গজল, বাদ্য বাজনা সর্বশেষে বক্তৃতা। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হিসেবে ইয়াহুদ হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর প্রতি তাঁদের অত্যাচারের বিষিদ বর্ণনা প্রদান করল। হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদের এ অমানুষিক জুলুমের কথা উল্লেখ করে ক্ষমা প্রদর্শনের কথা বর্ণনা করলেন। সর্বশেষে হযরত ইয়াকুব (আঃ) ক্ষমার মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন এবং ছেলেদেরকে কঠিন ভাবে তওবার দারস্থ হতে বললেন।
সর্বশেষ দোয়া ও আপ্যায়ন সমাধা করা হল।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
পিতা ও পুত্রের মিলন (হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনী)-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন