নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৪
নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লামা বাগাবী অতি উৎকৃষ্ট সনদের মাধ্যমে হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে এই হাদিসের কিছু অংশ এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) আরজ করিলেন, আমি আপনার সহিত থাকিব। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, তুমি সঙ্গে থাকিবে। হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমার নিকট দুইটি বাহন আছে। আমি উহাদিগকে ছয় মাস যাবত এই সময়ের জন্য ঘাস খাওয়াইতেছি। আপনি একটিকে গ্রহণ করুন। তিনি বলিলেন, আমি তোমার নিকট হইতে বিনামূল্যে লইব না। বরং কিনিয়া লইব। সুতরাং তিনি উহা কিনিয়া লইলেন। তারপর তাহারা সেখান হইতে বাহির হইয়া গুহায় যাইয়া উঠিলেন। অতঃপর হাদিসের বাকী অংশ উল্লেখ করিয়াছেন। (কানযুল উম্মাল)
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) মক্কায় থাকাকালীন প্রতিদিন দিনে দুইবার আমাদের নিকট আসিতেন। একদিন তিনি ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় আসিলেন। আমি বলিলাম, আব্বাজান, এই যে রাসূল (সাঃ) আসিয়াছেন। আমার পিতা-মাতা তাঁহার উপর কোরবান হউক, নিশ্চয় তিনি এই সময় কোন বিশেষ কারণে আসিয়াছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁহার নিকট গেলেন।
তিনি বলিলেন, তুমি কি জান যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে এখান হইতে চলিয়া যাইবার অনুমতি দিয়াছেন? হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার সহিত যাইতে চাই। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, ঠিক আছে, তুমি আমার সহিত চল। হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমার নিকট দুইটি সওয়ারী আছে যাহাদিগকে আমি আজ এই দিনের অপেক্ষায় ঘাস খাওয়াইয়া আসিতেছি। উহা হইতে একটি আপনি গ্রহণ করুন।
রাসূল (সাঃ) বলিলেন, মূল্যের বিনিময়ে লইব। হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হউক, আপনি যদি ইহাতে খুশী থাকেন তবে মূল্যের বিনিময়েই গ্রহণ করুন। হযরত আসমা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁহাদের উভয়ের জন্য সফরের খাবার প্রস্তুত করিলাম এবং আমি নিজের কমরবন্ধ ছিড়িয়া এক টুকরো দ্বারা সেই বাঁধিয়া দিলাম। অতঃপর তাঁহারা রওয়ানা হইয়া সওর পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় লইলেন। গুহার নিকট পৌঁছিয়া হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রথম গুহার ভিতর প্রবেশ করিলেন এবং ভিতরে প্রতিটি ছিদ্রের মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করাইয়া দেখিলেন, কোন বিষাক্ত প্রাণী আছে কিনা?
কাফেরগণ তাঁহাদিগকে মক্কায় না পাইয়া তালাশ করিতে বাহির হইল এবং রাসূল (সাঃ)কে ধরিয়া আনার উপর একশত উটের পুরস্কার নির্ধারণ করিল। তাহারা মক্কার পাহাড়গুলিতে সন্ধ্যান করিতে করিতে অবশেষে সেই পাহাড়ে উঠিল সেখানে তাঁহারা দুইজন অবস্থান করিতেছিলেন। অনুসন্ধানকারীদের একজন গুহার দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইয়াছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি তো আমাদিগকে দেখিতেছে। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, না, কিছুতেই তাহা সম্ভব নহে, ফেরেশতাগণ আমাদিগকে তাহাদের পাখা দ্বারা ঢাকিয়া রাখিয়াছেন। ইতিমধ্যে সেই ব্যক্তি বসিয়া গুহার দিকে ফিরিয়া পেশাব করিতে লাগিল। রাসূল (সাঃ) বলিলেন,
যদি আমাদিগকে দেখিতে তবে এইরূপ করিত না। তাঁহারা সেখান তিনরাত্র অবস্থান করিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর গোলাম হযরত আমের ইবনে ফুহাইয়া (রাঃ) সন্ধ্যায় তাঁহার বকরির পাল লইয়া আসিতেন এবং শেষ রাত্রে তাহাদের নিকট হইতে বকরির পাল লইয়া চলিয়া যাইতেন এবং চারণভূমিতে যাইয়া অন্যান্য রাখালদের সহিত বকরি চরাইতেন। সন্ধ্যার সময় রাখালদের সহিত ফিরিবার সময় তিনি একটু ধীরগতিতে হাঁটিতেন এবং পিছনে থাকিয়া যাইতেন। রাত্রি অন্ধকার হইয়া গেলে বকরির পাল লইয়া গুহায় আসিতেন।
অন্যান্য রাখালগণ মনে করিতে তিনি তাহাদের সহিত আছেন। অপর দিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রাঃ) মক্কায় থাকিয়া খবরাখবর সংগ্রহ করিতেন এবং রাত্রি অন্ধকার হইয়া গেলে গুহায় পৌঁছিয়া তাঁহাদিগকে সকল বিষয়ে অবহিত করিতেন। তারপর শেষরাত্রে সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া সকাল পর্যন্ত মক্কায় পৌঁছিয়া যাইতেন। (তিন রাত্র পর) রাসূল (সাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) গুহা হইতে বাহির হইয়া সমুদ্র উপকূলবর্তী পথ ধরিয়া অগ্রসর হইলেন।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন