নীল নদের পানি বৃদ্ধি ও সুমিষ্ট হওয়া
ইমাম মোসতাগফেরী বর্ণনা করেন, হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে মিশর বিজয়ের পর মিশরবাসী মিশরের গভর্ণর ইবনুল আসকে অবহিত করল যে, নীল নদের নিয়ম হল, বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে একজন সুন্দরী কুমারী মেয়ে সুন্দর বসন ও অলঙ্কারে সর্জিত করে মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে নীল নদে বিসর্জন দিতে হয়। এভাবে জ্যান্ত মানব বিসর্জনের পরই নীলনদে পানি প্রবাহিত হয়। অন্যথায় তা শুষ্কই থেকে যায়। সুতরাং আপনিও প্রথা অনুযায়ী বিসর্জনের আয়োজন করুন।
মিশরবাসীদের উপরোক্ত প্রস্তাবের জবাবে নব নিযুক্ত মুসলিম গভর্ণর হযরত আমর ইবনুল আস বললেন, প্রথাটি ইসলাম সম্মত নয়। ইসলাম পূর্ব কালের সকল কু-প্রথা ও বেদাতের বিলোপ সাধন করেছে। সুতরাং কোন অবস্থাতেই তা অনুমোদন যোগ্য নয়। অতঃপর তিন মাস পর্যন্ত নীলনদ শুষ্কই রইল। এদিকে নীল নদের পানির উপরই মিশরের চাষাবাদ নির্ভর করত। সুতরাং পানির অভাবে কৃষি ক্ষেত্র ভয়াবহ অনিশ্চয়তা দেখা দিলে অধিবাসীরা মিশর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগল।
এ নাজুক পরিস্থিতিতে মিশরের গভর্ণর হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) কে পত্র যোগে বিস্তারিত অবস্থা অবহিত করলেন, হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) জবাবে জানালেন, তুমি পুরাতন কু-প্রথার উপর আমল না করে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছ এ ধরনের অর্থহীন রছম রেওয়াজের উচ্ছেদের জন্যই ইসলামের আগমন হয়েছে।
হযরত ওমর (রাঃ) গভর্ণরের নিকট পৃথক একটি পত্র লিখে তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, পাত্রটি নীল নদে ছেড়ে দেবে। গভর্ণর ঐ পত্রটি পাঠ করলেন। ওতে লেখা ছিলঃ আল্লাহর বান্দা আমীরুল মু’মিনীনের পক্ষ হতে নীল নদের নিকট এ পত্রটি প্রেরীত হল। হে নীল নদ! যদি তুমি স্বীয় ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়ে থাক তবে থাক। আর যদি আল্লাহর নির্দেশে প্রবাহিত হও, তবে সেই জাতের নিকট দোয়া করছি তিনি যেন তোমার মধ্যে পানি জারী করে দেন।
গভর্ণর আমর ইবনুল আস আমীরুল মু’মিনীনের এ পত্রটি নীল নদে ছেড়ে দিলেন। ঐ রাতেই নীল নদে ১৬ গজ পানি বৃদ্ধি পেল। তখন থেকেই নীল নদে কুমারী বিসর্জনের কু-প্রথাটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়।